জাতীয় বৃক্ষমেলা ২০২৪ শেষ হচ্ছে আজ। ৫ জুন এই মেলা শুরু হয়েছিল আগারগাঁওয়ে। আগে যেখানে বাণিজ্য মেলা বসত সেই মাঠে। এই মেলায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় শ খানেক স্টল বিভিন্ন জাতের গাছের পসরা সাজিয়েছিল। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বৃক্ষপ্রেমীরা মেলায় এসে তাদের পছন্দসই গাছ-গাছালি সংগ্রহ করেছেন। সরকারিভাবে বড় আয়োজনে দেশের বৃহৎ বৃক্ষমেলা এটাই। যা প্রতিবছর আয়োজন করে বন বিভাগ।
বিজ্ঞাপন
বৃক্ষমেলার শেষভাগে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের সমাগম ভালোই ছিল। গতকাল শুক্রবার বিকালে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, লোকে লোকারণ। ক্রেতাদের চাপে স্টল মালিক ও বিক্রিতাদের যেনো দম ফেলার ফুসরত নেই। শেষ মুহূর্তে বিক্রি-বাট্টাও হয়েছে ভালো।
নগরের অনেকেই এই মেলা থেকে তাদের ছাদ বাগানের জন্য বিভিন্ন জাতের ফলের কলমের গাছ ও ঘর সাজানোর জন্য ফুলের গাছ সংগ্রহ করেছেন।
আরও পড়ুন: ঢাকায় চলছে মাসব্যাপী বৃক্ষমেলা
বিজ্ঞাপন
মেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশ বন বিভাগের একটি স্টলকে ঘিরে। এই স্টলে বিলুপ্তপ্রায় ও দূর্লভ প্রজাতির বিভিন্ন গাছের চারা প্রদর্শন করা হয়। ১১ জুলাই থেকে এসব গাছের চারা কেনারও সুযোগ দেয় বন বিভাগ।
বন বিভাগের এই স্টলে পাওয়া যাচ্ছে ফলদ, বনজ ও ঔষধী গাছ। যার দাম মাত্র ১০ টাকা। এছাড়া দুই জাতের বাঁশের চারা প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করছে ২০ টাকায়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মেলায় কথা হয় গাজীপুরের বাসিন্দা আফসারের সঙ্গে। তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এই তরুণ বলেন, এবারের বৃক্ষমেলায় বেশ কয়েকবার এসেছি। প্রতিবারই কিছু না কিছু গাছের চারা সংগ্রহ করেছি। মেলা শেষ হচ্ছে শনিবার, তাই শেষবারের মতো এলাম। শুনেছি মেলার শেষের দিকে গাছের চারা কম দামে বিক্রি হয়।
আফসারের মতো অনেকেই মেলার শেষভাগে এসেছেন সাশ্রয়ী দামে গাছের চারা কিনতে। এদেরই একজন গাজী ইকবাল। তিনি বলেন, প্রতিবারই মেলার শেষের দিকে গাছের দাম কিছুটা কম রাখা হয়। স্টল মালিকরা মেলায় যেসব গাছ এনেছেন তা আর ফিরিয়ে নিতে চান না। সেজন্য কম দামেই বিক্রি করে দেন।
গত কয়েকবছর ধরেই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র সংলগ্ন এই মাঠেই বসছে বৃক্ষমেলা। এই মেলার জন্য নগরবাসী পুরো একটা বছর অপেক্ষা করেন। কেননা, এই মেলায় একই জায়গায় দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি নার্সারি, হর্টিকালচার সেন্টার ও গবেষণা কেন্দ্রের নানা জাতের ফুল-ফল ও ঔষধী গাছের চারা পাওয়া যায়। এছাড়াও মেলায় মেলে ঘর সাজানোর জন্য নানা জাতের, নানা রঙের বাহারি অর্কিড, গাছ লাগানো ও পরিচর্যা করার উপকরণও।
এই মেলায় শুধু ঢাকা শহরের ক্রেতা ও দর্শনার্থীই নয়, দেশের দূর-দূরান্ত থেকেও আসেন।
বন বিভাগের আয়োজনেই হচ্ছে বৃক্ষমেলা। তাই তাদের স্টলটি সাজানো হয়েছে নানান জাতের বাঁশ, দুর্লভ ও বিলুপ্তপ্রায় গাছের চারা দিয়ে। এসব গাছের চারা প্রদর্শনের পাশাপাশি বিক্রিও হচ্ছে নামমাত্র মূল্যে।
মেলায় বেসরকারি-বেসরকারি প্রায় শ খানেক স্টল অংশ নিয়েছে। এসব নার্সারিতে পাওয়া যাচ্ছে দেশ-বিদেশের নানা জাতের গাছ। তবে মেলায় এক চক্কর দিলে মনে হবে আম গাছের সংখ্যাই বেশি। আমসহ এসব গাছ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও মেলায় মিলছে বিভিন্ন ঘর সাজানোর ইনডোর প্লান্ট, গাছ লাগানোর উপকরণ, গাছ বাঁচানোর সার, হরমোনসহ নানা সামগ্রী। এমনকি মেলায় কিনতে পাওয়া যাচ্ছে ঢাউস আকৃতির গ্রিন হাউজও। মেলায় গাছে পানি দেওয়ার নানান জিনিসও পাবেন। পাবেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি দেওয়ার স্প্রিংকলার সিস্টেমও।
বৃক্ষমেলায় গাছ, চারা, বীজ কেনার জন্য যেমন অনেকেই আসেন তেমনি কেউ কেউ আসেন ঘুরতেও। ছুটির দিনে মেলা প্রাঙ্গনে পরিবার-পরিজনসহ নগরবাসীদের অনেকেই ঢু মারেন।
আজ ১৩ জুলাই শনিবার রাত আটটা পর্যন্ত চলবে জাতীয় বৃক্ষমেলা ২০২৪। এই মেলায় প্রবেশ করতে কোনো টিকিট লাগে না। বিনা খরচে গাড়ি ও বাইক পার্কিংয়ের সুবিধাও রয়েছে। মেলা থেকে গাছ কিনলে তা বহনের জন্য শ্রমিকও পাবেন।
এজেড