মামলা করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মানবাধিকার কর্মী মওদুদ আবদুলাহ শুভ্র। মামলার পর বাদী পক্ষের আসামি ও তাদের দোসরদের দেওয়া হুমকির কারণে শুভ্র ও তার পরিবারের জীবন শঙ্কায় কাটছে।
মওদুদ আবদুলাহ শুভ্র অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল ওয়াদুদ ভুইয়া এবং অবসর প্রাপ্ত শিক্ষিকা হালিমা বানুর ছেলে। তিনি পেশায় একজন শিক্ষানবীশ আইনজীবী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং মানবধিকার কর্মী। নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পুরাতন চৌধুরীর পাড়ার ইসমপুর সড়কে তিনি বসবাস করেন।
বিজ্ঞাপন
রোববার (১৩ এপ্রিল) সকালে তিনি বলেন, গত বছরের ৩ আগস্ট ছাত্র জনতার তীব্র আন্দোলনের ফলে আওয়ামী সরকারের পতনের দুদিন আগে আমি টিক্কচর ব্রিজ অতিক্রম করে শহরের দিকে আসছিলাম। এসময় বিগত আওয়ামী লীগের ১৩/১৪ জন সন্ত্রাসী ৪ থেকে ৫টি মোটরসাইকেল ও একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাতে এসে আমার অটোরিকশার গতিরোধ করে। এসময় সন্ত্রাসীরা আমার কাছে দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমার সঙ্গে থাকা মোবাইল ও টাকা-পয়সা এবং ক্যামেরা, নগদ টাকা, মোবাইল ফোন সিমসহ ছিনিয়ে নেয়। তখন আমি তাদেরকে বলি দশ লাখ টাকা চাঁদা কেন দিতে হবে? তখন তাদের মধ্যে কয়েকজন বলে, কুমিল্লার এই শহরে কাজ করলে আমাদেরকে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি করলে তারা আমাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। আমি অটোরিকশা চালকের সাহায্যে আমার বন্ধু কুমিল্লা জজকোর্টের আইন পেশায় নিয়োজিত মোহাম্মদ জিল্লুরসহ অন্যান্য বন্ধুদের ফোন করি।
ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মধ্যে পতনের দু’দিন আগে ৩ আগস্ট থেকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকার কারণে গত বছরের ১৯ আগস্ট দ্রুত বিচার আইনে অজ্ঞাতনামা ৩ পুরুষ ও একজন নারীকে আসামি করে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরসহ মামলা দায়ের করি। যা কুমিল্লা জেলা পিবিআইয়ের তদন্তনাধীন রয়েছে। মামলার ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় কুমিল্লা জেলা পিবিআইয়ের ইন্সপেক্টর মোসলেহ উদ্দিন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চূড়ান্ত প্রতিবেদন বিজ্ঞ আদালতে দাখিলের পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া কোতোয়ালি মডেল থানায় চাঁদাবাজি, চুরি ও ছিনতাইয়ের কারণে মামলা দায়ের করি। এরই সঙ্গে আমাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকি দেওয়ায় দ্রুত বিচার আইন আদালতে মামলা করি।
তিনি বলেন, এ অবস্থায় আমি এবং আমার অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক বাবা ও মা এবং আমার স্ত্রী সন্তান নিয়ে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে জীবন কাটাচ্ছি। তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে ফাঁসানোর হুমকি দিয়েছে। তারা আমার হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো ও ফেসবুক হ্যাক করেছে। আমি এর জন্য জেলা ডিবি ও কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ করেছি।
তিনি আরও জানান, মামলা করে তিনি আরও ফেঁসে গেছেন। এজহার নামীয় আসামিদের মধ্যে মাত্র একজন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। বাকী আসামিরা বিগত ৮ মাসেও ধরা না পরেনি। এজহার ভুক্ত আসামিরা অজ্ঞাত স্থান থেকে এবং বিবাদী পক্ষের আত্মীয় স্বজন এবং স্যার গ্রুপের সদস্যরা তাকে ও পরিবারকে হত্যা করে লাশ গেমতী নদীতে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এ কারণে এখন শুভ্র ও তার পরিবার সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকি নিয়ে জীবন কাটাতে হচ্ছে। তার স্ত্রীকে এসিড মেরে মুখ ঝলসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এতে তিনি কলেজে যাওয়া আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। এ কারণে তিনি শনিবার (১২ এপ্রিল) জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজির আহমেদ খাঁন বরাবর পরিবার ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে লিখিত দরখাস্ত প্রদান করেছেন। এছাড়া রোববার (১৩ এপ্রিল) সকালে কোতোয়ালি মডেল থানায় জিডি করেছেন।
বিজ্ঞাপন
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মহিনুল ইসলাম বলেন, পুলিশ এই মামলাটির আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা করছে। কিন্তু এজহার নামীয় আসামিরা দ্রুত অবস্থান পাল্টানোর কারণে তাদেরকে গ্রেফতার করতে সমস্যা হচ্ছে।
কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজির আহমেদ খাঁন বলেন, আমি মওদুদ আবদুল্লাহ শুভ্রকে বলেছি, কোনো সমস্য হলে যেকোনো সময় আমাকে ফোন দিবেন। আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
প্রতিনিধি/টিবি