বরিশালের বাবুগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগরে হিন্দু সনাতন সম্প্রদায়ের স্নান উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকালে শুরু হয়ে দিনভর দুর্গাসাগরে এ উৎসব পালন করেন তারা। প্রতি বছরের মতো এবারও ঐতিহ্যবাহী মাধবপাশা দুর্গাসাগরে হাজার হাজার পুণ্যার্থীর আগমন ঘটে। চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে এ দুর্গাসাগরে স্নান করে পাপ মোচনের আশায় প্রতি বছরই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এখানে আসেন। আগতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে উৎসবকে কেন্দ্র করে একদিনের মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় হরেক রকমের খাবারসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী বিক্রি করতে দেখা গেছে।
দুর্গাসাগরে স্নান করতে আসা পাঁপড়ি রাণি বৈদ্য বলেন, ‘কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আমরা স্নান করেছি। দীঘির পাড়ে অস্থায়ী মেলায় হরেক রকম খাবার বিক্রি হচ্ছে। এখানে সব বয়সের মানুষ নির্বিঘ্নে স্নান করেছেন।’
বিজ্ঞাপন
দর্শনার্থী তরুণী লোপা রাণি বৈদ্য বলেন, ‘এখানে এসে ধর্মীয় স্নান উৎসবে অংশ নেয়ার পাশাপাশি দুর্গাসাগরের ইতিহাস সম্পর্কে জেনেছি।’
আরও পড়ুন—
বরিশাল নগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন সিকদার বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে স্নানোৎসব সম্পন্ন করতে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া সাদা পোশাকে আইন বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে।’
বিজ্ঞাপন
বরিশাল জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ উৎসব নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’
সরকারি তথ্য মতে, ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে চন্দ্রদ্বীপ পরগনার তৎকালীন রাজা শিবনারায়ণ এলাকাবাসীর পানির সংকট নিরসনে মাধবপাশায় একটি বৃহৎ দীঘি খনন করেন। তাঁর মা দুর্গাদেবীর নামে দীঘিটির নামকরণ করা হয় দুর্গাসাগর। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার দীঘিটি পুনঃসংস্কার করেন। দীঘির নিচের অংশের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৯৫০ ফুট এবং প্রস্থ ১ হাজার ৭৫০ ফুট।
দুর্গার সঙ্গে সাগর যুক্ত করে এর বিশালত্বকে বোঝানো হয়েছে। এত বড় দীঘি বরিশাল বিভাগে আর নেই। বর্তমানে দীঘীটি পর্যটকদের এবং প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে একটি সুন্দর স্থান। বিশাল সিমেন্টের প্রশস্ত ঘাটলা, দীঘির মাঝে একটি সুন্দর দ্বীপ, যেখানে শীতকালে অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত থাকে। পাখিদের অভয়ারণ্য এই এলাকা। দীঘির পারে সরু রাস্তা, বসার বেঞ্চ, ঘন সবুজ গাছপালায় ঘেরা এ দিঘী।
প্রতিনিধি/একেবি