শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ঢাকা-৬: ফিরোজ রশীদেই ভরসা, মাথা তুলতে চান আ.লীগ-বিএনপির অনেকে

কাজী রফিক
প্রকাশিত: ০৭ মার্চ ২০২৩, ০৮:০০ এএম

শেয়ার করুন:

ঢাকা-৬: ফিরোজ রশীদেই ভরসা, মাথা তুলতে চান আ.লীগ-বিএনপির অনেকে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছরেরও কম সময় বাকি। ২০২৪ সালের প্রথম সপ্তাহে ভোট হওয়ার কথা। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে চলতি বছরের নভেম্বরে। তবে এরইমধ্যে ভোটের হাওয়া বইতে শুরু করেছে দেশজুড়ে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে চায়। দলটি ইতিমধ্যে তাদের নির্বাচনী প্রচারণাও শুরু করেছে। অপরদিকে সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনে মাঠে আছে বিএনপি। আর পারিবারিক কলহের মধ্যদিয়ে গেলেও ভোটের বিষয়ে চোখ-কান খোলা জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের।

দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২০টি ঢাকায়। তার একটি ঢাকা-৬। সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ঢাকা-৬ জাতীয় সংসদের ১৭৯নং আসন।


বিজ্ঞাপন


ঢাকা-৬ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৪, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫ ও ৪৬নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। আসনটি ওয়ারী, গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর, কোতোয়ালির একাংশ ও বংশালের একাংশ নিয়ে গঠিত।

Dhaka-6১৯৯১ সালে এ আসনেই ঢাকার প্রথম সিটি মেয়র সাদেক হোসেন খোকার কাছে হেরেছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নানা ঘটনাবহুল ও সমীকরণের এ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরেও চলছে নানা আলোচনা ও সমীকরণ।

বর্তমানে আসনটির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ। তিনি জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান।

২০০৮ সালের ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন মিজানুর রহমান খান দীপু। বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকাকে প্রায় ৩০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।


বিজ্ঞাপন


২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শরিক মহাজোটকে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে মনোনয়ন পান কাজী ফিরোজ রশীদ এবং জয়ী হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও মহাজোট থেকে নির্বাচিত হন তিনি।

কাজী ফিরোজ রশিদ প্রথম সংসদে বসেন ১৯৮৬ সালে। তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। পরের বারও একই আসনে নির্বাচিত হন তিনি।

>> আরও পড়ুন: পরিবর্তনের ‘হাওয়া’ ঢাকা-৫ আসনে

জাতীয় পার্টির হয়ে সংসদ সদস্য হলেও তার রাজনীতির শুরুটা আওয়ামী লীগে, ছাত্রজীবনে। সেটাও বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহভাজন। ছাত্রলীগের হয়ে জগন্নাথ কলেজ ছাত্রসংসদের তিনবার নির্বাচিত ভিপি ছিলেন।

পরে কাজী ফিরোজ রশিদ পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। অবিভক্ত ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। যুবলীগ প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বাধীন আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতাকালীন সদস্য ছিলেন কাজী ফিরোজ রশীদ। পরে কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যও হয়েছিলেন তিনি। তুখোড় এই রাজনীতিবিদ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

Dhaka-6জানা যায়, কাজী ফিরোজ রশিদ জাতীয় পার্টির নেতা হলেও আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন। সেই আস্থার জায়গাটি ঢাকা-৬ সংসদীয় আসনেও ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। আসনটির অন্তর্গত তিন থানা ও ১১টি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের সঙ্গেই তার বেশ ভালো যোগাযোগ। কারো সঙ্গেই নেই বৈরিতা।

আবার জনপ্রতিনিধিদের নিজস্ব যে বলয় থাকে, সেখান থেকেও আলাদা তিনি। টানা দুইবার ঢাকা-৬ আসন থেকে নির্বাচিত হলেও নিজস্ব কোনো বলয় গড়েননি তিনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর সব সহযোগী সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে চলেছেন তিনি।

গত ৯ বছরে ঢাকা-৬ আসনের বেশকিছু উন্নয়ন কাজ হয়েছে তার হাত ধরে। সড়ক অবকাঠামো থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ-সংস্কার সব পর্যায়ে তার অবদান রয়েছে। গোপালগঞ্জের সম্ভ্রান্ত কাজী পরিবার থেকে উঠে আসা কাজী ফিরোজ রশিদ জনবান্ধব বলেও প্রচলিত আছে পুরাণ ঢাকার মানুষের মাঝে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ভাষ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের হয়ে আবারও মনোনয়ন পেতে পারেন কাজী ফিরোজ রশিদ। সে ক্ষেত্রে তিনিই হতে পারেন ঢাকা-৬ আসনের হ্যাটট্রিক সংসদ সদস্য।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা-৬ আসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা গাজী সারোয়ার হোসেন বাবু ঢাকা মেইলকে বলেন, এমপি মহোদয় জাতীয় পার্টির হলেও তার রাজনীতির শুরুটা আওয়ামী লীগের হাত ধরেই। সবচেয়ে বড় কথা, এখানে নিজস্ব কোনো বলয় তিনি তৈরি করেননি। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের সঙ্গেই তার ওঠাবসা। তিনি অন্য দলের হলেও তার কারণে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাজে কোনো বাধা আসেনি। আর স্থানীয় উন্নয়নও আশানুরূপ হয়েছে।

Electionআগামী নির্বাচনে কোনো পরিবর্তন আশা করেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এই যুবলীগ নেতা বলেন, সে সিদ্ধান্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার। তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন বা যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা সেটা পালন করব।

এদিকে আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে পারেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। মেয়র পদ হারানোর পর তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদ পেয়েছেন।

তবে আলোচনা আছে, সাঈদ খোকনের আধিপত্য আসনটির মাত্র একটি ওয়ার্ডে৷ আর মেয়র থাকাকালে তার কিছু নেতাকর্মী তৈরি হয়েছে। তবে তার চাইতেও ডজনখানেক গ্রহণযোগ্য ও হ্যাভিওয়েট প্রার্থী এ আসনে আছেন। ফলে নিজের জায়গা থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য কিংবা অন্যান্য প্রার্থীদের বিপরীতে সাঈদ খোকনের অবস্থান খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। সাঈদ খোকনের চেয়েও আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী বিবেচিত হচ্ছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি।

এদিকে আসনটিতে বিএনপির অবস্থানও কম শক্তিশালী নয়। বাবার আসনে নির্বাচনের মাঠে অনেকেই দেখতে চান সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইসরাক হোসেনকে। যিনি গত সিটি নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণ থেকে শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছিলেন।

এছাড়া আসনটি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন কাজী বাশার ও হামিদুর রহমান হামিদ।

>> আরও পড়ুন: ঢাকা-৪: উন্নয়ন প্রশ্নে ‘মুখোমুখি’ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি

সংসদীয় আসনটির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা-৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ঢাকা মেইলকে জানান, গত ৯ বছর সংসদীয় আসনটির জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুই করেছেন তিনি। উন্নয়ন ও সামাজিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, পানির অভাব ছিল, এখন সে অভাব নাই। ঠিক করা হয়েছে। স্কুল-কলেজ নির্মাণ, সংস্কার, সড়ক উন্নয়ন সবকিছুই করা হয়েছে। ইভটিজিংয়ের সমস্যা ছিল। সেটা সমাধান করা হয়েছে।

সংসদীয় আসনটির ২৪টি স্থানে বঙ্গবন্ধুর স্থায়ী মুর‌্যাল তৈরির কাজ করা হচ্ছে। ২৩টি এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান এই সংসদ সদস্য।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ঢাকার সব বড় বড় পাইকারি মার্কেট আমার আসনে আসনে পড়েছে। কেউ বলতে পারবে না, আমি কারও কাছে এক কাপ চা খেয়েছি।

তিনি জানান, দৃশ্যমান ও অদৃশ্য সব উন্নয়ন কাজ চলমান থাকবে। আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হলে যে উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে, তা টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি নতুন নতুন উন্নয়ন প্রকল্প করার কথা জানিয়েছেন তিনি।

কারই/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর