সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

মাদক কারবারির ৫শ বোতল ফেনসিডিল লুটে নিল দুর্বৃত্তরা

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৪ মার্চ ২০২৩, ০৩:৪৬ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্তে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাদক কারবারি ও চোরাচালানিরা। পুলিশ, বিজিবিসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারি থাকা স্বত্ত্বেও বিস্তীর্ণ ইছামতির জলসীমা পেরিয়ে অবৈধপথে ভারত থেকে মাদকের চালান পারাপার কোনোভাবেই যেন থামছে না।

বৃহষ্পতিবার (২ মার্চ) রাত দেড়টার দিকে নদী সাঁতরে ভারত থেকে আনা আসাদুল নামের এক মাদক কারবারির ৫শ বোতল ফেনসিডিলের চালান বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ইছামতি নদীর চরশ্রীপুর বেড়িবাঁধের ওপর পৌঁছানোর পর তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো বাঁশি বাজিয়ে লুটে নিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত।


বিজ্ঞাপন


মাদক কারবারি আসাদুল ইসলাম আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের সদস্য দেবহাটার ধোপাডাঙ্গা গ্রামের মিজানুর রহমান ওরফে মিজান ডাকাতের ছেলে।

জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকা দিয়ে রমরমা মাদকের কারবার চালিয়ে আসছে আসাদুল সিন্ডিকেট। আর প্রশাসন নিয়ন্ত্রণসহ চোরাকারবারিদের সঙ্গে আর্থিক চুক্তিবদ্ধ ও নদী সাঁতরে ফেনসিডিলের চালান বাংলাদেশে আনার দায়িত্বে রয়েছে চরশ্রীপুরের হাচিমের ছেলে শাহিন, জাহাপুর গ্রামের সুকুমার ওরফে বাচার ছেলে নব মুসলিম তারেক, ঘলঘলিয়ার খালেকুল ও কোমরপুরের আনারুলের ছেলে আলমগীরসহ একদল মাদক ও চোরাকারবারি।

এদিকে, মাদক কারবারি থেকে ফেনসিডিলের চালান লুটের ঘটনাটি যেন রীতিমতো ‘চোরের ওপর বাটপারি’। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এ নিয়ে উপজেলাজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সীমান্তের বেশ কয়েকটি চোরাকারারি সিন্ডিকেটের একাধিক সদস্যের দাবি, ভারতীয় মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারিরা অনেক সময় কেবলমাত্র বিশ্বস্ততার ভিত্তিতে সম্পূর্ণ বাকিতে এসব ফেনসিডিলের চালান বাংলাদেশে পাঠায়।

জানা গেছে, বেচাকেনার পর মাদকের মূল্য ভারতীয়দের পরিশোধসহ লভ্যংশের টাকা দুদেশের সিন্ডিকেট ভাগাভাগি করে নেয়। ফেনসিডিলের এই চালানটির বিপুল অর্থ লোপাটের জন্য মাদক কারবারি আসাদুল সিন্ডিকেট নিজেরাই লুটের নাটকটি সাঁজিয়ে ভারতীয় সিন্ডিকেটের সামনে মঞ্চস্থ করেছে। ফেনসিডিলগুলো কাছাকাছি কোথাও তারা লুকিয়ে রেখেছে। আসাদুল ও শাহিনকে আইনের আওতায় নেওয়া হলে লুট হওয়া ফেনসিডিলের চালানটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জব্দ করতে সক্ষম হবে বলেও জানিয়েছে তারা।


বিজ্ঞাপন


এদিকে ফেনসিডিল লুটের পর বৃহষ্পতিবার দুপুরে মাদক কারবারি আসাদুল সিন্ডিকেটের সদস্যদের উপস্থিতিতে চালানটি নদী পারাপারে নিয়োজিতদের ধরে নিয়ে কয়েক দফায় নির্যাতনসহ একটি পালসার মোটরসাইকেল কেড়ে নেওয়া এবং জোরপূর্বক তিনটি ননজুডিশিয়াল খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার অভিযোগ মিলেছে দেবহাটা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুব আলম খোকনের বিরুদ্ধে।

ভারত থেকে ফেনসিডিলের চালানটি নদী পারাপারের দায়িত্বে থাকা আলমগীর বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা আর্থিক চুক্তিতে রাতের আঁধারে ভারত থেকে বিভিন্ন মালামালের চালান নদী সাঁতরে বাংলাদেশে আনার কাজ করেন। এসব মালামালের চালান দেশে পৌঁছানোর পর চরশ্রীপুরের শাহিন তাদের শ্রমমূল্য পরিশোধ করে। কয়েকদিন আগে শাহিনের কথামতো তিনি এবং তারেক অবৈধপথে ভারতে যান। বুধবার রাত ৮টার দিকে ভারতের শাঁকচুড়োর রিয়াজুল, মোমেন ও বারাসাতের আকরাম নামের তিন চোরাকারবারি বস্তাভর্তি মালামালের চালানটি বাংলাদেশে পার করে শাহিনের মাধ্যমে মাদক কারবারি আসাদুলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাদের হাতে দেন।

তিনি বলেন, বৃহষ্পতিবার রাত দেড়টার দিকে তারা নদী পেরিয়ে ওই চালান নিয়ে সীমান্তের চরশ্রীপুর স্লুইজ গেইট সংলগ্ন বেড়িবাঁধে পৌঁছান। সেখানে তাদের সঙ্গে মিলিত হয় সিন্ডিকেট সদস্য খালেকুল। এরপর তারা ফেনসিডিল নিয়ে বেড়িবাঁধ থেকে নেমে রাস্তায় পৌছাতেই একদল দুর্বৃত্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মতো টর্চলাইট জালিয়ে এবং বাঁশি বাজিয়ে তাদের ধাওয়া করে। একপর্যায়ে তারা বস্তাভর্তি ফেনসিডিলের চালান ফেলে পালিয়ে যান।

আলমগীর আরও জানায়, চালানটি ছিনতাইয়ের পর বৃহষ্পতিবার দুপুরে মাদক কারবারি আসাদুলের সাঙ্গপাঙ্গরা তাদের ধরে নিয়ে পারুলিয়ায় সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুব আলম খোকনের সামনে হাজির করে নির্যাতন করে। পরে তাদের একটি পালসার মোটরসাইকেল কেড়ে নিয়ে জোরপূর্বক কয়েকটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেয় মাহবুব আলম খোকন নামের সাবেক ওই জনপ্রতিনিধি। সবশেষে কয়েকদিনের মধ্যে ফেনসিডিলের মূল্য বাবদ ৬ লাখ টাকা তাদের হাতে তুলে দেওয়ার শর্তে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় উল্লেখ করে আলমগীর বলেন, স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়ার পর থেকে ওই চক্রটি তাদেরকে প্রতিনিয়ত প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে মোটা টাকা চাঁদা দাবি করে হুমকি দিচ্ছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে শুক্রবার রাতে মুঠোফোনে উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুব আলম খোকনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছিনতাই করা ফেনসিডিলগুলো উদ্ধারের জন্য কয়েকজন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে তারা চালান পারাপারে নিয়োজিতদের আমার কাছে ধরে আনে। একপর্যায়ে ওই শ্রমিকদের একটি পালসার মোটরসাইলে আটক রেখে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নিই।

তাদের কোনো নির্যাতন করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরে আনারুল নামের অপর আরেক চোরাকারবারির মধ্যস্থতায় আটকে রাখা মোটরসাইকেল ও স্ট্যাম্প ফেরত দিয়ে দিয়েছি।

এ ব্যাপারে দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবায়দুল্যাহ বলেন, ফেনসিডিল ছিনতাইয়ের ঘটনাটি শুনেছি। ইতোমধ্যেই পুলিশ সদস্যরা ঘটনাটি তদন্তে নেমেছে। তাছাড়া নির্যাতন, মোটরসাইকেল আটকে জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে সই করিয়ে নেওয়া বা চাঁদা দাবির ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন