শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

ঢাকা-৪: উন্নয়ন প্রশ্নে ‘মুখোমুখি’ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি

কাজী রফিক
প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:১৩ পিএম

শেয়ার করুন:

ঢাকা-৪: উন্নয়ন প্রশ্নে ‘মুখোমুখি’ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি
সানজিদা, আওলাদ, বাবলা ও সালাউদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছরেরও কম সময় বাকি। ২০২৪ সালের প্রথম সপ্তাহে ভোট হওয়ার কথা। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে চলতি বছরের নভেম্বরে। তবে এরইমধ্যে ভোটের হাওয়া বইতে শুরু করেছে দেশজুড়ে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে চায়। দলটি ইতিমধ্যে তাদের নির্বাচনী প্রচারণাও শুরু করেছে। অপরদিকে সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনে মাঠে আছে বিএনপি। আর পারিবারিক কলহের মধ্য দিয়ে গেলেও ভোটের বিষয়ে চোখ-কান খোলা জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের।

দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২০টি ঢাকায়। যার ১৮টিতে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য। যে দুইটি আসনে আওয়ামী লীগের বাইরে জনপ্রতিনিধি রয়েছে তার একটি ঢাকা-৪ আসন।


বিজ্ঞাপন


আসনটি ঢাকা জেলার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৭, ৫১, ৫২, ৫৩ ও ৫৪নং ওয়ার্ড এবং শ্যামপুরের একাংশ নিয়ে গঠিত।

খোদ আওয়ামী লীগ বলছে, আসনটিতে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য থাকায় সেখানে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে দুর্বল।

২০১৪ সালে মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়। জাপার প্রার্থী করা হয় সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে। ২০১৮ সালেও একই আসনে পুনর্নির্বাচিত হন বাবলা। ৯ বছর দেড় মাস ধরে আসনটির সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। আগামী নির্বাচনেও একই আসনে হ্যাটট্রিকের আশাবাদী জাতীয় পার্টির এই প্রেসিডিয়াম সদস্য।

অপরদিকে আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীও কম নয়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সানজিদা খানম এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব ড. আওলাদ হোসেন আসনটিতে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী। তবে আসনটি মহাজোটের দখলে থাকায় তাদের কার্যক্রম শুধু স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গেই সম্পৃক্ত।


বিজ্ঞাপন


এদিকে আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে সালাউদ্দিন আহমেদকে। জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাপার বিপক্ষে অবস্থান নেন তিনি।

স্থানীয়দের ভাষ্য, সংসদ সদস্য বাবলা জনসম্পৃক্ত। স্থানীয়দের প্রয়োজনে তাকে পাশে পাওয়া যায়। আবার উন্নয়ন কাজেও আশপাশের সংসদীয় আসনের তুলনায় পিছিয়ে নেই ঢাকা-৪।

তবে স্থানীয় তৃণমূল আওয়ামী লীগের দাবি, আসনটিতে জাতীয় পার্টির জায়গায় আওয়ামী লীগের কেউ সংসদ সদস্য থাকলে উন্নয়ন আরও বেশি হতো।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং কদমতলী নতুন থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রুহুল আমিন ঢাকা মেইলকে এ কথা জানান।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে তিনি পরিবর্তন আশা করেন কিনা জানতে চাইলে রুহুল আমিন বলেন, অবশ্যই আমরা পরিবর্তন আশা করি। যেহেতু জাতীয় পার্টির এমপি, আমরা অবশ্যই এটা কামনা করি আমাদের এলাকায় আওয়ামী লীগের এমপি হোক। স্বাভাবিকভাবে আমরা যদি আওয়ামী লীগের এমপি না পাই তাহলে আমাদের দল কিন্তু দুর্বল হবে।

যেহেতু টানা ৯ বছর জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনে সংসদ সদস্য রয়েছে, সেক্ষেত্রে স্থানীয় রাজনৈতিক পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, আমাদের এলাকার রাজনৈতিক পরিবেশ ভালো। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ আছি। ভবিষ্যতেও ঐক্যবদ্ধ থাকব।

জাতীয় পার্টির পরিবর্তে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য থাকলে উন্নয়ন বেশি হতো কি না এমন প্রশ্নের জবাবে কাউন্সিলর রুহুল আমিন বলেন, জ্বি, এটা ঠিক বলেছেন। বাবলা সাহেব আমাদের এমপি ঠিক আছে, কিন্তু উনি এমপি হওয়ায় আমার দলের কোনো বেনিফিট হবে না। আমরা আমাদের তৃণমূল পর্যায়ে আমরা আশা করি আওয়ামী লীগ থেকে যদি এমপি হয় তাহলে আমাদের লাভ হবে।

আওয়ামী লীগ নেতার এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য। তার দাবি, গত ৯ বছরে আসনটিতে প্রচুর উন্নয়ন কাজ হয়েছে। বর্তমানেও নানা উন্নয়ন কাজ চলমান আছে। সব মিলিয়ে টাকার অঙ্কে ২৩০০ থেকে ২৫০০ কোটি টাকা উন্নয়ন প্রকল্প ঢাকা-৪ আসনে হয়েছে বলে জানান তিনি।

ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে জাতীয় পার্টির এই নেতা জানান, যে উন্নয়ন কাজ হয়েছে, আওয়ামী লীগের এমপি থাকলে তার ১০ ভাগের এক ভাগও হতো না।

বাবলা বলেন, বাংলাদেশের ৩৫০ জন এমপি। আল্লাহ অনেক উপরে রাখছে, সম্মান দিয়েছে, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে আমি জিরো। ডাল-ভাত, নিজের ইজ্জত নিয়ে আছি। কারো কাছে হাত পাততে হয় না। যারা বলেছে যে আওয়ামী লীগ থাকলে উন্নয়ন বেশি হতো, আমি বাবলা হয়ে অনেক কম উন্নয়ন করেছি, আমি এটুকু বলব তাদের, তারা আমার দশভাগের একভাগও কাজ করতে পারত না, পারত না, পারত না। মহান আল্লাহর নাম নিয়ে বললাম, নবীর উম্মত হিসেবে বললাম।

তিনি বলেন, আমি আমার বাবার টাকা দিয়ে করিনি। আমি কামলাগিরি করেছি। রাজনীতিতে আমি কোনো শোঅফ করি না। আমি কাজ করি৷ আমি বাংলাদেশের একমাত্র এমপি, যে প্রতিটা দিন তার নির্বাচনী এলাকায় বসেন।

আগামী নির্বাচনেও তিনি ঢাকা-৪ আসন থেকে নির্বাচন করার ও জয় লাভের আশাবাদ জানান। তিনি বলেন, আমি জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সংসদে কথা বলেছি এবং তারপর তারা এটা করেছেন। আমি দশটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় করেছি। বহুতল ভবন। মাদ্রাসা করেছি একটা। শ্যামপুর কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি। স্কুল থেকে কলেজ করেছি। পানির সমস্যা থাকার কারণে আমি গভীর নলকূপ করে দিয়েছি।

স্থানীয় কাউন্সিলররা তাকে সহযোগিতা করেন জানিয়ে বাবলা বলেন, সব কাউন্সিলরা আমাকে কম-বেশি সহযোগিতা করেন।

এদিকে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য থাকার কারণে ঢাকা-৪ আসনে ‘আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়েছে’ বলে জানিয়েছেন আসনটির সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সানজিদা খানম।

ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে সানজিদা খানম বলেন, এটা তো সহজ বিষয় যে আমাদের দল ক্ষমতায় আছে কিন্তু এই এলাকায় আমাদের এমপি নেই। দল দুর্বল হবে না? জাতীয় পার্টির বেসিক্যালি ভোট নাই। আমরা (আওয়ামী লীগ, মহাজোট) সমর্থন দিয়েছে বলেই তিনি এমপি হয়েছেন।

সানজিদা খানম বলেন, এমপি হওয়ার পরে এমপির যে কাজ সেই কাজে তার মনোযোগ নাই। আমিও এমপি ছিলাম, আরেকজন এমপির বিরুদ্ধে খারাপ কিছু বলতে চাই না। আপনি অন্যদের কাছে খোঁজ নিয়েন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এই সদস্য বলেন, আমি দশ বছর ওই এলাকার এমপি ছিলাম। আমি দৃশ্যমান যে কাজ করেছি, বাবলা সাহেব যে কয় বছর এমপি আছেন, একটা দৃশ্যমান কাজ তিনি দেখাতে পারবেন না যেটা তিনি উদ্যোগ নিয়ে করেছেন।

কারই/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর