শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

বিদআতি লোককে আশ্রয়দাতার ব্যাপারে যা বলেছেন নবীজি (স.)

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৭:৫৩ পিএম

শেয়ার করুন:

বিদআতি লোককে আশ্রয়দাতার ব্যাপারে যা বলেছেন নবীজি (স.)

দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু সৃষ্টি করাকে ইসলামের পরিভাষায় বিদআত বলা হয়। বিদআতের বিরুদ্ধে মহানবী (স.) কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব। আর সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদ (স.)-এর আদর্শ। সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো, (দ্বীনের মধ্যে) নব-উদ্ভাবিত বিষয়। (দ্বীনের মধ্যে) নব-উদ্ভাবিত সবকিছুই বিদআত। প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা, আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।’ (মুসলিম: ১৫৩৫; নাসায়ি: ১৫৬০)

বিদআত আবিষ্কারকারী যত বড় ধর্মীয় পণ্ডিতই হোক না কেন, ইসলামে তার নতুন আবিষ্কৃত আমল গ্রহণযোগ্য নয়। মহানবী (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের এই দীনে (ইসলাম ধর্মে) কোনো নতুন কিছু সৃষ্টি করে, যা (যার ভিত্তি) তার মধ্যে নেই তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য। (সহিহ বুখারি: ২৬৯৭)

যারা বিদআতে জড়িত সাধারণত তাদেরকেই বিদআতি বলা হয়। বিদআতে জড়িত ব্যক্তিদের আশ্রয় দেওয়াও গুনাহের কাজ। এমন লোকেরা অভিশপ্ত। হাদিসে এসেছে, স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাদের অভিসম্পাত করেছেন। আবু তুফায়ল আমির ইবনে ওয়াসিলাহ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আলি ইবনে আবি তালিব (রা.)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক লোক তাঁর কাছে এসে বলল, নবী (স.) আপনাকে আড়ালে কী বলেছিলেন? বর্ণনাকারী বলেন, তিনি রেগে গেলেন এবং বলেন, নবী (স.) লোকদের কাছ থেকে গোপন রেখে আমার নিকট একান্তে কিছু বলেননি। তবে তিনি আমাকে চারটি (বিশেষ শিক্ষণীয়) কথা বলেছেন। 

বর্ণনাকারী বলেন, এরপর লোকটি বলল হে আমিরুল মুমিনিন, সে চারটি কথা কী? তিনি বলেন, ১) যে লোক তার মাতা-পিতাকে অভিসম্পাত করে, আল্লাহ তাকে অভিসম্পাত করেন, ২) যে লোক আল্লাহ ব্যতীত ভিন্ন কারো নামে পশু জবাই করে আল্লাহ তার ওপরও অভিসম্পাত করেন, ৩) ওই ব্যক্তির ওপরও আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, যে কোনো বিদআতি লোককে আশ্রয় দেয় এবং ৪) যে ব্যক্তি জমিনের (সীমানার) চিহ্নসমূহ অন্যায়ভাবে পরিবর্তন করে, তার ওপরও আল্লাহ অভিসম্পাত করেন। (মুসলিম: ৫০১৮)

আরও পড়ুন: শিরক থেকে বেঁচে থাকার পুরস্কার

বিদআতের পরিণতি অত্যন্ত বিপজ্জনক। কেননা শরিয়তে কোনো কিছু নতুনভাবে শুরু করার ফলে বোঝানো হয় যে, শরিয়ত অপূর্ণ। অথচ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা দ্বীন পরিপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করে দিলাম...।’ (সুরা মায়েদা: ৮৯)

ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, হে লোক সকল! জান্নাতের নিকটবর্তীকারী এবং জাহান্নাম থেকে দূরকারী এমন কোনো জিনিস নেই, যা আমি তোমাদেরকে করতে আদেশ করিনি। আর জাহান্নামের নিকটবর্তীকারী এবং জান্নাত থেকে দূরকারী এমন কোন জিনিস নেই, যা আমি তোমাদেরকে করতে নিষেধ করিনি। (বায়হাকির শুআবুল ঈমান: ১০৩৭৬; হাকেম: ২১৩৬, সিলসিলাহ সহিহাহ: ২৮৬৬)

সুতরাং দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু সংযোজন করার প্রয়োজনই নেই। হাদিসে এসেছে, বিদআতে জড়িত ব্যক্তি কেয়ামতের দিন চরমভাবে লাঞ্ছিত হবে। কিয়ামতের দিন রাসুল (স.) বিদআতি লোকদের হাউজে কাউসারের পানি পান করাবেন না। তিনি তাদের বলবেন, ‘যারা আমার দীনের পরিবর্তন করেছ, তারা দূর হও, দূর হও।’ (বুখারি: ৬৬৪৩)

আরও পড়ুন: দুই অজ্ঞতা সওয়াব অর্জনে বড় বাধা

মহান আল্লাহ নিজ নবীর ব্যাপারে বলছেন, ‘সে যদি কিছু রচনা করে আমার নামে চালাতে চেষ্টা করত, তবে আমি তাকে কঠোর হস্তে দমন করতাম এবং তার কণ্ঠশিরা কেটে দিতাম। তোমাদের কেউই তাকে রক্ষা করতে পারত না। (সুরা হাক্কাহ: ৪৪-৪৯)

যেখানে নবীজির ব্যাপারে মহান আল্লাহর এমন কথা, সেখানে বিদআতিদের শাস্তি কেমন হবে তা সহজেই অনুমেয়। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, ‘বিদআতের কারণে জাহান্নাম অবধারিত। আর বিদআতিদের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতারা হাদিসের ভাষ্যমতে অভিশপ্ত। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিদআত থেকে দূরে থাকার, বিদআতি লোকদের সহযোগিতা করা থেকে বিরত থাকার ও সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর