রাজধানীর গুলিস্তানের স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে গোলাপ শাহ মাজারের মধ্যকার সংযোগ সড়ক। প্রথম দেখায় মনে হতে পারে এটি হকারদের স্থায়ী কোনো মার্কেট! তবে এই ভ্রম ভাঙবে যখন ছয়লেন এই সড়কটির একলেন দিয়ে কচ্ছপ গতিতে ভিড় ঠেলে গাড়ি চলাচল করতে দেখবেন। চিত্রটি শুধু এই সংযোগ সড়কেরই নয়, পাশের আরও একটি সংযোগ সড়কেও একই অবস্থা। বায়তুল মোকাররমের প্রধান ফটক ও পশ্চিম পাশের সড়কের চিত্রও প্রায় একই। ফুটপাতসহ রাস্তা দখলের এই মহড়ায় বিপাকে সাধারণ পথচারীরা। তৈরি হচ্ছে যানজটও। তিলোত্তমা নগরী হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য।
সম্প্রতি গুলিস্তান, পল্টন, বায়তুল মোকাররম ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শুধু হকারদের দখলের দৌরাত্ম্য নয়; ‘মরার উপর খারার ঘা’ হয়ে অবৈধ পার্কিং জনদুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে। যা নিয়ে প্রশাসনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
বিজ্ঞাপন
গুলিস্তানের আশেপাশের সব সড়কের বেশিরভাগ অংশ দখল করে বসানো হয়েছে দোকানপাট। রাস্তার দুইপাশে বাধাহীনভাবে অর্ধেক রাস্তা দখল করে রাস্তার ওপরেই গাড়ি পার্কিং করে মালামাল ওঠানামার কাজও করতে দেখা যাচ্ছে।
সাধারণ পথচারীরা বলছেন, রাজধানী ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে এমন ‘হযবরল’ অবস্থা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ফুটপাত তো দূরের কথা, রাস্তা দিয়েও হেঁটে যাওয়া দুষ্কর। মনে হচ্ছে দেখার মতো কেউ নেই। যার যা ইচ্ছে তাই করছে।
পথচারী মনিরা আক্তার ঢাকা মেইলকে বলেন, ঢাকা শহরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা এই গুলিস্তানে। এখানে হকারদের দৌরাত্ম্য এত বেশি যে, রাস্তাকে মার্কেট মনে হয়। ফুটপাত দিয়ে হাঁটা যায় না। এ রাস্তায় শুধু গাড়ির জ্যাম তৈরি হয় না, পথচারীদের জ্যামও তৈরি হয়। ফুটপাতে চলার সময় চারপাশ থেকে মানুষ ঠেলতে থাকে। নারী-শিশু কিছু দেখে না। ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। ফুটপাত দিয়ে মানুষ ক্রস করে যেতে হলেও ধাক্কা দিয়ে যেতে হয়। এটা খুবই খারাপ।
বিজ্ঞাপন
বয়োবৃদ্ধ মোজাম্মেল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, এই রাস্তায় চোর-পুলিশের খেলা বহু আগে থেকেই দেখে আসছি। মাঝেমধ্যে অভিযান চলে। এর কিছুক্ষণ পর আবারও আগের চিত্র ধারণ করে। বলেও লাভ নাই। কাকে বলব। যাদের এসব দেখার কথা, তারাই এগুলো প্রশ্রয় দেয়। এই রাস্তায় আমাদের মতো বয়স্ক মানুষর হাঁটা দায় হয়ে যায়।
এদিকে, বায়তুল মোকাররমের মূল ফটক ও পশ্চিমের সড়কটির দুপাশেও চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়ছে মুসল্লিসহ সাধারণ পথচারীদের। রাস্তার একপাশে হকারদের দখল, অন্য পাশে গাড়ি পার্কিং। মাঝ দিয়ে চলতে গিয়ে হোঁচট খেতে হচ্ছে পথচারীদের। ঘটছে দুর্ঘটনাও।
শাহিনুল ইসলাম নামের এক যুবক ঢাকা মেইলকে বলেন, বায়তুল মোকাররম দেশের জাতীয় মসজিদ। এই মসজিদের সামনের চিত্র এমন হতে পারে এটা অবাক করার মতো। আমি একটি কাজে গুলিস্তানে এসেছিলাম। ইফতার করে নামাজে যাওয়ার পথে চারজনের সঙ্গে ধাক্কা লেগেছে। মসজিদ গেটেও ধাক্কা খেতে হয়েছে। দখলের কারণে বায়তুল মোকাররমের যে সৌন্দর্য সেটিও মারাত্মকভাবে হানি হচ্ছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে সব সময় সজাগ থাকা উচিত।
অপরদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যস্ত এই সড়টিকে কেন্দ্র করেই তাদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয়। সরকার আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য পুনর্বাসনমূলক ব্যবস্থা করলে হয়ত গুলিস্তানের এই অবস্থা হবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ঢাকা মেইলকে বলেন, এখানে বেচাবিক্রি বেশি হয় দেখেই আমরা এখানে দোকান বসিয়েছি। আর ফ্রিতে তো দোকান বসায় না। সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই সবকিছু করি। তবে আমাদের জন্য সরকার পুনর্বাসনমূলক কিছু করলে সেটা নিয়ে অবশ্যই ভাবব।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রাজীব খাদেম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা কোথায় কোথায় দখল হচেছ, এগুলো জানাই। কিন্তু অভিযান চালান ম্যাজিস্ট্রেটরা। এখন বিষয়টা এমন হয় যে, অভিযান চালিয়ে উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আবার কিছুক্ষণ পর তারা বসে যাচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এমআই/জেবি