সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘নিয়ন্ত্রণহীন’ বাজারে দেশি ফলও নাগালের বাইরে

কাজী রফিক
প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০২৪, ০২:১৬ পিএম

শেয়ার করুন:

‘নিয়ন্ত্রণহীন’ বাজারে দেশি ফলও নাগালের বাইরে

নির্মাণ শ্রমিক মো. সিরাজ। তার আয়টা হিসাব করা। কাজ থাকলে টাকা পান। কাজ না থাকলে টাকা পান না। এভাবেই চলে তার সংসার। পবিত্র রমজান শুরু হওয়ায় নিয়মিত বাজার তালিকার সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে ইফতার। সাধারণত ইফতার আয়োজন ফলমূলসহ নানা পদের খাবার থাকে। সিরাজও চান ইফতারে যেন ফল থাকে৷ কিন্তু বাজারে ফলের যে চড়া দাম হয়তো তার এমন ইচ্ছে অপূর্ণ থেকে যাবে।

মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় ঢাকা মেইলের সঙ্গে প্রথম রোজার সকালে আলাপকালে এমনটাই জানান এই নির্মাণ শ্রমিকের।


বিজ্ঞাপন


কাজে যাওয়ার সময় মো. সিরাজ বলেন, 'সব জিনিসের যে দাম তাতে কলা কেনার অবস্থাও নাই। ফল আমগো মতো মানুষের জন্য না।'

সিরাজের এমন বক্তব্যের সত্যতা মিলেছে রাজধানীর বাজারগুলোতে। বাজারে প্রতিটি ফল নিয়ন্ত্রণহীন। বিদেশি ফলের দাম শুনলে চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা হয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানিতে চড়া শুল্ক এবং ডলার সংকটে এলসি জটিলতা থাকায় বিদেশি ফলের দাম এতো চড়া।

তাদের দাবি, খেজুরসহ অন্যান্য ফলকে বিলাসী তালিকায় ফেলে উচ্চ শুল্ক আরোপ করায় এর দাম বেড়ে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে।

শুধু বিদেশি ফলই নয়, বাজারে যেসব দেশি ফল পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর দামও নাগালের বাইরে। এখন সেই ফলও অনেকটা বিলাসী পণ্যে রূপ নিয়েছে। নিম্নবিত্ত ছাড়া মধ্যবিত্তদেরও নাগারের বাইরে চলে গেছে দেশি ফল।


বিজ্ঞাপন


fruit-1বাজারে যেসব দেশীয় ফল পাওয়া যাচ্ছে তার মধ্যে আছে বরই। যা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে। পেয়ারার কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকা।

পেঁপের কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। আনারসের পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা দরে।

দেশীয় ফলের মধ্যে সফেদা পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। তুলনামূলক ভারী এই ফলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়।

ইফতারের অবিচ্ছেদ্য অংশ শরবত৷ আর সেই শরবতে বেলের চাহিদা থাকে। চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দাম বেড়েছে বেলেরও। প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে৷

মৌসুম না হলেও বাজারে আগেভাগে দেখা মিলেছে কাঁচা আমের। কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা দরে৷

বাজারে কলার দাম দেখলেও আঁতকে উঠতে হচ্ছে নিম্নআয়ের মানুষকে। এক সপ্তাহ আগেও ১০০ টাকা ডজন ছিলো সবরি কলার। রোজা উপলক্ষে ডজন প্রতি এই কলার দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। ডজন প্রতি ১০ টাকা বেড়েছে নেপালি সাগর কলার দামও।

ফল বিক্রেতা আবুল কালামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'মোকামে দাম বেশি। আমরা তো কিনে নিয়ে আসি। মোকামে দাম বাড়লে আমাদের কাছে বাড়ে।'

ঢাকা উদ্যান বাজারের এই ফল বিক্রেতা জানান, রমজানে চাহিদা বেশি, এমন সকল ফলের দাম এখন চড়া।

fruit-2

এক সপ্তাহ আগেও ১৮০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া কমলা রোজার আগের দিন থেকেই বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে৷ মানভেদে এই কমলা বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা দরেও।

জাতভেদে আপেল বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি দরে। আনারের কেজি ৩৮০ টাকা। গত সপ্তাহে ২৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া সবুজ আঙুর সোমবার থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে৷

মৌসুমের আগে বাজারে এসেছে তরমুজ। রোজায় চাহিদার তুঙ্গে থাকা এই দেশীয় ফলের দামও আকাশছোঁয়া। তরমুজ পিস হিসেবে বিক্রি হওয়ার নিয়ম থাকলেও তা বিক্রি হচ্ছে কেজি হিসেবে। প্রতি কেজির দাম ৮০ টাকা। সে হিসেবে ছোট আকারের একেকটি তরমুজের দাম ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদীয়া হাউজিং এলাকায় এ দামে তরমুজ বিক্রি হতে দেখা গেছে।

রাজিব নামে এক রিকশাচালক ঢাকা মেইলকে বলেন, 'তরমুজ ক্যান, সব ফলের দাম এখন বেশি। বিশ্বাস করেন, ফল কেনার চিন্তাও করি না। খাইয়া আগে বাইচা থাকি। আমগো ফল খাওয়া লাগব না।' বেড়েছে ডাবের দামও। আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পিস হিসেবে।

কারই/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর