পুষ্টিগুণে ভরা মধুর ফল আনারস সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ থেকে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময় পাকে। অবশ্য এর আগেও বাজারে মেলে এই ফল। ফাল্গুনের শেষ দিকে এসে এবার রমজানের শুরুতে বাজারে আসা এই ফলের দাম বেশ চড়া। কারণ প্রতি পিস বড় আকৃতির আনারস কিনতে গুনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। আকারে ছোটগুলো কিনতেও খরচ করতে হচ্ছে ৫০ টাকা।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে পার্বত্য অঞ্চল থেকে আগাম আনারস আসছে। রমজানে ইফতারে এই ফলের চাহিদাও বেশি। এই সুযোগে আড়তেও বেড়েছে ফলটির দাম। বড় আকৃতির প্রতি পিস আনারস রাজধানীর শ্যামবাজারের আড়ত থেকে কিনতে খরচ হচ্ছে ৬০ টাকা। আর বিক্রি করছেন ৭০ থেকে ৮০ টাকা। অর্থাৎ এক হালি আনারস কিনতে হলে ক্রেতাকে গুনতে হবে ২৮০ টাকা।
বিজ্ঞাপন
অবশ্য রমজানের আগে প্রতি পিস আনারস কিনতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত কম লাগত বলে বিক্রেতাদের দাবি।
এদিকে নানা গুণে ভরপুর পাকা পেঁপে খেতে গেলে অনেকটা দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হতে পারে ক্রেতাদের! কারণ রমজানের আগে কেজি প্রতি পেঁপে সর্বোচ্চ ৮০ টাকায় কেনা গেলেও প্রথম রোজার দিনে অর্থাৎ মঙ্গলবার ১৫০ টাকার নিচে বিক্রি করতে নারাজ বিক্রেতারা।
পেঁপে বিক্রেতাদের ভাষ্য, আগে ৬০ টাকা পর্যন্ত কেজি কেনার পর ৮০ টাকা, কখনো ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতেন। কিন্তু মঙ্গলবার তারা আড়ত থেকেই ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে পেঁপে কিনেছেন। তাই চাইলেও কম দামে বিক্রির সুযোগ নেই।
বিজ্ঞাপন
রমজানের প্রথম দিন মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সকালে রাজধানীর পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার, সেগুন বাগিচা এলাকায় একাধিক দেশি ফল বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে আনারস-পেঁপের দাম যখন উপরের দিকে ছুটছে তখন বসে নেই মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাওয়া ডাব। গরমে ডাবের চাহিদা বাড়ে। দামও বাড়ে। এবার গরম পড়তে শুরু হওয়ার প্রাক্কালে রমজান চলে এসেছে। ইফতারে কেউ ডাবের পানি খেতে চাইলে বড় আকারের একটি ডাব কিনতে গুনতে হবে দেড়শ টাকা! আর মাঝারি আকারের ডাবের দাম হাঁকা হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। অবশ্য বড়গুলোর মধ্যে আকারে ছোট হলে কখনো দয়ার নজরেও তাকান বিক্রেতারা। দাম কিছুটা কমিয়ে ১৩০ টাকায় কেনারও সুযোগ মিলতে পারে।
এত দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতারা কী বলছেন?
লক্ষ্মীবাজারের আনারস ও পেঁপে বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘পেঁপের দামটা আমি নিজেই মানতে পারতেছি না। দুইদিন আগে ৬০ টাকা কেজি কিনলাম, আর প্রথম রোজায় কিনতে হইলো ১৩০ টাকা। আড়তে কোনো প্রশ্ন করা যায় না। কিনতে বাধ্য আমরা।’
কেন এত দাম- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেরাও জানি না কেন এত দাম। দেখবেন কয়দিন পর কমবে। কে কোন জায়গা থেকে কলকাঠি নাড়তেছে আমরা বলতে পারি না।’
অবশ্য কেনার পরে লাভ কিছুটা বেশি করার পেছনে তার যুক্তি হলো- শ্যামবাজার থেকে ভ্যানে মালামাল নিয়ে আসতে এতদিন ১০০ টাকা খরচ হলেও মঙ্গলবার পাক্কা তিনশ টাকা দিতে হয়েছে। এছাড়া রাস্তায় বিক্রি করায় চাঁদার টাকাও হিসেবে রাখতে হচ্ছে শহিদুল ইসলামকে।
আনারসের দাম নিয়ে এই বিক্রেতা বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় কিনতে পারছি। আজকে নিলো ৬০ টাকা। আপনি (সাংবাদিক) বলেন কত টাকা কইরা বেচমু?’
বেশি দাম শুনে অনেকে মুখ ঘুরিয়ে চলে গেলেও কেউ কেউ অবশ্য এই দামেই আনাসর-পেঁপে কিনছেন। মধ্য বয়স্ক একজন লোক ইফতার অনুষ্ঠানের জন্য ৩০টি আনারস কিনেছেন ৮০ টাকা দরে।
দাম নিয়ে প্রশ্ন করতে এই পথচারী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আনারসের সিজন এখনো শুরু হয়নি, এই কারণে দাম বেশি। কিন্তু আমরা যদি রুচি কমাতে পারি এই আনারস আরও কম দামে বেচতে এরা বাধ্য হবে। কিন্তু পেঁপের যে দাম শুনলাম এটা পুরো অস্বাভাবিক। তারপরও তো কেউ কেউ কিনতেছি। এজন্য কারও দোষ দেব না। আমাদের চাহিদা কমালেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’
ডাবের দাম চড়া কেন এমন প্রশ্নের জবাবে বিক্রেতা মামুনের অনেক যুক্তি। বললেন, ডাব আগের মতো ফলন নেই। যা লাগে তার চেয়ে বাজারে পাওয়া যায় কম। এই কারণে আড়তদাররা পরিস্থিতি বুঝে দাম বেশি রাখছেন।
তাই বলে এক ডাবের দাম দেড়শ টাকা- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আড়তে বড় একশ ডাবের দাম ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। মাঝারি আকারের ডাব সাত থেকে আট হাজার টাকা দিয়ে কিনতে হয়। মাঝেমধ্যে পানি থাকে না এমন ডাবও পাওয়া যায়। নিজের খরচ, রাস্তায় খরচ তো আছেই।’
ভোলা, বরিশাল, নোয়াখালী, বাগেরহাট এসব এলাকা থেকে বেশি ডাব আসে এমনটা জানিয়ে এই বিক্রেতা বলেন, গরমে ডাবের টান বেশি থাকে। তাই সামনে দাম আরও বাড়বে।
তবে দাম বেশি হওয়ার কারণে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ ডাব কিনতে চায় না বলে আক্ষেপ জানালেন এই বিক্রেতা।
সেগুনবাগিচার বারডেম-২ হাসপাতালের উল্টো পাশের ডাব বিক্রেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে ডাব ১০০ টাকার নিচে পাওয়া কঠিন। এখন আরও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। বিক্রিও বেশি দামে করতেছি। দাম বেশি হওয়ায় আগে যারা একসঙ্গে বেশি কিনতেন, তারাও এখন একটা দুইটা করে নেন।’
বিইউ/জেবি