রমজানের রোজা ফরজ এবং ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুকন। শরিয়ত অনুমোদিত কোনো কারণে রোজা রাখতে না পারলে অথবা রোজা ভেঙে ফেললে পরে তা আদায় করাকেই কাজা বলে। যত দ্রুত সম্ভব কাজা রোজা আদায় করে নেয়া মোস্তাহাব। তাই ঈদের পরপরই যথাসম্ভব দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজা রোজা আদায় শুরু করা উচিত।
কোনো কারণ ছাড়া কাজা রোজা আদায় করতে বিলম্ব করা মাকরুহ। এক রমজানের কাজা রোজা পরবর্তী রমজান আসার আগে আদায় করে নেয়া ওয়াজিব। কেননা এর দায় তার ওপর রয়ে গেছে।
বিজ্ঞাপন
বিলম্ব করে কাজা আদায় করাও বৈধ। অনুরূপভাবে বিরতি দিয়েও রোজা কাজা করা জায়েজ। তবে, বিলম্ব না করা উচিত। কেননা যা কাজা হয়, তা মূল রোজারই স্থলাভিষিক্ত। যদি সঙ্গে সঙ্গে কাজা আদায় করার সুযোগ না থাকে, তাহলে অন্তত কাজা করার প্রবল ইচ্ছা পোষণ করতে হবে।
আরও পড়ুন: জীবনের সকল কাজা রোজা আদায়ের বিধান কেমন
যদি বিনা কারণে আগামী রমজান পর্যন্ত বিলম্ব করে, তাহলে গুনাহগার হবে। বছরের যেকোনো দিন কাজা রোজা আদায় করা যাবে। এক্ষেত্রে নিষিদ্ধ দিনগুলো বাদ দিতে হবে। অর্থাৎ যেসব দিনে রোজা রাখা ইসলামি শরিয়তে নিষিদ্ধ সেসব দিন বাদ দিতে হবে। যেমন ঈদুল ফিতরের দিন, ঈদুল আজহার তিন দিন।
তবে এক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি যদি বছরের নির্দিষ্ট কোনো দিনে রোজা রাখবে বলে মানত করে, তাহলে সেই দিনও কাজা রোজা আদায় করা যাবে না। পিরিয়ডের কারণে যেসব নারী রমজানের সবগুলো রোজা রাখতে পারেননি, তারাও উপরোক্ত নিয়ম অনুসরণ করবেন।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু যদি বিলম্ব করতে করতে শাবান মাসের মাত্র এমন কয়েকদিন বাকি থাকে, তখন জরুরি হলো- যে কয়দিনের রোজা তার কাজা হয়েছে, এরপরই যেহেতু পুনরায় পরবর্তী রমজান এসে যাবে, তাই তখন ধারাবাহিকতা রক্ষা করে কাজা আদায় করা। কোনো গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া পরবর্তী রমজানের পর পর্যন্ত কাজা রোজা পিছিয়ে দেওয়া বৈধ হবে না।
আরও পড়ুন: যেসব কারণে রোজা ভাঙলে কাফফারা দিতে হয় না
অতএব, যদি গ্রহণযোগ্য কারণে সেসময়ও কাজা আদায় করতে সক্ষম না হয় তাহলে পরে রমজানের শুধু কাজা আদায় করলেই হবে। কিন্তু যদি অনর্থক দেরি করা হয়, তাহলে কাজাসহ প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকিনকে ‘ফিদয়া’ দিতে হবে। অর্থাৎ, প্রতিদিনের জন্য একজন অভাবীকে খাবার দিতে হবে।
যদি কাজা আদায় না করা অবস্থায় পরবর্তী রমজান মাস এসেই যায়, তাহলে রমজানের রোজা পালন করার পরে কাজা আদায় করতে হবে।
উল্লেখ্য, কাজা রোজার নিয়তের সময় কিছুটা ব্যতিক্রম। যেমন- রমজানে দ্বিপ্রহরের আগ পর্যন্ত নিয়তের সুযোগ থাকলেও কাজা রোজার ক্ষেত্রে তেমনটি নেই; বরং কাজা রোজার নিয়ত সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার আগেই করতে হবে। দিনের বেলা কাজা রোজার নিয়ত করলে তা নফল রোজা হিসেবে গণ্য হবে।
(বুখারি: ১৯৫০; মুসলিম: ১১৪৬; কিতাবুল আছল, খন্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১৬৪)