বুধবার, ৮ মে, ২০২৪, ঢাকা

দূরত্ব ভুলে ফের কাছে আসছে বিএনপি-জামায়াত!

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ১২ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৭ পিএম

শেয়ার করুন:

দূরত্ব ভুলে ফের কাছে আসছে বিএনপি-জামায়াত!
  • ৮ বছর পর জামায়াতের ইফতারে বিএনপি
  • বিএনপির ইফতারেও জামায়াত নেতাদের ঢল
  • খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি চান জামায়াত আমির

এক যুগেরও বেশি সময় জোটবদ্ধ হয়ে রাজনীতিতে পথ চললেও বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব নিয়ে আলোচনা হয়েছে বেশ। শুরুর দিকে দুই পক্ষই বিষয়টি নিয়ে চুপচাপ থাকলেও ক্রমেই দুই দলের দূরত্ব দৃশ্যমান হয়। বিশেষ করে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আসন বণ্টন ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ওপর বিএনপির অতিমাত্রায় নির্ভরতা ভালোভাবে নেয়নি জামায়াত। অন্যদিকে বিএনপির শীর্ষ নেতাদেরও কিছু কিছু বক্তব্যে নাখোশ হন দলটির নেতারা। এক পর্যায়ে ভাঙন ধরে বিএনপি-জামায়াতের ২০ দলীয় জোটে। তবে ধীরে ধীরে এই দূরত্ব ঘুচিয়ে দুই দল যে আবারও কাছাকাছি হচ্ছে তা স্পষ্ট হয়ে গেছে।


বিজ্ঞাপন


যদিও এখনো বিএনপি-জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতারা পরিষ্কার করে কিছু বলতে রাজি হচ্ছেন না। তবে অনেক দিন মুখ দেখাদেখি বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি একাধিকবার দুই দলের শীর্ষ নেতারা একটেবিলে বসতে শুরু করেছেন। শুধু তাই নয়, বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও মুক্তির ইস্যুতে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।

বিএনপির মধ্যম সারির কেন্দ্রীয় এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন যে হয়েছে সেটা পরিষ্কার। এখনই চূড়ান্ত করে বলা মুশকিল। আরও কিছুদিন পর বোঝা যাবে আবারও একসঙ্গে পথচলা শুরু হবে কি না।’

যেভাবে দূরত্ব বাড়ে দুই দলে

রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দুই দলের সম্পর্ক ১৯৯৭-৯৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বেশ ভালো ছিল। বিএনপির একটি পক্ষের বিরোধিতা থাকলেও ২০০১ সালে জামায়াতের দুইজন মন্ত্রিপরিষদে ঠাঁই পেয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে ২০০৬ সালের শেষ দিকে আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখে দলটি। ২০১৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও বেশ সক্রিয় ছিল জামায়াত। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির রায়কে ঘিরে মনোমালিন্য শুরু হয়। কারণ বিএনপির পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনো বিবৃতিও দেওয়া হয়নি।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

ফের জোটবদ্ধ হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত?

জোট ত্যাগের ঘোষণা নিয়ে কী বলছে বিএনপি-জামায়াত

তবে সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি ঘটে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। ভোটের পরে এ দুই দলের শীর্ষ নেতারা পারস্পরিক বাকযুদ্ধেও জড়িয়েছেন। এক পর্যায়ে ভাঙন ধরে ২০ দলীয় জোটে। এরপর থেকে দল দুটির নেতাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কাছাকাছি হতে দেখা যায়নি।

BBB

অন্যদিকে গত বছরের জুলাই মাসে দীর্ঘদিন পর ঢাকায় সমাবেশ করতে জামায়াত অনুমতি পাওয়ার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এক বক্তব্যে ফুঁসে ওঠে জামায়াত। দীর্ঘদিন একসঙ্গে পথচলা দল বিএনপিকে তার বক্তব্য প্রত্যাহারে আলটিমেটামও দেয় দলটি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতকে আস্থায় আনতে জোর চেষ্টা চালিয়েছিল। এরই অংশ হিসেবে কৌশলগত কারণে জামায়াতের প্রসঙ্গ এড়াতে ভেঙে দেওয়া হয় ২০ দলীয় জোট। কারণ এই জোটের অন্যতম বড় দল জামায়াত।

এদিকে জোট ভাঙার পর সাবেক শরিকেরা জামায়াতকে বাদ দিয়ে নতুন জোট করে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত হয়। বেশিরভাগ দল মিলেমিশে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করলেও সবাই জামায়াতকে এড়িয়ে চলে। তবে নানা আলোচনা থাকলেও ভোটে বিএনপিসহ অন্যান্য দলের মতো জামায়াতের কোনো নেতাও নির্বাচনে অংশ নেননি।

তবে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত মিলে ষাটের বেশি দলের ভোট বর্জনেও খুব একটা সুফল বয়ে আনেনি। কারণ দলীয় সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। তাই ভোটের শেষে নতুন করে আন্দোলনের পথে হাঁটার পরিকল্পনাকে ঘিরে আবারও দুই দলের কাছাকাছি আসার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

দূরত্ব কমার যে লক্ষণ দেখাচ্ছে দুই দল

জানা গেছে, দুই দলের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য ভূমিকা রাখছেন। অন্যদিকে জামায়াতের পক্ষ থেকেও সম্পর্ক ভালো করতে কঠোরতার বদলে নমনীয় আচরণ লক্ষ্য করা গেছে। এরই ফলে দীর্ঘ আট বছর পর এক মঞ্চে দেখা গেছে বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের।

দীর্ঘদিন পর একটেবিলে বসে ইফতার করলেন বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। এ সময় একই টেবিলে পাশাপাশি বসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জামায়াতের আমির মাওলানা শফিকুর রহমান। গত ২৮ মার্চ রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিসে ক্লাবে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সম্মানে এই ইফতার পার্টির আয়োজন করে বিএনপি। ইফতার পার্টিতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

ইফতারের আগে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বক্তব্য দেন। বক্তব্য শেষে ইফতারের আগে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটেবিলে পাশাপাশি চেয়ারে বসেন এবং দুইজনের মধ্যে তখন একান্ত আলাপচারিতা হতে দেখা যায়।

আরও পড়ুন

বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের ‘মনোমালিন্য’

বিএনপি-জামায়াত সম্পর্কে নতুন ফাটল!

এর দুদিন পর গত ৩০ মার্চ জামায়াতে ইসলামীর ইফতার পার্টিতে যোগ দেন বিএনপির নেতারা। হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের বলরুমে ইফতারের আয়োজন করা হয়। সবশেষ ২০১৫ সালে হোটেল সোনারগাঁও হোটেলে জামায়াতের ইফতারে গিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

bnp2

অবশ্য ওই ইফতারে আমন্ত্রণ থাকলেও যাননি বিএনপি মহাসচিব। তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ কেন্দ্রীয় ১৮ জন অংশ নেন।

এদিকে ইফতারের পরদিন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর বিবৃতিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে বিদেশে পাঠানো দাবি জানান।

দুই দলের সম্পর্কের টানাপোড়েন কাটার বিষয় নিয়ে জামায়াতের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও বলা সম্ভব হয়নি।

তবে কিছুটা কৌশলী উত্তর দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সম্পর্ক ভালো-মন্দের বিষয় মুখ্য নয়। সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকা, নির্বাচন বর্জন করা সব দলকে নিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে চাই। যেখানে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে আমরা আহ্বান জানিয়েছি। সবাইকে নিয়ে আমরা দাবি আদায় করতে চাই।’

বিইউ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর