সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

যে দান গরিবের ওপরও আবশ্যক

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮ জুন ২০২২, ০২:৪২ পিএম

শেয়ার করুন:

যে দান গরিবের ওপরও আবশ্যক

দান-সদকা আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ। এতে দুনিয়া ও পরকালীন জীবন গৌরবমণ্ডিত হয়। ইসলামে দান-সদকার উপকারিতা অনেক। কোরআন সুন্নাহয় এর অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(হে রাসুল! আপনি) বলুন, ‘আমার প্রভু তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার জীবিকা বাড়িয়ে দেন অথবা কমিয়ে দেন। তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তিনি তার বিনিময় দেবেন। আর তিনিই শ্রেষ্ঠ জীবিকাদাতা।’ (সুরা সাবা: ৩৯)

দরিদ্রকেও যে সদকা করতে হয়


বিজ্ঞাপন


ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে শুধু সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর নির্ধারিত শর্ত সাপেক্ষে জাকাত ফরজ হয়। সমাজের গরিব ও অসহায় তার মালিক হয়। কিন্তু এমন কিছু দান- সদকা রয়েছে যা ধনী ও গরিব উভয়ের ওপর আবশ্যক। মানুষের প্রতি আল্লাহর অপরিসীম দানের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এই সদকা করতে হয়।

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘প্রতিদিনের সূর্য উদয় হওয়ার পর প্রত্যেক আদম সন্তানের জন্য সদকা করা আবশ্যক। বলা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের সদকার কী আছে, যা আমরা আদায় করতে পারি? তিনি বললেন, ‘নিশ্চয়ই জান্নাতের অনেকগুলো দরজা আছে। তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ), তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ), সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ, পথের কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ, বধিরের কথা শোনা, অন্ধকে পথ দেখানো, যে পথ হারিয়েছে তার প্রয়োজনমাফিক পথ দেখানো, সাহায্যপ্রার্থীর দুঃখ দূর করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা, দুর্বলের প্রতি তোমার বাহুর ধৈর্যধারণ—এর সবগুলো তোমার নিজের জন্য তোমার সদকা।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান: ১৭১)

সব নেক কাজই দানতুল্য

হাদিস থেকে জানা যায়, দান বলতে আর্থিক অনুদান বোঝানো হলেও সব নেক আমল সদকার মর্যাদা রাখে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘সব নেক কাজই সদকা’ (সহিহ বুখারি: ৬০২১)। 


বিজ্ঞাপন


অন্য হাদিসে নবীজি (স.) বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে বলেন, ‘তোমার ভাইয়ের প্রতি তোমার হাসিমুখ সদকা, কারো প্রতি তোমার সৎকাজের আদেশ ও উপদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ ও বাধা প্রদান সদকা, কোনো মানুষকে পথ হারাবার জায়গায় পথ দেখানো তোমার জন্য সদকা, রাস্তা থেকে পাথর, কাঁটা ও হাড্ডি সরানোও তোমার জন্য সদকা, তোমার বালতি থেকে তোমার ভাইয়ের বালতিতে পানি ভরে দেওয়াও তোমার জন্য সদকা।’ (সুনানে তিরমিজি: ১৯৫৬)

আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কতিপয় সাহাবি তাঁকে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল!  বিত্তবান লোকেরা সওয়াবের কাজে এগিয়ে গেছে। আমরা নামাজ যেভাবে পড়ি তারাও আমাদের মতো নামাজ পড়ে। আমরা রোজা রাখি তারাও আমাদের মতো রোজা রাখে। তারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ সদকা করে।’

তিনি বলেন, ‘আল্লাহ কি তোমাদের জন্য এমন জিনিস দান করেননি যা তোমরা সদকা করতে পারো? নিশ্চয়ই সব তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ) সদকা, সব তাকবির (আল্লাহু আকবর) সদকা, সব তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ) সদকা, সব তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) সদকা, প্রত্যেক ভালো কাজের আদেশ ও উপদেশ দেওয়া এবং মন্দ কাজে নিষেধ করা ও বাধা দেওয়া সদকা। এমনকি তোমাদের শরীরের অংশে অংশে সদকা রয়েছে (স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস)।’

তাঁরা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মধ্যে কেউ কাম প্রবৃত্তি চরিতার্থ করবে আর এতেও কি তার সওয়াব হবে?’ তিনি বললেন, ‘তোমরা বলো দেখি, যদি সে হারাম পদ্ধতিতে তা করত তা হলে কি সে গুনাহগার হতো না? অনুরূপভাবে যখন কেউ বৈধভাবে সে কাজ করবে, সে তার জন্য প্রতিফল ও সওয়াব পাবে।’ (সহিহ মুসলিম: ২৩৭৬)

আলোচ্য হাদিস থেকে বুঝা যায়, বৈধ জীবন যাপনেও সদকা বা দানের সওয়াব পাওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দান না করেও উপরোক্ত আমলের মাধ্যমে দানের সওয়াব অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর