সিরিয়ার পাশে মাদইয়ান নামক শহরে এক সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল। তারা আল্লাহর একত্ববাদ থেকে দূরে ছিল এবং জঘন্য সব অপরাধে লিপ্ত ছিল। এর মধ্যে অন্যতম হলো- আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা ও ওজনে কম দেওয়া। এছাড়াও ডাকাতি, ছিনতাই, লুটতরাজের মতো ধ্বংসাত্মক অপরাধে লিপ্ত ছিল তারা।
দুনিয়াবি ধনৈশ্বর্যে ডুবে গিয়েছিল সম্প্রদায়টি। রাস্তার মোড়ে মোড়ে চৌকি বসিয়ে লোকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করত। মাদিয়ানবাসীদের আরেকটি দুষ্কর্ম ছিল, তারা প্রচলিত স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার পার্শ্ব থেকে সোনা ও রুপার কিছু অংশ কেটে রেখে সেগুলো বাজারে চালিয়ে দিত।
বিজ্ঞাপন
তাদের হেদায়েতের জন্য আল্লাহ তাআলা সেখানে শোয়াইব (আ.)-কে পাঠালেন। তিনি তাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদতের নির্দেশ দেন এবং কারো হক নষ্ট না করে মাপে কম দেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেন। কিন্তু তারা তাঁর উপদেশ অগ্রাহ্য করল, উপরন্তু ঠাট্টা করতে লাগল।
এক পর্যায়ে তারা শোয়াইব (আ.)-কে হত্যার হুমকি দিলো। তারা বলল- ‘হে শোয়াইব! তুমি যা বলো, তার অনেক কথাই আমরা বুঝি না। আমরা তো তোমাকে আমাদের মধ্যে দুর্বলই দেখছি। তোমার স্বজনরা না থাকলে আমরা তোমাকে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করতাম। আর আমাদের ওপর তুমি শক্তিশালী নও।’ (সুরা হুদ: ৯১)
আরও পড়ুন: দামেস্কের যে মসজিদে ঈসা (আ.) অবতরণ করবেন
এর জবাবে শোয়াইব (আ.) অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বলেন, ‘হে আমার জাতি! তোমাদের কাছে কি আমার স্বজনরা আল্লাহর চেয়ে বেশি শক্তিশালী? আর এ জন্যই কি তোমরা তাঁকে (ভুলে গিয়ে) পেছনে ফেলে রেখেছ?’ অর্থাৎ তোমাদের উচিত আল্লাহকে ভয় করা। তিনি পৃথিবীর সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। তিনি কাউকে শাস্তি দিতে চাইলে পৃথিবীর কোনো ক্ষমতা, কোনো শক্তি তা রোধ করতে পারবে না।
বিজ্ঞাপন
ইসলামের ইতিহাসে ভীষণ অকৃতজ্ঞ ছিল জাতিটি। একসময় তারা অভাবগ্রস্ত ছিল এবং সংখ্যায় কম ছিল, আল্লাহ তাদের অভাব দূর করলেন এবং নেয়ামতে পূর্ণ করলেন। কিন্তু তাদের অকৃতজ্ঞতা ও নাফরমানির অন্ত ছিল না। তাদের অকৃতজ্ঞতা বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো, তোমরা যখন সংখ্যায় কম ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের বংশ বৃদ্ধি করে তোমাদের একটি বিরাট জাতিতে পরিণত করেছেন।’ (সুরা আরাফ: ৮৬)
মূলত আল্লাহ তাআলা পাপীদের অবকাশ দিয়ে থাকেন। তারপর তারা যখন চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে যায় তখন সত্য ও মিথ্যার ফয়সালা হয়ে যায়। শোয়াইব (আ.)-এর জাতির ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে অবিশ্বাসী ও পাপীদের ওপর আল্লাহর চূড়ান্ত আজাব নাজিল হয়। আল্লাহ তাআলা তাদের ভূমিকম্পে ধ্বংস করে দেন।
আরও পড়ুন: পিঁপড়ার যে কথা শুনে সোলাইমান (আ.)-এর হাসি পেয়েছিল
এর আগে শুয়াইব (আ.) তাদের বলেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা নিজ নিজ অবস্থানে কাজ করতে থাক, আমিও আমার কাজ করছি। তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে কার উপর আসবে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি এবং কে মিথ্যাবাদী। আর তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষা করছি। (আল্লাহ বলেন) আর যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছল তখন আমি মুক্তি দিলাম শুয়াইবকে, আর যারা তার সাথে ঈমানদার ছিল তাদেরকে নিজ রাহমাতে এবং ওই জালিমদেরকে আক্রমণ করল এক বিকট গর্জন। অতঃপর তারা নিজ গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে রইল। (সুরা হুদ: ৯৩-৯৪)