শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

জোট ত্যাগের ঘোষণা নিয়ে কী বলছে বিএনপি-জামায়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৯ আগস্ট ২০২২, ০৮:২১ এএম

শেয়ার করুন:

জোট ত্যাগের ঘোষণা নিয়ে কী বলছে বিএনপি-জামায়াত

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী অবশেষে ‘একলা চলো’ নীতিতে চলার সিদ্ধান্তের কথা জানাল। ২০ দলীয় জোটের সাথে জামায়াতের মধ্যেকার সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। যদিও এই বিষয়ে বিএনপি কিংবা জামায়াতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানানো হয়নি।

বিএনপি নেতারা বলছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনের কথা বলে আসছে। এখানে জোট থাকা না থাকার কোনো বিষয় নয়, সকলে মিলে যুগপৎ আন্দোলন করে যাবেন। একই লক্ষ্যে যার যার অবস্থান থেকে আন্দোলন করবেন। বিএনপি এটা প্রতিনিয়ত বলে আসছে নতুন কিছু নয়।

জামায়াত কী বিএনপির নেতৃত্বধীন ২০ দলীয় জোট ত্যাগ করেছেন— জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, জোট ছাড়ার তো কিছু নেই। আমরা যে যুগপৎ আন্দোলন করব এটা অনেক আগেই ঘোষণা দিয়েছি। সুতরাং যুগপৎ আন্দোলনের অর্থ তো একই বুঝায়। যে বর্তমানে একই লক্ষ্যে যার যার অবস্থান থেকে আন্দোলন করবে। বিএনপির পক্ষ থেকে এ নিয়ে প্রতিনিয়ত বলা হচ্ছে, এটা নতুন কিছু নয়।

bnp-jamat

জামায়াত তো আপনাদের দীর্ঘদিনের জোট সঙ্গী এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না না শুধু জামায়াত কেন, আমাদের তো আরও বিশ দল রয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত আমরা সকলে মিলেই নিয়েছি। থাকা না থাকার কিছু না, সিদ্ধান্ত হয়েছে সবাই মিলে যুগপৎ আন্দোলন করব। ২০ দলের বাইরে বাম ডান মধ্যপন্থী যারা রয়েছে তারাও একটি আন্দোলনে যাচ্ছে। 

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি এখনও জানি না। তবে জামায়াত রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের স্বাধীনতা রয়েছে, এখানে আমরা কি মন্তব্য করব।


বিজ্ঞাপন


জামায়াত জোট ছাড়ায় বিএনপির কোনো ক্ষতি হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০ দলীয় জোট আসলে দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয়। সে অবস্থায় আমরা মনে করি যে জামায়াত ইসলামের নিজস্ব স্বাধীনতা রয়েছে দল হিসেবে। তারা তাদের সিদ্ধান্ত নিতেই পারে।

bnp-jamat

জামায়াত ২০ দলীয় জোট ত্যাগ করেছে কি-না জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ ঢাকা মেইলকে বলেন, জামায়াত ২০ দলীয় জোট ত্যাগ করেনি। অফিসিয়াল কোনও ঘোষণা আমরা দেইনি। 

জামায়াতের আমিরের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও নিয়ে আকন্দ বলেন, এ বিষয়টি হলো একটি পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছে। কিন্তু সেটি আমাদের অফিসিয়াল বক্তব্য নয়। অফিসিয়াল বক্তব্য হলে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অথবা প্রেস রিলিজের মাধ্যমে সাংবাদিক ভাইদের জানানো হবে। কিন্তু দলের মধ্যে এই ধরণের কোনও আলোচনা হয়নি।

bnp-jamat

সম্প্রতি এক ভিডিও বক্তব্যে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, আমরা এতদিন একটা জোটের সঙ্গে ছিলাম। আপনারা, ছিলাম শুনে হয়তো ভাবছেন কিছু হয়ে গেছে নাকি? হ্যাঁ হয়ে গেছে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এটি একটি জোট ছিল। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পর থেকে এই জোট তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে এবং সেদিন বাংলাদেশ পথ হারিয়ে। তারপর সেটা আর ফিরে আসেনি।

তিনি আরও বলেন, আমরা বহু চিন্তা করেছি, বাংলাদেশের জন্য এই জোট আর উপকারী কিছু নেই। এই জোটের সঙ্গে বিভিন্ন দল যারা আছেন, বিশেষ করে প্রধান দল, তাদের এই জোটকে কার্যকর করার কোনও চিন্তা নাই। বিষয়টা আমাদের কাছে স্পষ্ট দিবালোকের মতো এবং তারা আমাদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

bnp-jamat2

তিনি আরও বলেন, এই রকম একটা জোটের সঙ্গে যদি কেয়ামত পর্যন্ত থাকি, যদি কর্মসূচির…, জোটের প্রধান দলের একজন নেতা তো বলেই ফেলেছেন- আমরা শরিকে নেই, সমর্থন করি না। তাদের সঙ্গে…। এখন বাস্তবতা হচ্ছে নিজস্ব অবস্থান থেকে আল্লাহর উপর ভর করে পথ চলা। তবে, হ্যাঁ জাতীয় স্বার্থে একই দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করব। এটা আমরা তাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছি, এর সাথে তারা ঐকমত্য পোষণ করেছে। তারা আর কোনো জোট করবে না। তার বাস্তবতাও নেই।

শফিকুর রহমান আরও বলেন, এখন যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করব। যদি আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করেন তাহলে আমাদের আগামী দিনগুলোতে কঠিন প্রস্তুতি নিতে হবে। অনেক বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। দোয়া করেন, এসকল ত্যাগ যেনো আল্লাহর দরবারে মঙ্গলজনক হয়। এ ত্যাগের বিনিময়ে আল্লাহ পাক যেন আমাদের পবিত্র একটি দেশ দান করে। যে দেশটা কোরআনের আইনে পরিচালিত হবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোটকে সঙ্গে নিয়ে ‘চারদলীয় জোট’ গঠন করেছিল বিএনপি। পরে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি বেরিয়ে গেলে যুক্ত হয় নাজিউর রহমান মঞ্জুর বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল নতুন ১২টি দলের সংযুক্তির মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা চারদলীয় জোট কলেবরে বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ দলীয় জোটে। এরপর জোটের পরিধি দাঁড়ায় ২০ দলে।

এমই/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর