রাজধানীর লালবাগের নাজ নারায়ণ রোডে থাকেন শেখ সামসুদ্দিন। তিনি বলছিলেন, ‘বছরখানেক আগেও এত মশা ছিল না। এখন দিনে রাইতে সমান মশা। ধূপ জ্বালাইলেও মশা পালায় না। মশার জ্বালায় বসা, খাওয়া ও ঘুমানো দুষ্কর হইয়া দাঁড়াইছে।’
সম্প্রতি লালবাগের নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র-৪ এর বিপরীত পাশে থাকা নৌকাঘাটের ফুটপাতে মশার উৎপাত নিয়ে তার সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি বলছিলেন ‘অতিরিক্ত মশা। সন্ধ্যার পর এইখানে মশার লাইগা দাঁড়ান যায় না।’
বিজ্ঞাপন
তার দাবি, গত এক বছর ধরে সেখানে তেমন ওষুধ ছিটানো হয়নি। ফলে মশার উপদ্রব বেড়েছে। কিছুদূর গিয়ে কথা হয় জালাল আহমেদ নামে আরেকজনের সঙ্গে। তিনিও একই কথা জানালেন।
জালাল আহমেদ বলেন, ‘কয়েলেও মানে না মশা। কামরাইলে ঘাও বানাই দেয়, এই রকম অবস্থা। মশারি ছাড়া শওন যায় না। এটা অনেক দিন থেকে শুরু হইছে। নর্দমা নাই, ড্রেন নাই, তবু মশা বাড়ছে। মাঝে মাঝে ফগিং মেশিন আসে।’
এরপর সেই এলাকার বিভিন্ন অলিগলি, লালবাগ থানার সামনে এবং বেড়িবাঁধ হয়ে সদরঘাটের রাস্তার দুই ধারে থাকা লোকজনের সঙ্গে কথা বললে তারাও মশার উৎপাতের কথা জানান।
লালবাগের নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র-৪ এর কুড়ার ঘাট এলাকার লোকজন জানান, রায়েরবাজার ম্যাটাডোর ও ফলের আড়তের পশ্চিম পাশে থাকা মরা বুড়িগঙ্গা থেকে শুরু হয়েছে মশার উৎপাত। সেটি নদী পর্যন্ত বিস্তৃত।
কহেতটুলি রোডের জাকারিয়া সেই এলাকার পানির পাম্পের পাশের একটি ভবনের ছয় তলায় থাকেন। তিনি বলেন, আমার বাসার ছয় তলার ছাদেও মশা। ঘরে তো কয়েল ও মশারি ছাড়া থাকতেই পারি না। তিনি জানান, সেই এলাকায় প্রায় ১২ বছর ধরে থাকছেন। ঢাকায় ১৮ বছরের জীবনে এত মশা আর দেখেননি। মশার কামড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত তার বোন, ভাগ্নি ও মামা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লালবাগের পলাশী রোড, নুর ফতেহ লেন রোড, খাজে দেওয়ান রোড, পলাশী মসজিদ রোড, নাজিমুদ্দিন রোড, কাহেতটুলি রোড ও আগামাসি লেনসহ প্রতিটি এলাকায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। এলাকাবাসী বলছেন, মশায় তারা অতিষ্ঠ।
লালবাগ থানার পাশের এলাকার সজীব স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণিপড়ুয়া ইয়াসিন আরাফাত বলে, ‘আংকেল! আমরা ঘরে থাকবার পারি না। চাইর তলায় থাকি, তবু মশা কামড়ায়। হের লাইগা মায় সারাক্ষণ কয়েল ও ধূপ জ্বাইলা রাখে।’ এসময় তার খেলার সঙ্গী নিউ ইসলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ইশরাকও একই কথা জানায়।
এলাকাবাসী অভিযোগ করছেন, লালবাগ ও কামরাঙ্গীরচরকে বিভক্ত করেছে মরা বুড়িগঙ্গা। এই নদীর পানি পুরাই বিষাক্ত ও নোংরা। ফলে সেখানে প্রচুর মশা জন্মায়। সেই মশা উড়ে আসে লালবাগের বিভিন্ন এলাকায়। না হলে লালবাগ এলাকায় এত মশা হওয়ার কারণ তারা দেখছেন না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক জরিপে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকার দুই সিটির ১৩টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট মানদণ্ডের থেকেও বেশি। সংস্থাটির রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার আওতাধীন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অধীন গত ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসে চালানো প্রাক-বর্ষা জরিপে এই তথ্য উঠে আসে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ডগুলো হলো- ১২, ২, ৮, ৩৪, ১৩, ২২নং ওয়ার্ড। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো হলো- ৩১, ৪১, ৩, ৪৬, ৪৭, ৪, ২৩নং ওয়ার্ড।
এমআইকে/জেবি


















