-
-
- পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের ঠেলাঠেলি
- সংকীর্ণ হওয়ায় সড়কে অল্পতে যানজট
- ফুটপাতও দখল, হাঁটার রাস্তাও বন্ধ
- চাঁদা না দিলেও দখল ছাড়ছেন না দোকানিরা
-
রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার আল্লাহ করিম মসজিদের সামনে থেকে বেধিবাঁধ পর্যন্ত সড়কের প্রশস্ততা প্রায় ৪০ ফুট। কিন্তু রাস্তা দখল করে দোকান বসিয়ে সেটাকে বানানো হয়েছে ১০ ফুট। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কোনো সড়ক। বিষয়টি পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের লোকজনও জানেন। অভিযানও চালাচ্ছেন বারবার। তবে কোনোভাবেই সরানো যাচ্ছে না দখলদারদের। দখল হওয়া সড়কটি উদ্ধারে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরেই এই সড়কে ভাসমান দোকানপাট বসিয়ে চাঁদা আদায় করতেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মীরা। প্রতিদিন দোকান বসাতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা গুনতে হতো। গত ৫ আগস্ট থেকে সেই চিত্র বদলালেও দোকান বসানো বন্ধ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, সেই সময় এই সড়কে চাঁদা তুলতেন নূর ইসলাম, আলী ও সালাম। তাদের কাছ থেকে সব চাঁদা একত্র করে আওয়ামী লীগের নেতা ও পুলিশের মধ্যে বণ্টন করতেন জসিম। তারা সবাই এখন পলাতক।
সরেজমিনে এই সড়কে গিয়ে দেখা গেছে, আল্লাহ করিম মসজিদ থেকে বেড়িবাঁধ পর্যন্ত এক সারিতে ভ্যানে করে দোকানগুলো বসেছে। বেশির ভাগই সবজি ও ফলমূলের দোকান। দোকানি রফিক মজমুদার ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আগে চাঁদা না দিলে দোকান বসাতে পারতাম না। এখন চাঁদা দিতে হয় না। আমরা নিজেরাই বসি। নিজেরাই উঠে যাই।’
দোকানিরা বলছেন, আমরা এতদিন বসে আসছি। টাকাও দিতাম। কিন্তু এখন আর টাকা দিতে হয় না। এতগুলো দোকানি কই যাবে! তারা একটি সুষ্ঠু সমাধান চেয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
সন্ধ্যার পর থেকে এই সড়কে যানজট লেগেই থাকে। রাস্তা দখল করে ভাসমান দোকান বসানোর কারণে বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল পর্যন্ত চলতে পারে না। মাত্র দেড় মিনিটের সড়কে চলতে সন্ধ্যার পর সময় লাগে প্রায় ৩০ মিনিট। ফলে অনেকে এই সড়কে বাস, প্রাইভেট ও রিকশা পৌঁছা মাত্র নেমে হাঁটা শুরু করেন।
বসিলার রুবেল আহমেদ বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে আসার সময় ভালোই আসি। কিন্তু সন্ধ্যায় অফিস শেষ করে যাওয়ার সময় বিপদে পড়ি। মাত্র দেড় মিনিটের সড়ক কিন্তু আল্লাহ করিম থেকে বেড়িবাঁধ যেতেই সময় লাগে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট। ফলে রিকশা ভাড়াও বেড়ে যায়।’
এই যানজট এড়ানোর কারণে বসিলা, ঢাকা উদ্যান ও আঁটিবাজারগামী মোটরসাইকেল আরোহীরা এখন বিকেলের পর যাতায়াতের জন্য বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। তেমনি একজন ভুক্তভোগী সায়েম আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ভয়ে বিকেল হলেই এই সড়ক আর ব্যবহার করি না। মবকুল হোসেন কলেজের রাস্তা হয়ে ভেতর দিয়ে বেড়িবাঁধ সড়কে উঠে যাই। এছাড়া তো উপায় নাই।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক মাসে এই সড়কে অন্তত সাতবার উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে পুলিশ ও সিটি করপোরেশন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। সকালে অভিযান চালালে ভাসমান দোকানিরা দুপুরে বসে যায়। আবার দুপুরে অভিযান চালাতে বিকেলে সড়ক দখল করে দোকান বসায় তারা।
বিষয়টি নিয়ে পুলিশ প্রশাসনও বিব্রত। কারণ গত কয়েক মাসে অভিযান চালানোর সময় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে। সবশেষ গত মঙ্গলবার অভিযান চালানোর পর ভাসমান দোকানিরা পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও করেছে। এসব কারণে পুলিশ পড়েছে বেকায়দায়।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তারা ‘মব’ তৈরি করে হামলা করতে পারে-এমন আশঙ্কায় তারা সেখানে যেতে ভয় পায়। ফলে মঙ্গলবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়েছে। যদিও এই অভিযানে ওই দিন ভাসমান দোকানিরা তেমন সুবিধা করতে পারেনি। কিন্তু বুধবার সকাল থেকে আবারও বসতে শুরু করে।
পুলিশের সূত্রগুলো বলছে, এই অবস্থায় পুলিশের একার পক্ষে এই কাজ করা অসম্ভব। এজন্য স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, ছাত্র-জনতার সাহায্য দরকার তাদের।
এ বিষয়ে পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের এডিসি জুয়েল রানা ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা গতকালও (মঙ্গলবার) অভিযান চালিয়েছি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অভিযান চালিয়ে সড়কটি ফাঁকা করা হয়েছিল। কিন্তু পরক্ষণই তারা বসে গেছে। এভাবে তারা পুলিশের সাথে ইঁদুল-বিড়াল খেলছে। আমরা তো চেষ্টা করছি। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা একটা স্থায়ী সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছি।
উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা উচ্ছেদ চালাচ্ছি। কিন্তু তারা আবারও বসে যাচ্ছে। এজন্য স্থানীয় কমিউনিটিগুলো এগিয়ে না এলে এটি নির্মূল করা অসম্ভব।
এমআইকে/জেবি