নীলফামারীর ডিমলায় সরকারি প্রণোদনার সরিষাবীজ বপন করে কপাল পুড়েছে শতাধিক বিঘা জমির কৃষকের। তারা বলছেন, নিম্নমানের বীজ হওয়ায় অনেক ক্ষেতে গাছ বড় হলেও দানা নেই। কিছু কিছু ক্ষেতে চারাই হয়নি।
তবে কৃষি বিভাগের দাবি, বিরূপ আবহাওয়া ও সঠিক সময়ে বীজ বপন না করার কারণে এই অবস্থা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার ডিমলা উপজেলায় ৯৭৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কৃষকদের তেলজাতীয় ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারি প্রণোদনা হিসেবে উপজেলার ১ হাজার ৪৫০ জনকে সরিষা বীজ দেওয়া হয়। প্রণোদনার এসব বীজ উপজেলার সহস্রাধিক বিঘা জমিতে বপন করা হয়। এর মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ কৃষকের ১০০ থেকে ১২০ বিঘা জমির সরিষা ক্ষেতে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে যেসব খেতে প্রণোদনার সরিষা বীজ বপন করা হয়েছে এর অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু জমিতে গাছ দেখা গেলেও ফুল নেই। কোনো কোনো জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস ছাড়া সরিষার গাছ চোখেও পড়েনি।
খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের কামারপাড়া এলাকার কৃষক কামিনী রায় বলেন, আমার পাশের জমির চাষি বাজার থেকে বীজ কিনে বপন করেছেন। সেই জমিতে চারা গজিয়ে তরতর করে সরিষার গাছ বেড়ে উঠছে। গাছে দানাও বেঁধেছে। কিন্তু আমার জমিতে প্রণোদনার বীজ লাগিয়ে ফলন তো দূরের কথা, বেশিরভাগ বীজই গজায়নি।
বিজ্ঞাপন
দোহলপাড়া এলাকার জগদীশ চন্দ্র বলেন, এ সময় সরিষা ঘরে তোলার কথা। অথচ তাদের জমিগুলো পতিত পড়ে আছে। এই অবস্থায় কী করবো, তা ভেবে পাচ্ছি না। একদিকে ফলন থেকে বঞ্চিত অন্যদিকে জমি প্রস্তুত ও চাষের শুরুতে বেশকিছু টাকা খরচ হয়ে গেছে আমাদের।
কামার পাড়া এলাকার কৃষক শামসুল হক বলেন, কৃষি অফিস থেকে আমাদের এই বীজ দেওয়া হয়েছে। এই বীজে পরবর্তী বীজ তৈরি করার জন্য লাগিয়ে একটি গাছও ওঠেনি। আমার জমিটা পড়ে থাকবে, আমি খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এ বছর আমাদের কারও সরিষা হবে না, আমরা ক্ষতিপূরণ চাই।
একই এলাকার জয়ন্তী বালা বলেন, প্রণোদনার বীজে কপাল পুড়েছে। দুই বিঘা জমিতে সরিষার বীজ বপন করেছিলাম, কোনো গাছ হয়নি। এখন সরিষা ক্ষেতে সেচ দিয়ে বোরো ধান রোপণের জন্য প্রস্তুত করতে হচ্ছে।
কৃষক আবুল কালাম বলেন, প্রণোদনার বীজ কোনো কাজে আসছে না। ২ বিঘা জমিতে সরিষার বীজ ফেলেছিলাম কয়েকটা চারা বাদে কোন গাছ হয়নি। আমি গরিব মানুষ এর ক্ষতিপূরণ চাই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী বলেন, বীজের মান ভালো ছিল। আর এ সমস্যা তো পুরো উপজেলায় না। খোঁজখবর নিয়ে জানতে পেরেছি, দোহল এলাকার কিছু জমিতে সমস্যা হয়েছে। অতিরিক্ত শীতের পাশাপাশি চাষিরা হয়তো সঠিক পরিচর্যা ও সময়মতো বীজ বপন করেননি। এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
টিবি