মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

অবৈধ দখল আর চাঁদাবাজিতে ধুঁকছে নিউমার্কেট!

সাখাওয়াত হোসাইন
প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৯:৩৮ এএম

শেয়ার করুন:

loading/img

রাজধানী ঢাকার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র নিউমার্কেট। অবৈধ দখল ও ফুটপাতের দোকানের কারণে সারাদিন যানজট লেগেই থাকে এই এলাকায়। সড়কের ডিভাইডারের ওপরও বসানো হয়েছে ফুটপাত। দিনের বেলা ও সন্ধ্যার পর ফুটপাতে থাকে না তিল ধারণের ঠাঁই। যার কারণে পথচারীদের পোহাতে হয় ভোগান্তি। সড়কে লেগে থাকে তীব্র যানজট। আর অবৈধ এই দখলের নেপথ্যে রয়েছে চাঁদাবাজি। প্রতি মাসে এই এলাকায় মোটা অংকের টাকা চাঁদাবাজি হয়। এই চাঁদাবাজির সঙ্গে রাজনৈতিক দলের নেতারা যুক্ত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, ধানমণ্ডি হকার্স মার্কেটের সামনের দুই পাশ, গ্লোব মার্কেট, নুরজাহান মার্কেট, গাউসিয়া মার্কেট, ঢাকা কলেজের সামনে, বলাকা, নীলক্ষেত, সাইন্সল্যাব, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুর রোডসহ পুরো এলাকার ফুটপাথে শত শত জামা-কাপড়, জুতা-স্যান্ডেলসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের হকারির দোকান। সবমিলিয়ে নিউমার্কেট এলাকায় ফুটপাত দোকান রয়েছে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার।


বিজ্ঞাপন


চাঁদাবাজিতে যারা জড়িত
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এসব চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। মধ্যম সারির নেতাদের ছত্রছায়া ও পুলিশের সহযোগিতায় এসব চাঁদাবাজি হচ্ছে। আবার কখনো নামে, কখনো বেনামে চাঁদাবাজি করেন নেতারা। বেশিরভাগ নেতাই বেনামে চাঁদাবাজি করেন। আর কখনও ঝামেলায় পড়লে পুলিশকে ব্যবহার করা হয় মীমাংসা জন্য।

জানতে চাইতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘নিউমার্কেটের ফুটপাতে দোকান করার বিনিময়ে প্রতি মাসে নেতাদের দিতে হয় চাঁদা। চাঁদার পরিমাণ দোকান প্রতি ৮-১০ হাজার টাকা। ছোট-বড় দোকানভেদে আবার চাঁদার পরিমাণ হয় ৬-১৮ হাজার টাকা। এসবই অবৈধভাবে ভোগ করছেন নেতারা। সেই হিসাবে প্রতি মাসে কয়েক কোটি টাকা ফুটপাত থেকে চাঁদা পান নেতারা।

দোকানিদের অভিযোগ, এক সময় এই এলাকায় চাঁদাবাজি করতেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ক্ষমতার পালাবদলে এই চাঁদাবাজির সঙ্গে এবার বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা যুক্ত হয়েছেন। 


বিজ্ঞাপন


অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফুটপাতে কেউ কেউ ৩-২৫টি পর্যন্ত দোকান নিয়ন্ত্রণ করেন। প্রতি মাসে এসব দোকান থেকে তারা নির্ধারিত চাঁদা আদায় করেন। 

স্থানভেদে চাঁদা আলাদা
স্থানীয়রা জানান, স্থানভেদে চাঁদার পরিমাণও বাড়ে-কমে। গ্লোব মার্কেটের সামনের ফুটপাতের দোকান ১২ হাজার টাকা, চন্দ্রিমার সামনে ৮ হাজার মাসে, নূর জাহানের সামনে মাসে ১৫ হাজার, হকার্স মার্কেটের সামনে দোকান প্রতি ১২-১৫ হাজার, গাউছিয়া মার্কেটের সামনে ১১-১৬ হাজার। প্রতি মাসে প্রতি দোকান থেকে ৪ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করেন নেতারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির সহযোগী সংগঠনের এক কর্মী ঢাকা মেইলকে বলেন, বেশিরভাগ নেতা বেনামে চাঁদা আদায় করেন। নিজের নামে চাঁদাবাজি করেন খুবই কম নেতা। কেউ যাতে তাদের ধরতে না পারে এবং যাতে ক্লিন ইমেজে থাকতে পারেন, এজন্য বেনামে চাঁদাবাজি করেন। এতে ব্যবহার করেন ছাত্রদলের জুনিয়র কর্মীদের।

ছাত্রদলের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শীর্ষ পর্যায় থেকে বারবার নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা মানছেন ছাত্রদলের পদ ব্যবহার করে ফুটপাত নিয়ন্ত্রণকারী নেতারা। চাঁদাবাজ নেতাদের নিয়ে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও বিরক্ত।

জানতে চাইলে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব মিল্লাদ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের কাজ ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক। এর বাইরে কোনো কাজ নেই। ছাত্রদলের কেউ কোনো ধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকলে আমাদের জানাবেন। কেন্দ্রীয় সংসদের সাথে কথা বলে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ছাত্রদলের এই নেতা বলেন, ‘ক্যাম্পাসের সামনের ফুটপাত দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা হাঁটাচলা করতে পারছে না, স্বাভাবিক চলাচল ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। কলেজ প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ফুটপাতের দোকান উচ্ছেদ করে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে কলেজ প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’

তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে নিউমার্কেট থানার বিএনপির আহ্বায়ক মকবুল হেসেনের সঙ্গে ঢাকা মেইলের পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

যা বলছে পুলিশ
জানতে চাইলে নিউমার্কেট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহ্সীন উদ্দিন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘যাতায়াত সহজ ও হকারদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে তৎপরতা চলমান রয়েছে। বর্তমানে নিউমার্কেটে পুলিশের আটটি ফুটপাত টুল কাজ করছে। চারটি মোবাইল টিম ও একটি বিশেষ অভিযান টিম চলমান রয়েছে। এছাড়া ট্রাফিক বিভাগও কাজ করছে। ছিনতাই চাঁদাবাজি রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের সামর্থ্য অনুযায়ী ফুটপাত নিয়ন্ত্রণে রাখার জোর চেষ্টা চলমান রয়েছে।’

নিউমার্কেট থানা সূত্র জানিয়েছে, ফুটপাতের হকারদের উচ্ছেদ করার পরপরই তারা আবার বসেন। যার কারণে স্থায়ীভাবে ফুটপাত উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই ফুটপাতের চাঁদাবাজদের আটক করছে থানা পুলিশ। অপরাধভেদে পাঠানো হয় জেলেও। কোনো কোনো দিন ১০-১৫ জনকেও ধরছে পুলিশ। 

পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, হকারদের উচ্ছেদে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে না। আর স্থায়ীভাবে ফুটপাত নির্মূল করতে হলে প্রয়োজন ফুটপাত দখলকারীদের পুনর্বাসন করা। যাতে করে ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা বৈধ কর্ম করে চলাফেরা করতে পারেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে ঢাকা মেইলের পক্ষ থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহজাহান মিয়ার কাছে ফোন করা হলে তিনি বলেন, জনসংযোগ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে। পরে জনসংযোগ কর্মকর্তা রাসেল রহমানের কাছে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

এসএইচ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর