বগুড়ার সোনাতলায় কলেজছাত্র আব্দুর রহমান রিশান তৈরি করেছেন প্রাইভেটকার। সেই গাড়ি নিয়ে তিনি নিয়মিত কলেজে আসা-যাওয়া করেন। এ ঘটনায় এলাকায় আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন তার তৈরি প্রাইভেটকার দেখতে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা।
এই তরুণ নিজের তৈরি প্রাইভেটকারের নাম রেখেছেন ‘লাভার প্রেস'। তিনি দীর্ঘ ১৮ মাস অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে তৈরি করেছেন এ প্রাইভেটকার। কারটি তৈরি করতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। পেট্রোলচালিত এ প্রাইভেট কারটি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে। ১ লিটার পেট্রোলে চলবে ২৫ মাইল।
বিজ্ঞাপন
তবে এখনও গাড়িটির আরও কিছু কাজ বাকি আছে। যার জন্য প্রয়োজন ৮০ হাজার টাকা।
রিশান জানান, প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় হলে অল্পদিনের ভেতর গাড়ির দরজার গ্লাস, হেডলাইট, ব্যাক লাইট এবং ভেতরের অবশিষ্ট থাকা কিছু কাজ করে গাড়িটিকে স্বয়ংসম্পন্নরূপ দেওয়া যাবে।
করোনায় কলেজ বন্ধ থাকায় সময়কে কাজে লাগান রিশান। প্রায় ৫ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৩ ফুট প্রস্থের ১০০ সিসি বিশিষ্ট ইঞ্জিনের ২ সিটের গাড়িটি তৈরি করেছেন তিনি। নিজের জমানো টাকাসহ আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে নেওয়া টাকায় কারটি তৈরি করেছেন।
বিজ্ঞাপন
রিশান বলেন, ‘মোটরসাইকেল কেনার কথা বলে বাবার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে গাড়ি তৈরির কাজ শুরু করি। বগুড়ার ভাংরিপট্টি থেকে টায়ার, রিং, স্টেয়ারিংসহ যাবতীয় যন্ত্রাংশ কিনেছি। চীন থেকে ইঞ্জিন এবং গিয়ারবক্স নিয়ে এসেছি। এছাড়া অ্যালুমিনিয়াম শিট, স্টিল শিট, কার্বন ফাইবার কিনি। গাড়িতে দুটো শিট, স্টেয়ারিং হুইল, গান শোনার জন্য স্পিকার, কুলিংফ্যান রয়েছে। এছাড়া গাড়িটি চাবির পাশাপাশি সেলফ সিস্টেমেও চালু করা যায়। কারটি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে চলে। এতে মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন ব্যবহার করেছি। পরবর্তীতে এই ইঞ্জিন পরিবর্তন করবো।’
কারটির বিশেষত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কারটি সাসপেনশনের ওপর নির্ভর করে বানানো হয়েছে। কারটির সাসপেনশন রেয়ার। যে কারণে গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ সব বজায় থাকে। গাড়িটি এবিএস সিস্টেমের ব্রেক রয়েছে। এটি তিন চাকার ওপর দিয়েও চলতে পারবে। এছাড়া কারটির সামনে যে চেসিস সিস্টেম দিয়েছি, সেটির কারণে পাঁচ টন সমান ধাক্কা সহ্য করতে সক্ষম কারটি। আর এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য গাড়ির ইঞ্জিন পেছনে।’
রিশানের জন্ম বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার পাকুল্লা ইউনিয়নের পদ্মপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম ইউনুছ আলী ও মায়ের নাম ফরিদা বেগম। রিশান সৈয়দ আহম্মদ কলেজের বিএম শাখার দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
রিশানের মা ফরিদা বেগম জানান, তার একমাত্র ছেলে রিশান। সে তার নিজস্ব উদ্ভাবনী চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে কারটি তৈরি করেছে। ছেলের এ ধরনের কাজে তিনি খুব খুশি। কিন্তু ছেলের এই কার বানানোর টাকা জোগান দিতে তিনি ঋণগ্রস্ত হয়েছেন।
রিশানের বাবা ইউনুস মিয়া বলেন, ‘রিশান মোটরসাইকেল কেনার জন্য দুই লাখ টাকা নিয়েছিল। এরপর ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে রিশানকে টাকা দেই। পরে জানতে পারি মোটরসাইকেল না কিনে সে গাড়ি তৈরি শুরু করেছে। রিশানের গাড়ি তৈরির জন্য আমাকে ব্যাংক লোন, জমি বন্ধক এবং গরু বিক্রি করতে হয়েছে। গাড়ি তৈরির বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রিশান গাড়িটি তৈরি করেই ছাড়ল। আমি চাই আমার ছেলে নিশান একজন ভালো ইঞ্জিনিয়ার হোক।’
>>আরও পড়ুন : হেমন্তেও সৌন্দর্য বিলাচ্ছে যমুনা পাড়ের কাশফুল
স্থানীয় পাকুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান একেএম লতিফুল বারী টিম জানান, লোকমুখে শুনে তিনিও কারটি দেখেছেন। ছেলেটির কারটির বডি তৈরির বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। তারপরও সে বিভিন্ন উপায়ে কারটি তৈরি করে নিজেই চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টি আমার কাছে খুব আনন্দের। আমি তার মঙ্গল কামনা করি।
সোনাতলা উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘রিশানের এমন উদ্ভাবনী দক্ষতায় আমরা গর্বিত। ও এই সোনাতলার গর্ব। প্রায় এক বছর আগে রিশানের এই প্রচেষ্টা স্বচক্ষে দেখে এসেছি। তার এ ধরনের প্রচেষ্টা আরও অগ্রগামী করতে বিশেষ করে সরকারের যথাযথ দফতরকে জানিয়ে সহযোগিতা দেওয়ার ক্ষেত্রে চেষ্টা করব।’
এ ধরনের উদ্ভাবনী কাজে আরও বেশি করে মনোনিবেশ করার আশাবাদ ব্যক্ত করে রিশান বলেন, ‘সরকারি সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতে আমি আরও ভাল কিছু তৈরি করতে পারব। এই উদ্ভাবনী কাজটি করতে আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। বিশেষ করে টাকার যোগান ছিল কষ্টসাধ্য। তারপরও বিভিন্নজনের কাছে থেকে সহযোগিতা নিয়ে কারটি তৈরি করা হয়েছে। এখন এই কারটি দেখতে উৎসুক জনতা ভিড় করে। সবাই জানতে চায় কী করে কারটি তৈরি করা হয়েছে। নানা প্রশ্ন থাকে উৎসুক জনতার।
প্রতিনিধি/এনএম/এইচই