বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

কঠিন সময়ের বন্ধু ‘সুরা মুলক’

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ নভেম্বর ২০২২, ০১:৫০ পিএম

শেয়ার করুন:

কঠিন সময়ের বন্ধু ‘সুরা মুলক’

পবিত্র কোরআনের ৩০ আয়াতবিশিষ্ট একটি সুরা, যা আল্লাহর কাছে ততক্ষণ সুপারিশ করবে, যতক্ষণ না তার পাঠকারীকে ক্ষমা করা হয়। সুরাটির নাম ‘সুরা আল মুলক’। পবিত্র কোরআনের ৬৭তম এবং ঊনত্রিশ নম্বর পারার প্রথম সুরা এটি। যে ব্যক্তি প্রতিরাতে সুরা মুলক পড়বে, পাঠকারীর জন্যে সে সুরা কেয়ামতের দিন সুপারিশ করবে। তাকে কবরের আজাব থেকে হেফাজত করবে। এটি সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, إِنَّ سُورَةً مِنَ القُرْآنِ ثَلَاثُونَ آيَةً شَفَعَتْ لِرَجُلٍ حَتَّى غُفِرَ لَهُ، وَهِيَ سُورَةُ تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ المُلْكُ ‘কোরআনে ৩০ আয়াতবিশিষ্ট একটি সুরা আছে যেটি কারো পক্ষে সুপারিশ করলে তাকে মাফ করে দেওয়া হয়। সুরাটি হলো তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক (সুরা মুলক)।’ (আবু দাউদ: ১৪০০; তিরমিজি: ২৮৯১)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: দারিদ্র্য দূর করে যে সুরা 

সুরা মুলক কবরের আজাব থেকেও পাঠকারীকে সুরক্ষা দেবে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতের বেলা তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক (সুরা মুলক) তেলাওয়াত করবে, আল্লাহ তাকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবেন। রাসুলুল্লাহ (স.) এর জামানায় আমরা এই সুরাকে “আল-মা’আনিয়াহ” বা সুরক্ষাকারী বলতাম। যে রাতের বেলা এই সুরাটি পড়ল সে খুব ভালো একটি কাজ করল’। (নাসায়ি ৬/১৭৯, আলবানির মতে হাদিসটি হাসান সহিহ, সহিহ আত-তারগিব ওয়াল তারহিব: ১৪৭৫)

আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.)-এর অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘কবরস্থিত ব্যক্তির পায়ের দিকে ফেরেশতারা শাস্তির জন্য আসতে চাইবেন, তখন তার পা দুটি বলবে, আমার দিক দিয়ে আসার রাস্তা নেই। কেননা সে ‘সুরা মুলক’ পাঠ করত। তখন তার সিনা অথবা পেটের দিক দিয়ে আসতে চাইবেন। তখন সিনা অথবা পেট বলবে, আমার দিকে আসার কোনো রাস্তা নেই। কেননা সে আমার মধ্যে ‘সুরা মুলক’ ভালোভাবে ধারণ করে রেখেছিল। অতঃপর তার মাথার দিক দিয়ে আসার চেষ্টা করবে। মাথা বলবে, এ দিক দিয়ে আসার রাস্তা নেই, কেননা সে আমার মাধ্যমে ‘সুরা মুলক’ পাঠ করেছিল। সুরা মুলক হচ্ছে বাধাদানকারী। কবরের আজাব থেকে বাধা দেবে। তাওরাতেও সুরা মুলক ছিল। যে ব্যক্তি তা রাতে পাঠ করে, সে অধিক ও পবিত্র-উৎকৃষ্ট আমল করবে।’ (হাদিসটি বর্ণনা করেছেন হাকেম, তিনি বলেন, এর সনদ সহিহ)

আরও পড়ুন: সুরা ফাতিহার বিস্ময়কর ফজিলত


বিজ্ঞাপন


সুরা মুলক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি সুরা। আল্লাহ তাআলার রাজত্ব-কর্তৃত্ব ও মহত্ত্বের বর্ণনার মাধ্যমে শুরু হয়েছে এ সূরা। এতে আসমান ও গ্রহ-নক্ষত্রের সৃষ্টি-কুশলতা ও নিপুণতা উল্লেখের মাধ্যমে তাঁর কুদরতের কথা আলোচনা করা হয়েছে।

জন্ম-মৃত্যু সৃষ্টির উদ্দেশ্য বর্ণনার মাধ্যমে মানুষের জীবনের লক্ষ্য তুলে ধরা হয়েছে মর্মস্পর্শী উপস্থাপনায়। স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে দুনিয়াতে আল্লাহর দেওয়া সুযোগ ও ছাড়ের কথা। পরিশেষে তাঁর বিভিন্ন নেয়ামতের কথা উল্লেখ করে মানুষের আল্লাহ-মুখাপেক্ষিতা ও অসহায়ত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় ও আখেরাতের প্রস্তুতির প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এসব কারণে সুরা মুলক মুমিনের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ এক পাথেয়।

প্রিয়নবী (স.) গুরুত্বের সঙ্গে এ সুরা তেলাওয়াত করতেন। হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) ‘আলিফ লাম তানজিল’ (সুরা সাজদাহ) এবং ‘তাবারাকাল্লাজি বি ইয়াদিহিল মুলক’ (সুরা মুলক) সুরা দুটি না পড়ে ঘুমাতেন না।’ (তিরমিজি: ২৮৯৭, দারেমি: ৩৪১১, মুস্তাদরাকে হাকেম: ২/৪৪৬ বা ৩৫৪৫)

সুরা মুলকের বিশেষ দিকটি হচ্ছে— এটি তার আমলকারীকে জান্নাতে না নেওয়া পর্যন্ত লড়তে থাকবে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, কোরআনে ৩০ আয়াতবিশিষ্ট একটি সুরা রয়েছে, যা তার আমলকারীকে জান্নাতে প্রবেশ করানো পর্যন্ত তার পক্ষে ওকালতি করেছে, তার পক্ষে লড়েছে। তা হলো, সুরা তাবারাকা (সুরা মুলক)। (আলমুজামুল আওসাত, তবারানি: ৩৬৫৪)

আল্লাহ তাআলার নিজ কালাম যদি তাঁর কাছে কারো মাগফেরাতের সুপারিশ করে তাহলে সে সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না—এমনটা ভাবা যায় না। সুতরাং ক্ষমা ও জান্নাত লাভের জন্যে মুমিন মুসলমানের উচিত— এ সুরা সিনায় ধারণ করে রাখা এবং নিয়মিত পাঠ করা। আল্লাহ তাওফিক দিন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর