বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে যশোরে গত দু’দিন ধরে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বুধবার সকাল থেকে মেঘাচ্ছন্ন আকাশের পর বৃষ্টির শুরু হয়, যা বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত চলতে থাকে। এই অসময়ের বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমন ধান ও সবজি ক্ষেত। এছাড়া, শ্রমজীবী মানুষও চরম বিপাকে পড়েছেন।
বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত যশোরে ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়, যার মধ্যে বুধবার ১২ মিলিমিটার এবং বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে সাধারণ মানুষ বাইরে বের হতে পারেননি এবং অনেকেই বিভিন্ন স্থানে আটকে গেছেন। ফলে তাদের দৈনন্দিন কাজেও ব্যাঘাত ঘটেছে।
বিজ্ঞাপন
শহরের মুজিব সড়কে দেখা গেছে, অনেকেই বৃষ্টিতে আটকা পড়ে দোকানের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরছেন। রিকশাচালকরা পলিথিন দিয়ে রিকশা ঢেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। রিকশাচালক আলেক মিয়া বলেন, “বৃষ্টি আসলে আর কী করার আছে? আমাদের কাজ করতে হবে, না হলে পেটে ভাত জুটবে না।”
এক অভিভাবক বলেন, “আমার মেয়ে যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ে। স্কুল ছুটির সময় মেয়েকে আনতে যাচ্ছিলাম, তখনই বৃষ্টিতে আটকে গেলাম।”
তবে এই বৃষ্টি ও বাতাসে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। চলতি মৌসুমে সবজি চাষ নিয়ে চাষিদের চিন্তা বাড়ছে। তারা জানান, খরচ বেড়ে গেছে এবং শীতকালীন সবজির চারা রোপণ করতে গিয়ে বারবার সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে সবজি খেতের ক্ষতি হচ্ছে এবং আমন ধানও হেলে পড়ছে। যেসব ধানের শিষ বের হয়নি, সেগুলোর ক্ষতি হবে।
যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাঠি ইউনিয়নের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, “সবজি চাষীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। গত তিন মাস ধরে সবজি চাষ নিয়ে বিপাকের মধ্যে রয়েছি। বৃষ্টিতে চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, এতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।”
বিজ্ঞাপন
ঝিকরগাছা উপজেলার নিচিন্তপুর গ্রামের কৃষক সুমন কবির বলেন, “অতিবৃষ্টির কারণে নিচু জমিতে ধানের চারা ডুবে গেছে। উঁচু জমিতে ধান ভালো হলেও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গাছগুলো হেলে পড়েছে। আমার দেড় বিঘার ধান হেলে পড়েছে, এতে ফলন কমবে।”
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, “অতিবৃষ্টির কারণে কৃষকের ক্ষতি হচ্ছে, বিশেষ করে আগাম শীতকালীন সবজি চাষীদের। বাজারে সবজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। ঝড়ের প্রভাবে কিছু জায়গায় ধান গাছ হেলে পড়েছে। শক্ত হয়ে যাওয়া ধানের ক্ষতি হবে না, তবে যে সব ধানের শিষ বের হচ্ছে এবং দানা এখনও শক্ত হয়নি, সেগুলোর ক্ষতি হবে।”
প্রতিনিধি/এইউ