ধুলোবালিতে ত্রাহি অবস্থা রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলাবাসীর। ফলে এই এলাকার বাসিন্দাদের বাইরে বের হওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। রাস্তায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেই কালো কাপড় সাদা হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে অনেকে সেই এলাকার বাসা বদল করে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞাপন
মাসুদ আহমেদ কাজ করেন একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে। গত ছয় মাস থেকে তিনি বসিলার লাউতলার পাশের এলকায় বাসা ভাড়া নিয়েছেন। তার সন্তান লালমাটিয়ার একটি স্কুলে পড়াশোনা করে। সড়কে যানজট আর সময় বাঁচাতে এবং সন্তানের কথা চিন্তা করে ফার্মগেট এলাকা ছেড়ে লাউতলায় এসেছিলেন। কিন্তু এখন পড়েছেন বিপদে।
মাসুদরে মতে, এমন বিপদ আর কোথাও পাননি তিনি। ঘরের জানালা ও ভেন্টিলেটর দিয়ে সারাক্ষণ ধুলোবালি ঢুকতে থাকে। বারান্দায় আসতে পারেন না শুধু ধুলোবালির ভয়ে। এজন্য সারাক্ষণ ঘরের জানালা বন্ধ করে রাখেন তার স্ত্রী। এতে ঘর হয়ে যায় স্যাঁতস্যাঁতে।
বসিলার মেট্রো হাউজিংয়ের মাসুম আহমেদ বলেন, এই এলাকায় সবই ভালো, কিন্তু ধুলোবালির কারণে অবস্থা কাহিল। ফলে রাস্তাঘাটে বের হলে সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকতে হয়।
বিজ্ঞাপন
এই এলাকায় ধুলোবালির আধিক্য এতটাই বেশি যে, প্রতিটি বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের গেট, ছাদ, টিনের চাল, পুরো প্রতিষ্ঠানের দেয়াল ধুলোবালির আস্তরণে সাদা হয়ে গেছে। আর প্রতিটি গাছের পাতা দেখে মনে হবে শুভ্র বরফ পড়ে জমে আছে। কিন্তু আসলে সেগুলো সাদা বালুর আস্তরণ। ধুলোবালি থেকে রক্ষা পেতে বসিলা, লাউতলার বেশির ভাগ দোকানি তাদের দোকানের সামনে সার্টারের পাশাপাশি গ্লাস গিয়ে ঘিরে রেখেছেন।
মানিক নামে একজন জানান, তিনি বেড়িবাঁধ থেকে বসিলা পর্যন্ত খুব কম সময় সিটি করেপোরেশনের গাড়ি দিয়ে পানি ছিটাতে দেখেছেন। তার মতে, এই সড়কে কোনো পানিই ছিটানো হয় না। ফলে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই ধুলোবালি ওড়ে। এর ফলে সেই এলাকায় লোকজন নানা শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
মানিকের সঙ্গে কথা বলে একটি নতুন তথ্যও জানা গেল। তিনি জানালেন, গত তিন মাস থেকে অনেক ভাড়াটিয়া বসিলা, লাউতলা, মেট্রো হাউজিং, ওয়েস্ট ধানমন্ডি প্রজেক্টের ভাড়া বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
রাস্তা দখল করে ইট বালু ও খোয়ার ব্যবসা!
বেড়িবাঁধ থেকে বসিলা র্যাব অফিসের পেছন পর্যন্ত পূর্ব পাশের সড়ক দখল করে বসানো হয়েছে ইট, বালু ও খোয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি বসেছে তরমুজের দোকান। রায়েরবাজার করবস্থানের পশ্চিম দেয়াল ঘেঁষে এসব ভাসমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সড়কটি প্রায় ৪০ ফুটের। কিন্তু দুই পাশে ট্রাক, ইট বালুর ব্যবসায়ীরা দখল করে ১৫ ফুটে রূপান্তর করেছেন। ফলে বেড়িবাঁধ থেকে বসিলা সড়কে সারাক্ষণ যানজট লেগে থাকে। সড়ক দখল করে বিগত সময়ে চাঁদাবাজির জন্য বসানো হয়েছিল এসব দোকান। এখনো সেগুলো চলছে। তবে প্রশাসনও নীরব। সেগুলোর উচ্ছেদ নিয়ে প্রশাসনের যেন কোনো মাথাব্যথা নেই।
মাসুদ নামে এক ব্যবসায়ী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আগে আমরা প্রতি মাসে ২০ হাজার করে টাকা দিতাম। প্রতি সপ্তাহে দিতে হতো পাঁচ হাজার করে। এখন আর দিতে হয় না।’ আওয়ামী লীগের নেতা, পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশকে এই চাঁদা দিতে হতো বলে জানান তিনি। তার মতো এই সড়কে অন্তত ১৫টির মতো ভাসমান প্রতিষ্ঠান বসেছে। তাদের কারও নামেই লিজও দেয়নি প্রশাসন। রাস্তা বন্ধ করে এই ব্যবসা চালাচ্ছেন তারা।
এবিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামানকে একাধিকবার কল করা হলেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এমআইকে/জেবি