বুধবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

যে আমলে মনের সকল ইচ্ছে পূরণ হয়

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ মে ২০২২, ০৯:১৬ এএম

শেয়ার করুন:

loading/img

প্রত্যেকে চান তার মনের ইচ্ছে-আকাঙ্খাগুলো পূরণ হোক। মুমিনরাও তাদের কল্যাণকর আশাগুলো পূরণ হওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করেন। হাদিসে এমন একটি উপায়ের কথা বলা আছে, যেটি অবলম্বন করলে আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করেন। সেই উপায়টি হলো ‘ইসমে আজম’। অর্থাৎ ‘ইসমে আজম’ পাঠ করার মধ্য দিয়ে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করবেন। 

'ইসম' শব্দের অর্থ নাম আর 'আজম' শব্দের অর্থ মহান বা শ্রেষ্ঠ। ইসমে আজম অর্থ আল্লাহর নামসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ নামগুলো। আল্লাহ তাআলার যে নামগুলো দিয়ে তাঁর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব সবচেয়ে বেশি প্রকাশ পায়, সেই নামগুলোকে 'ইসমে আজম' বলা হয়।

নির্দিষ্টভাবে কোন শব্দগুলো ইসমে আজম— সে ব্যাপারে বিজ্ঞ আলেমদের অনেক মতামত রয়েছে। সমসাময়িককালের প্রখ্যাত সউদি আলেম আল-উসাইমিন (রহ)-এর মতে, 'ইসমে আজম’ হচ্ছে আল-হাইয়্যু (চিরঞ্জীব) এবং আল-ক্বাইয়ুম (চিরস্থায়ী)। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলাকে এই বলে দোয়া করা যে, ইয়া হাইয়্যু, ইয়া ক্বাইয়ুম, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম (হে চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী, মর্যাদাবান ও কল্যাণময়)।

এই অভিমত প্রকাশের ক্ষেত্রে মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন (রহ) যে হাদিসের ওপর নির্ভর করেছেন, তা হচ্ছে আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘কোরআনের তিনটি সুরার মাঝে ইসমে আজম (আল্লাহর সবচেয়ে মহান নাম) রয়েছে- আয়াতুল কুরসি, সুরা আলে-ইমরান এবং সুরা তোয়াহার মাঝে।’ (ইবনে মাজাহ: ৩৮৫৬, আল-হাকিম: ১/৬৮৬, শায়খ আলবানি (রহ) বলেন, হাদিসটি হাসান। সিলসিলাহ আস-সহিহাহ: ৭৪৬)

তাঁর মতে, হাদিস অনুযায়ী আল-হাইয়্যু এবং আল-ক্বাইয়ুম শব্দ দুটি রয়েছে আয়াতুল কুরসিতে, যেমন- اللّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়ুম’। রয়েছে সুরা আলে ইমরানের দ্বিতীয় আয়াতে যেমন- اللّهُ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়ুম’ এবং সুরা তোয়াহার ১১১ নম্বর আয়াতে, যেমন- وَعَنَتِ الْوُجُوهُ لِلْحَيِّ الْقَيُّومِ وَقَدْ خَابَ مَنْ حَمَلَ ظُلْمًا ‘ওয়া আনাতিল উজুহু লিল হাইয়্যিল কাইয়ুম’।

কেউ কেউ বলেন, ইসমে আজমের সংখ্যা কম-বেশি প্রায় ৪০টি। প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার আল্লামা সুয়ূতি (রহ.) তার ‘আদ দুররুল মুনাজ্জাম ফিল ইসমিল আজম’ নামক গ্রন্থে ২০টি মতামত উল্লেখ করেছেন। আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) বলেন, ‘ইসমে আজম হলো- ‘আল্লাহ’ শব্দ। তবে শর্ত হলো তা পূর্ণ একাগ্রতা ও ইখলাসের সঙ্গে বলতে হবে’ (মিরকাতুল মাফাতিহ: ১/৬)।


বিজ্ঞাপন


হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে,  ‘একদিন রাসুল (স.) নামাজের পর দোয়ারত জায়েদ ইবনে সামেত (রা.)-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। দোয়াতে তিনি বলছিলেন, 'আল্লাহুম্মা ইন্নি আস-আলুকা বি-আন্না লাকাল হা'মদু লা-ইলা-হা ইল্লা-আনতা ওয়াহ'দাকা লা-শারিকা লাকাল মান্না-ন, ইয়া বাদিআ'স সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম, ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুম। ' তখন রাসুল (স.) তাঁকে বললেন, 'তুমি আল্লাহর দরবারে ইসমে আজমের মাধ্যমে দোয়া করেছ, যার মাধ্যমে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা কবুল করেন এবং কিছু চাইলে তা দান করেন।' (মুসনাদে আহমদ: ১২২০৫)

আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সঙ্গে বসা ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি সালাত আদায় করে এই বলে দোয়া করলো—

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ لَا إِلَهَ إِلَا أَنْتَ الْمَنَّانُ بَدِيعُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالإِكْرَامِ يَا حَىُّ يَا قَيُّومُ ‏

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আস'আলুকা বি আন্না লাকাল হামদ, লা ইলাহা ইল্লা আন্তাল মান্নানু বাদিউস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম, ইয়া হাইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যুম।

অর্থ: ‘‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করি। তুমিই তো সকল প্রশংসার মালিক, তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমি দয়াশীল। তুমিই আকাশসমূহ ও পৃথিবীর একমাত্র সৃষ্টিকর্তা! হে মহান সম্রাট ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী, হে চিরঞ্জীব, হে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।”

তখন নবী (স.) বলেন, এ ব্যক্তি ইসমে আজম দ্বারা দোয়া করেছে, যে নামে ডাকলে তিনি সাড়া দেন এবং যে নামে তাঁর নিকট চাওয়া হলে তিনি দান করেন।' (সুনানে আবু দাউদ: ১৪৯৫, অধ্যায়: ২/সালাত)

বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) দুইজন লোককে এটা বলতে শুনেছেন যে—

আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকা, বিআন্নি আশহাদু আন্নাকা আংতাল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লা আংতাল আহাদুস সামাদ, আল্লাজি লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ ওয়ালাম ইয়া কুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।' তখন রাসুল (সা.) বলেন, 'তোমরা আল্লাহর কাছে ইসমে আজমের মাধ্যমে চেয়েছ, যার মাধ্যমে চাইলে আল্লাহ দান করেন এবং দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন। ( আবু দাউদ: ১৪৯৩)

তাই মুমিন মুসলমানের উচিত, হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলো পড়ার মাধ্যমে মনের ইচ্ছেগুলো আল্লাহ তাআলার কাছে কায়মনোবাক্যে তুলে ধরা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেককে ইসমে আজমের মাধ্যমে দোয়া করার তাওফিক দান করুন এবং বান্দার মনের সব ভালো ইচ্ছে তিনি পূরণ করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


News Hub