মেগাসিটি রাজধানী ঢাকার বাসিন্দাদের একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার স্থান নগরীর পার্কগুলো। কিন্তু পরিচর্যার অভাবে এই পার্কগুলোও এখন আর স্বস্তিদায়ক নয়। এসব পার্কে বেড়েছে মশার উপদ্রব। ফলে পার্কে সময় কাটানো এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে পার্কে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। যারা যাচ্ছেন তারাও বেশি সময় কাটাতে পারছেন না।
সরেজমিনে রাজধানীর বাংলামোটরের পান্থকুঞ্জ পার্ক, শাহাবাগের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ধানমন্ডি লেক, জিয়া উদ্যান, গুলশান ২ এর বিচারপতি শাহাবুদ্দিন পার্ক, বাহাদুর শাহ পার্ক, শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি পার্কসহ দুই সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ এলাকার পার্কগুলো ঘুরে দেখা যায়, বিশেষায়িত এসব এলাকার আবাসিক ভবনগুলোতে মশার উপদ্রব কম হলেও পার্কগুলোতে বেড়েছে মশার উৎপাত। পার্কগুলোতে দিনের বেলায় বিভিন্ন এলাকার মানুষ ছুটে আসে একটু স্বস্তি নেওয়ার জন্য। কিন্তু মশার উৎপাতে সেই সুযোগও তাদের হয়ে উঠে না। এসব এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, দিনের বেলা মশা একটু কম থাকলেও সন্ধ্যার পর বসে থাকা দায় হয়ে যাচ্ছে। এসব পার্কের সঠিক পরিচর্যা না হওয়ার কারণে মশার প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
বিজ্ঞাপন
গুলশানের বাসিন্দা রবিন বলেন, ‘আগে পার্কে আসতাম দীর্ঘ সময় বসার জন্য। কিন্তু এখন পার্কে এলেও কিন্তু আগের মতো দীর্ঘ সময় বসা যায় না। কারণে বিকেল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মশা কামড়াতে শুরু করে। আর সন্ধ্যা হলে তো মাথার উপর মৌমাছির চাকের মতো উড়ে বেড়ায়। পার্কের এ অবস্থা প্রায় এক মাস ধরে চললেও সিটি করপোরেশনের কোনো কার্যক্রম লক্ষ্য করছি না। পার্কের ভেতরে যেখানে পানি জমে থাকে, ছোট ছোট নালাগুলো একটু পরিষ্কার করে মশা নিধনের ওষুধ ছিটিয়ে দিলেই কিন্তু মশা কমে আসবে। এতে করে এক সঙ্গে দুই কাজ হবে- আশপাশের আবাসিক এলাকাগুলোতে মশার উপদ্রব কম হবে, আবার পার্কে আসা জনগণও স্বস্তি পাবে।
সন্ধ্যার পর শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি পার্কে গিয়ে দেখা যায়-পার্কের বাইরে যারা বসে আছেন তাদের মাথার উপরে মশার জটলা ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমন অবস্থা ভেতরেও। এ বিষয়ে কথা হয় পুলিশ প্লাজায় চাকরি করা শাওনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আপনে এখন যা দেখছেন তা কিছুই না। আরেকটু রাত হলে দেখবেন এখানে মশার দাপাদাপি। আমি গাড়িতে বসে থেকে এক মুহূর্তের জন্য পা দুটো স্থির রাখতে পারি না মশার জন্য। আমি এখানে প্রতিদিন আসি, একদিনও সিটি করপোরেশনের কোনো লোকজন দেখিনি। তাই আমার মনে হয় পার্ক যেন মানুষের নয়, মশাদের বিনোদন কেন্দ্র।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই পার্কের এক কর্মচারী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আগে প্রতি সপ্তাহে একদিন ওষুধ দিয়ে যেত। কিন্তু এখন যেটা দেয় সেটা না দেওয়ার সমান। হাতিরঝিল পাশে হওয়ার কারণে অন্যান্য পার্কের চেয়ে এ পার্কে মশা তুলনামূলক বেশি।’
বিজ্ঞাপন
বাংলামোটরের পান্থকুঞ্জ পার্ক, শাহাবাগের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ধানমন্ডি লেক, জিয়া উদ্যান, বাহাদুর শাহ পার্কসহ প্রায় সব পার্কে একই রকম অবস্থা দেখা যায়।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘কিউলেক্স মশার নিধনে প্রতিদিন স্প্রে করলে মানুষের স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। একারণে আমরা তিন দিন পরপর ওষুধ ছিটাচ্ছি। যদিও দেখা যাচ্ছে, ওষুধ দেওয়ার পরের দিনেই আবার মশায় ভরে যাচ্ছে। একারণে আমাদের নিজেদেরও সচেতন থাকতে হবে। এছাড়া ডেঙ্গু দমনে আমরা প্রতিদিনই লার্ভিসাইড স্প্রে করছি।’
সূত্র বলছে, মশক নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বছরে কমবেশি ২০০ কোটি টাকা বাজেট আছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মশক নিধন কার্যক্রমের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ব্যয় হয়েছে ৮৭ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ১১১ কোটি টাকা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেও প্রায় কাছাকাছি বাজেট ধরা হয় মশক নিধনে। মশার পেছনে দুই সিটি করপোরেশনের এত বিপুল ব্যয়ের সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী।
জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মোট ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ডের দায়িত্বে আছেন ১০ জন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা। তাদের অধীনে মশক কর্মীরাও কাজ করেন। যদিও এ কাজটি আগে সরাসরি দেখভাল করতেন ৫৪টি ওয়ার্ডের একজন করে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তাদের সঙ্গে আরও ১৮ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরও ছিলেন। ডিএনসিসি এলাকায় এসব জনপ্রতিনিধি মশক নিধন কার্যক্রমের তদারকি ছাড়াও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজটি মনিটরিং করতেন।
মশক নিধন কার্যক্রম নিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা বা সীমাবদ্ধতা মানতে নারাজ ডিএসসিসি। পুরো ১০টি অঞ্চলের আওতায় ৭৫টি ওয়ার্ডে কর্মীরা কাজ করছে বলে জানায় সংস্থাটি। তবে শহরের নিম্নাঞ্চলগুলোতে মশার উৎপাত কিছুটা বেড়েছে বলে স্বীকার করেছে ডিএসসিসি।
এমএইচ/জেবি