রোববার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

মিরসরাইয়ে বিএনপির দু’গ্রুপের সংঘর্ষে পথচারী নিহত, আহত ৩০

জেলা প্রতিনিধি, মিরসরাই
প্রকাশিত: ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৫:১০ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা ও দুই পৌরসভার কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

বুধবার (২৬ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে বারইয়ারহাট পৌর বাজারে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।


বিজ্ঞাপন


এসময় জাবেদ (৪৫) নামে এক পথচারী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো প্রায় ৩০ জন।

নিহত ও আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

নিহত জাবেদ চট্টগ্রাম নগরীর বায়োজিদ থানার বাংলাবাজারের নীলগিরি আবাসিক এলাকার জাহাঙ্গীর ও জাহেদা বেগমের ছেলে। তিনি আরএফএল গ্রুপের এসআর (মার্কেটিং অফিসার) হিসেবে চাকুরি করতেন। 
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আহত ব্যক্তিরা হলেন- সুমন (৩৫) ফজলুল করিম (৪৩), জাহেদুল ইসলাম (৪২), শহিদুল ইসলাম (৫১), ওমর ফারুক (৩৫), দিদার (৩৭), আবু সুফিয়ান (৪০), ফাহিম (২২), এরশাদ (৪০), গোলাম মোর্শেদ (৪০), রাশেদ (৫০), দিদারুল আলম চৌধুরী (৪০), ইলিয়াছ (৫০)। আহত সুমন, গোলাম মোর্শেদ, ইলিয়াস হোসেন ও রাশেদকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহতদের সবাই ধারালো দেশিয় অস্ত্রে জখমপ্রাপ্ত হয়েছেন। সংঘর্ষে আহত ৬ জন বারইয়ারহাট জেনারেল হাসপাতালে এবং আহত ৫ বারইয়ারহাট মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। 


বিজ্ঞাপন


জানা গেছে, গত ২৪ মার্চ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার মিরসরাই উপজেলা, মিরসরাই পৌরসভা ও বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। কমিটি ঘোষণার পরপর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের সমর্থিত পদ বঞ্চিত নেতাকর্মীরা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করে। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) কমিটি বাতিলের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও ঝাড়ু মিছিল ও সমাবেশ করেছে নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের সমর্থিত নেতাকর্মীরা। এদিকে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিএনপির চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক নুরুল আমিন ও আরেক যুগ্ম আহবায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের গ্রুপের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উপজেলা পরিষদ চত্বর ও তার আশপাশের ৫০০ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন।

উল্লেখিত এলাকায় কোনো ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, গণজমায়েত, বিষ্ফোরকদ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র, দেশিয় অস্ত্র বহনসহ একত্রে ৫ জন তার চেয়ে বেশী লোকজন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বুধবার (২৬ মার্চ) বেলা ১২টায় নুরুল আমিন চেয়ারম্যান গ্রুপের উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব গাজী নিজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে সহস্রাধিক নেতাকর্মী ফুল দিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান। এসময় দলীয় বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল দিতে থাকেন। পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে মিছিলসহ বিএনপি নেতাকর্মীরা উপজেলা সদর ত্যাগ করেন। এসময় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বাধা লক্ষ্য করা যায়নি। বিএনপি নেতাকর্মীরা উপজেলা পরিষদ চত্বর ত্যাগ করলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থান নিতে দেখা যায়।

উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আজিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, বুধবার সকাল ১০টায় বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহবায়ক মাঈন উদ্দিন লিটনের বাড়ির সামনে আমাদের নেতাকর্মীদের পথ অবরুদ্ধ করে হামলা ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। বেলা ১২টায় আমরা নেতাকর্মীদের নিয়ে মিছিল সহকারে বারইয়ারহাট পৌর বাজারে প্রবেশ করলে নুরুল আমিন চেয়ারম্যান গ্রুপের লোকজন আমাদের ওপর স্বশস্ত্র হামলা চালায়। এসময় জাবেদ নামে একজন পথচারী তাদের হামলায় ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৯ জন। 

বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির সাবেক আহবায়ক দিদারুল আলম মিয়াজী বলেন, বুধবার সকাল ১১টায় পৌরসভা বিএনপির আহবায়ক মাঈন উদ্দিন লিটনের বাড়ির সামনে বিএনপি নেতা মোজাম্মেল হোসেনসহ আমাদের নেতাকর্মীদের উপর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আজিজুর রহমান চৌধুরী ও মাঈন উদ্দিন লিটনের নেতৃত্বে হামলা করা হয়। স্বাধীনতা দিবসে বারইয়ারহাট ডিগ্রী কলেজের শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পন করার জন্য আমরা নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান করছিলাম। শান্তিরহাট রোডের মুখে তাদের সাথে আমাদের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় হামলায় জাবেদ নামে এক পথচারী নিহত হয়। সংঘর্ষে যুবদল ও ছাত্রদলের সুমন, বাবুল, মিজান, নুর উদ্দিন, আরিফসহ ৮-১০ জন আহত হয়েছেন। 

বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহবায়ক মাঈন উদ্দিন লিটন বলেন, বুধবার সকালে দিদারুল আলম মিয়াজীর নেতৃত্বে স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। এসময় ১০-১৫ জন আহত হয়। হামলার পর দুপুরে তারা আমাদের বাড়িতে গিয়েও ভাঙচুর চালায়। বুধবার বিকেল পর্যন্ত বারইয়ারহাট পৌরবাজারে তারা স্বশস্ত্র অবস্থানে ছিল।

এদিকে বুধবার (২৬ মার্চ) স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, মিরসরাই প্রেস ক্লাব পুস্পস্তবক করেছে। ১৪৪ ধারার আদেশ থাকায় সামাজিক সংগঠন সহ বিভিন্ন সংগঠন ফুল দিতে আসেনি। তবে ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিএনপি নেতা নুরুল আমিন চেয়ারম্যান গ্রæপের গাজী নিজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে সহ¯্রাধিক নেতাকর্মী শহীদ মিনারে ফুল দেয়। এছাড়া নিজামপুর সরকারী কলেজের সামনে শহীদ মিনারে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আবদুল আউয়াল চৌধুরী ও যুগ্ম আহবায়ক সালাহ উদ্দিন সেলিমের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। 

মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক রাজিয়া আফরিন বলেন, জাবেদ নামে একজনকে মৃত অবস্থায়ত হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তার পেটে চুরিকাঘাত করা হয়েছিল। এসময় ১০-১২ জনকে আহত অবস্থায় আনা হয়। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব গাজী নিজাম উদ্দিন বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ১৪৪ ধারা ভেঙে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পন করেছি। ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে ১৪৪ ধারা জারির মতো কোনো পরিস্থিতি আজ ছিল না। প্রশাসন কেন ১৪৪ ধারা জারি করেছে সেটি বোধগম্য নয়।

জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম বলেন, বিএনপির কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে গত ২দিন ধরে উত্তেজনা চলে আসছে। বুধবার সকালে বারইয়ারহাট পৌরবাজারে বিএনপির দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় জাবেদ নামে একজন পথচারী নিহত হয়েছেন। আহত হন আরও ৮-১০ জন। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহফুজা জেরিন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে বিঘœ না ঘটে সেজন্য বুধবার (২৬ মার্চ) সকাল ৮ টা থেকে বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সকাল ৮ টা পর্যন্ত উপজেলা পরিষদ চত্ত¡র ও তার আশপাশের ৫০০ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু আজ (বুধবার) বেলা ১২ টায় বিএনপির একটি গ্রুপের নেতাকর্মীরা ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে প্রবেশ করেছে। মিছিলের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এই বিষয়ে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে কঠোর ভূমিকা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর টহল কার্যক্রম বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে।

প্রতিনিধি/ এজে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


News Hub