২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনার বিচার এখনো শেষ হয়নি। বিচারবঞ্চিত হন নিহতদের স্বজনরা। তবে আহতরা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দেখে যেতে চান। বহুল আলোচিত এই মামলায় গ্রেফতার হয়ে সাড়ে চার বছর কারাবরণ করেন পুলিশের সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান (ঘটনার সময় ডিসি সাউথ ছিলেন)। বিএনপির পুলিশ কর্মকর্তা তকমা লাগিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেনেড হামলার ঘটনাস্থল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে নিরাপত্তায় অবহেলার অভিযোগ আনা হয়।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বিএনপির এক সুধী সমাবেশে সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
খান সাঈদ হাসান বলেন, আমি অবিচারের শিকার। বিনাদোষে কারাভোগ করেছি। আমার জীবন থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাইনি সরকার ১২টি বছর কেড়ে নিয়েছে। এর মধ্যে জীবন বাঁচাতে আট বছরই আমাকে পালিয়ে থাকতে হয়েছে। অথচ গ্রেনেড হামলার বিষয়ে কিছুই জানতাম না। তারপরও আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে চরম হয়রানি করা হয়।
সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেনেড হামলার ঘটনাস্থল ছিল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, যা ইস্ট ডিভিশনে ছিল। আর আমি সাউথ ডিভিশনের ডিসি ছিলাম। তারপরও আমাকে ঘটনাস্থলের নিরাপত্তা প্রদানে অবহেলার অভিযোগ এনে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়। এর আগে আমাকে গ্রেনেড হামলা মামলায় মিথ্যা সাক্ষী দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। যে ঘটনার আমি কিছুই জানি না, সেটাতে কেন সাক্ষী দেব! প্রস্তাবে রাজি না হওয়াতেই আমার ওপর অবিচারের খড়গ নেমে আসে। আমাকে গ্রেফতারে অভিযান শুরু হয়। তখন আমার ভয় ছিল গ্রেফতার হলে আমাকে গুম করে ফেলা হতে পারে। কারণ ওই সময় একের পর এক গুমের ঘটনা ঘটছিল। এজন্য প্রাণ বাঁচাতে আট বছর পালিয়ে বেড়িয়েছি। পরিবার নিয়ে নিদারুণ কষ্ট করেছি।
খান সাঈদ হাসান বলেন, সিআইডির অধিকতর তদন্তকালে আমাকে এবং ডিসি ইস্ট ওবায়দুর রহমানকে মিথ্যা সাক্ষী দিতে প্রস্তাব দেওয়া হয়। আমরা রাজি না হওয়ায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দুই মামলার একটিতে আমাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। একপর্যায়ে আমাদের দুই বছর করে কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। এরপর আমরা ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আমাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়। চার বছর কারাভোগের পর মুক্ত হই। কারাগারেও আমার ওপর নানা নির্যাতন চলে। আমি ডিভিশন প্রাধিকারপ্রাপ্ত হওয়ার পরও দেওয়া হয়নি। উল্টো ভয়ভীতি দেওয়া হয় ডিভিশন চাইলে ঢাকার বাইরে বহু দূরের কারাগারে পাঠানো হবে। বাধ্য হয়ে আর ডিভিশন চাইনি। আমার সঙ্গে যারা এ আচরণ করেছে তাদের বিচারের ভার আমি আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি।
সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এছাড়াও যত গুম খুন হয়েছে সকল কিছুর বিচার হবে, তবে একটু সময়ের প্রয়োজন। তবে প্রশাসনের যেই হোক না কেন তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।
বিজ্ঞাপন
সুধী সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল কায়েস, উল্লাপাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল ওয়াহাব, সদস্য সচিব মো. আজাদ হোসেন, উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব লিক্সনসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
প্রতিনিধি/জেবি