সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

নওগাঁয় মাদরাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৩ মে ২০২৩, ১২:০৭ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img
অভিযুক্ত শিক্ষক হারুনুর রশিদ হারুন

নওগাঁর রাণীনগরে এক মাদরাসার শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি অভিযোগ উঠেছে।

রোববার (২১ মে) মাদরাসাচলাকালে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা। এ ঘটনায় ওই শিক্ষক বিরুদ্ধে সোমবার (২২ মে) মাদরাসার কয়েকজন ছাত্রী ও অভিভাবক মাদরাসা সুপারের কাছে মৌখিক অভিযোগও করেন।


বিজ্ঞাপন


অভিযুক্ত ওই মাদরাসা শিক্ষকের নাম হারুনুর রশিদ হারুন। তিনি উপজেলা সদরের আল-আমিন দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা) হিসেবে কর্মরত আছে।

জানা যায়, ওই শিক্ষক মাদরাসায় বেশ কিছুদিন ধরেই ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করে আসছে। সম্প্রতি গত রোববার পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর শরীর নিয়ে অশ্লীল কথাবার্তাসহ বিভিন্নভাবে তাকে যৌন হয়রানি করলে ঘটনাটি শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকায় জানাজানি হয়। এরপর শুরু হয় ওই শিক্ষককে নিয়ে নানা সমালোচনা। এমনকি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা। এছাড়াও বিভিন্ন সময় ছাত্রীদের জড়িয়ে ধরা, ছাত্রীদের স্পর্শকাতর স্থান নিয়ে অশ্লীল কথাবার্তা বলা, ছাত্রীরা দুষ্টামি করলে ছাত্র দ্বারা ছাত্রীদের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেওয়ানোর জন্য বলা হয়।

যৌন হয়রানির শিকার ওই ছাত্রী জানায়, রোববার ক্লাসে এক ছাত্র আমাকে খুব বিরক্ত করছিল। এ সময় আমি তাকে বার বার নিষেধ করার পরেও সে বিরক্ত করা ছাড়ছিল না। তাই আমি তার এক হাত মুচরে ধরি। এ সময় হারুন স্যার এসে আমাকে বকাঝকা শুরু করেন। একপর্যায়ে ওই শিক্ষক আমার শরীরের স্পর্শকাতর স্থান নিয়ে অশ্লীল কথা বলে এবং ওই ছাত্রকে আমার স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিতে বলেন। পরে আমি বিষয়টি মাদরাসার আয়া ও ম্যাডামকে জানাই। এবং মাদরাসা থেকে বাড়ি গিয়ে পরিবারকে জানাই। এরপর ঘটনার সুষ্ট বিচার চেয়ে সোমবার মাদরাসার সুপারকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি।

আরেক ছাত্রী জানায়, শিক্ষক হারুন স্যার বেশ কিছুদিন থেকে আমাকেসহ মাদরাসার অনেক ছাত্রীদের অশ্লীল কথাবার্তা বলা, জড়িয়ে ধরা, শরীরের বিভিন্ন ষ্পর্শকাতর স্থান নিয়ে ব্যাঙ্গ করে মন্তব্য করাসহ নানাভাবে যৌন হয়রানি করেন। যে কারণে আমরা তার ক্লাশ করতে খুব ভয় পাই। এতদিন আমরা লজ্জায় বিষয়গুলো কাউকে বলতে পারিনি। রোববার আমার এক সহপাঠীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটলে আমরা বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছি। এরপর বিষয়টি শিক্ষকসহ অভিভাবকদের জানিয়েছি। আমরা ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।


বিজ্ঞাপন


যৌন হয়রানির স্বীকার ওই ছাত্রীর মা বলেন, আমার মেয়ে মাদরাসা থেকে বাড়িতে এসে বিষয়টি আমাকে জানায়। লোক লজ্জার ভয়ে আমরা কাউকে বলতে চাইনি। কিন্তু ঘটনাটি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। একজন শিক্ষক যদি ছাত্রীদের সঙ্গে এমন অচরণ করেন তাহলে শিক্ষার্থীরা কি শিখবে। মাদরাসায় এসব ঘটনা বন্ধ করাসহ ওই শিক্ষকের ব্যবস্থা হওয়া দরকার।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক হারুনুর রশিদ হারুন হারুন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কোনো ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করিনি। আমি প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছি। তার দাবি-শিক্ষার্থীদের স্নেহের মাধ্যমে শাসন করেছি। ওই ছাত্রী আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছে সেটি সঠিক নয়।

তিনি আরও বলেন, ওই মেয়েটির মাথায় সমস্যা আছে। আর তার কথা শুনে আমার প্রতিপক্ষ আমাকে ফাঁসানো চেষ্টা করছে।

এ বিষয়ে মাদরাসার সুপার শরিফ উদ্দীন মাজহারি বলেন, মাদরাসার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীসহ কয়েকজন ছাত্রী এবং অভিভাবক সহকারী শিক্ষক হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ বেশকিছু অভিযোগ মৌখিকভাবে দিয়েছেন। বিষয়টি মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটিসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্তকর্তা রুহুল আমিন বলেন, আল-আমিন মাদরাসায় ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করার বিষয়টি আমি শুনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন