মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

শবে বরাতে মানুষকে খাওয়ানোর বিধান কী

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৪৩ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

শবে বরাত একটি মর্যাদাপূর্ণ রাত। ১৪ শাবান দিবাগত রাত তথা ১৫ শাবানের রাতকে হাদিসের ভাষায় ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বলা হয়। যা আমাদের সমাজে শবে বরাত হিসেবে পরিচিত। ‘শবে বরাত’ মূলত ফারসি শব্দ। ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত, ‘বরাত’ অর্থ নাজাত বা মুক্তি। এই দুই শব্দ মিলে অর্থ হয় মুক্তির রজনী। একাধিক সহিহ হাদিসে এ রাতের মর্যাদা প্রমাণিত। 

বিখ্যাত সাহাবি মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে অর্থাৎ শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে তাঁর সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫)


বিজ্ঞাপন


রাতটি ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটাতেন সলফে সালেহিনরা। রাতভর নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, তসবিহ-তাহলিল পাঠ, তওবা-ইস্তেগফার ইত্যাদি আমলে তাঁরা মশগুল থাকতেন। শবে বরাতে একাকী কবর জেয়ারত করাও মোস্তাহাব আমল। 

মানুষকে খাওয়ানো, দান-সদকা সবসময়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল। শবে বরাতের রাতেও এ আমল করা যাবে এবং এর কারণে সওয়াব লাভ হবে। সুতরাং প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন বা দরিদ্রদের হালুয়া-রুটিসহ যেকোনো খাবার খাওয়ানো, হাদিয়া পাঠানো নাজায়েজ হওয়ার কোনো কারণ নেই।

আরও পড়ুন: শবে বরাতে যেসব আমলকে বিদআত ভাববেন না

তবে হালুয়া-রুটি বানানো, খাওয়া ও বিরতরণকে শবে বরাতের জরুরি বা বিশেষ ফজিলতপূর্ণ আমল মনে করলে তা বিদআত গণ্য হবে। কেননা হালুয়া রুটি বানানো, খাওয়া বা বিতরণ করা শবে বরাতের বিশেষ কোনো আমল নয়। 


বিজ্ঞাপন


শবে বরাতের বিশেষ আমল মনে না করলে বা এ রকম ভুল ধারণা সৃষ্টি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা না থাকলে মানুষকে হালুয়া-রুটিসহ যেকোনো খাবার খাওয়ানো ও বিরতরণ করা নাজায়েজ নয়। 

এরপরও আলেমরা এ ধরনের যেকোনো বিষয় নিয়ে বাড়তি সতর্ক থাকতে বলেন। যেন পরবর্তী প্রজন্ম বড়দের দেখাদেখি কোনো কিছুকে রসমে পরিণত করতে না পারে। মূলত শয়তান উঁৎ পেতে থাকে মুসলিম সমাজে বিদআত ছড়িয়ে দিতে। প্রসিদ্ধ তাবেয়ি সুফিয়ান সাওরি (রহ) বলেন- ‘ইবলিসের নিকট নাফরমানির চেয়েও বিদআত বেশি প্রিয়। কারণ নাফরমানি থেকে তাওবা করার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু বিদআত থেকে তাওবা করার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।’ (শাতিবি, আলইতিসাম: ১/১১; ইমাম সুয়ুতি, আলআমরু বিল ইত্তিবা পৃ-১৯)

আরও পড়ুন: বিদআতি লোককে আশ্রয়দাতার ব্যাপারে যা বলেছেন নবীজি (স.)

শবে বরাত নিয়ে কাউকে বলতে শোনা যায়, ‘শবে বরাতে হালুয়া-রুটি বানালে আরশের নিচে ছায়া পাওয়া যাবে।’ অথচ রাসুলুল্লাহ (স.)-এর হাদিসের সঙ্গে এর দূরতম সম্পর্ক নেই। আবার কাউকে বলতে শোনা যায়, ওহুদ যুদ্ধে নবীজির দানদান মোবারক শহীদ হওয়ায় কিছুদিন তিনি শক্ত খাবার খেতে পারেননি—সেই ঘটনার প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এই দিনে ঘটা করে হালুয়া রুটি খাওয়া হয়। অথচ ওহুদ যুদ্ধ শাওয়ালের ৭ তারিখে, শাবান মাসের ১৫ তারিখের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। 

তাই আলেমদের পরামর্শ হলো- শবে বরাতে ঘটা করে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন বা হালুয়া-রুটি খাওয়ানো থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। যেমনটি একবার শুরু হওয়ার কারণে হালুয়া-রুটি বানানোকে শবে বরাতের ইবাদত মনে করে থাকেন কেউ কেউ। তাই উত্তম হলো- এসবের পেছনে সময় নষ্ট না করে মূল ইবাদতের দিকে মনোনিবেশ করে শবে বরাতের ফজিলত লাভ করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের যাবতীয় ত্রুটি থেকে রক্ষা করুন। কোরআন সুন্নাহর নির্দেশনা যথাযথ মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


News Hub