সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

বিশ্বব্যাপী সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে দেশীয় উদ্যোক্তাদের

মাহাবুল ইসলাম
প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

* গুরুত্ব পাচ্ছে ই-কমার্স ও স্টার্ট আপ

* নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য লোভনীয় বিনিয়োগ অফার


বিজ্ঞাপন


* দেশীয় প্রতিষ্ঠানের প্রশংসায় ভাসছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা

* পঞ্চম শিল্পবিল্পবের অংশীদার হতে তৎপর সরকার

* নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ৯০০ কোটি টাকার তহবিল

বিশ্ব অর্থনীতি নতুন দিগন্তে পা রাখার পথে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে পেছনে ফেলে বিশ্ব এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের জন্য। এজন্য উন্নত দেশগুলোর মধ্যে আগাম প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশও নিজেকে বিশ্বমঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করতে বেশ জোরাল পদক্ষেপ নিয়েছে।


বিজ্ঞাপন


বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকারের পরিকল্পনা এবং উদ্যোগগুলো দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ৭ এপ্রিল ঢাকায় শুরু হয়েছে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫’। এই সামিটে বিশ্বের ৫০টি দেশ থেকে ৫০০ জনেরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন, যা বাংলাদেশের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বিভিন্ন বড় ব্যবসা খাতের বিনিয়োগকারীরা ঢাকার পাশাপাশি দেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো পরিদর্শন করছেন, যেখানে আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন নাসার সঙ্গে চুক্তি সই করারও খবর এসেছে। এটি একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে, যেখানে দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী ব্যবসার সুযোগ।

রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে চলছে এই ইনভেস্টমেন্ট সামিট। এর বাইরে সম্মেলনে যোগ দেওয়া বড় ব্যবসা খাতের বিনিয়োগকারীদের নিয়ে ঢাকার বাইরে একাধিক অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করা হচ্ছে। এরইমধ্যে বিনিয়োগকারীদের চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত কোরিয়ান ইপিজেড ও মিরসরাইয়ের জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এনএসইজেড) এবং নারায়ণগঞ্জের জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করানো হয়েছে।

হোটেল কন্টিনেন্টালে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের এমন অংশগ্রহণ মিলনমেলায় রুপ নিয়েছে। নানা বিনিয়োগ অফার নিয়ে হাজির হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ছোট ও নতুন উদ্যোক্তাদের জন্যও লোভনীয় বিনিয়োগ অফার নিয়ে হাজির হয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান।

এমনিই একটি প্রতিষ্ঠান মোড়। যারা দেশীয় নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য নিয়ে এসেছে ‘ইনফিউশান এক্স লিপ ফান্ড’। যারা নতুন উদ্যোক্তাদের ইনোভেটিভ আইডিয়ায় এক মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করবে।

মোড়ের ম্যানেজার মৌত্রি দে বলেন, ‘ইনফিউশান পার্টনার একটি নতুন কোম্পানি। দুই মাস আগে এর যাত্রা শুরু হয়েছে। আমরা নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য ১ মিলিয়ন ডলারের ইনভেস্ট অফার নিয়ে হাজির হয়েছি। আমরা ইনোভেটিভ বিজনেস আইডিয়া নিয়ে কাজ করা উদ্যোক্তাদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করব। বাংলাদেশের উন্নয়নে যে কোম্পানির প্রভাব বেশি থাকবে সেখানেই বিনিয়োগ করা হবে। এই ফান্ডে ছোট উদ্যোক্তারাই অগ্রাধিকার পাবে’।

start-up-2এক্সেলারেটিং বাংলাদেশের স্টার্ট আপ স্পেশালিস্ট ও লিড বিজনেস কোচ বিএম বেনজির আহমেদ বলেন, ‘আমরা দেশের স্টার্ট আপ ও এসএমই উভয় উদ্যোক্তাদের জন্যই কাজ করি। আমাদের দেশে এসএমই টু স্টার্ট আপে যেতে একটি গ্যাপ আছে। সেটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা গত এক বছরে ৬৭০ জন স্টার্ট আপ উদ্যোক্তাকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এরমধ্যে ২৭০টি স্টার্ট আপ গ্রোথ স্টেজে গেছে। উদ্যোক্তাদের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের একটি ফান্ড অ্যারেজমেন্টের প্রক্রিয়াও চলছে। আমরা দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের মাঝে একটা সেতু বন্ধন তৈরি করে দিচ্ছি। এই সামিট দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের মাঝে মেলবন্ধন তৈরির ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা রাখবে।’

গুরুত্ব পাচ্ছে ই-কমার্স ও স্টার্ট আপ

শিল্প বিপ্লবের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হলো প্রযুক্তি। যেখানে গতানুগতিক ধারার বাইরে দেশেও জনপ্রিয় হচ্ছে ই-কমার্স ও স্টার্ট আপ বিজনেস মডেল। চার দিনব্যাপী এই সামিটের বড় একটি অংশজুড়েই আলোচনার বিষয় রয়েছে ই-কমার্স ও স্টার্ট আপ। যেখানে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা একসঙ্গে বসে বিশ্লেষণ করছেন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ই-কমার্স ও স্টার্ট আপ বিজনেসের সম্ভাবনা ও তা কাজে লাগানোর উপায় নিয়ে। যে আলোচনায় উঠে আসছে প্রযুক্তিভিত্তিক আগামীর বাংলাদেশের চিত্রও। যেখানে চাল-ডাল ডট কম ও প্রিয় শপের মতো অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশংসাও করছেন বিদেশি উদ্যোক্তারা।

start-up-4

ই-কমার্সের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো ভিত্তিক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল-জিএফআর ফান্ডের প্রেসিডেন্ট জেরেমি লিম বলেন, ‘অদূর ভবিষ্যৎ ব্যবসাকে ই-কমার্সে রুপ দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। সুতরাং আপনি এটাতে যত দ্রুত কাজ করবেন, ততই এগিয়ে থাকবেন। আর ই-কমার্স শুধু মাত্র একটি মার্কেট প্লেস নয় এটি ইকো সিস্টেমও। নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও আগামীর বাংলাদেশে এটি দারুণ একটি সম্ভাবনার। যেখানে প্রিয়শপের কার্যক্রম দেখে আমার বেশ ভালো লেগেছে। প্রতিষ্ঠানটির শুধু বাংলাদেশেই নয়, দেশের বাইরেও অনেক কাস্টমার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই তারা এগিয়ে যাচ্ছে। নতুন ই-কমার্স উদ্যোক্তারা অনেক সময় আশাহত হয়ে যান। মনে রাখতে হবে এটি গলফের মতোই।’

চালডালের সিইও ওয়াসিম আলীম বলেন, ‘পরিবর্তিত বাংলাদেশে আমরা স্বপ্ন দেখছি নতুন করে। আমরা একসময় ব্যাংকগুলো ঘুরে ঘুরে ঋণ পায়নি। এখন এ সমস্যাগুলো ক্রমান্বয়ে কেটে যাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এই যে আয়োজন তা সত্যিই প্রশংসনীয় আয়োজন। যা বাংলাদেশের সমৃদ্ধির পথকে ত্বরান্বিত করবে।’

start-up-3এদিকে বিনিয়োগ সম্মেলনে দেশীয় উদ্যোক্তাদের মুখোমুখি হচ্ছেন  যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসের সদস্য ব্যারোনেস রোজি উইন্টারটন, বহুজাতিক কোম্পানি স্যামসাংয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সাং-জু লি, কাপড়ের ব্র্যান্ড জিওর্ডানো ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কলিন মেলভিল কেনেডি কারির মতো সফল প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও প্রতিনিধিরা। যারা নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন। কথা বলছেন দেশীয় উদ্যোক্তাদের নানা সমস্যা, সমাধানের সম্ভাব্য পথ ও সম্ভাবনা নিয়ে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী জানান, ‘সংস্কারের এ বছরে আমরা বিনিয়োগকারীদের নিয়ে এসে নতুন বাংলাদেশ দেখাচ্ছি। বাংলাদেশের বিষয়ে বিশ্বের বড় বড় বিনিয়োগকারীদের ধারণা পরিবর্তন ও উন্নত করতে কাজ করছি।’

এদিকে দেশের নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ৮০০ থেকে ৯০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি জানান, এই তহবিল শুধু নতুন উদ্যোক্তাদের মূলধন সহায়তার জন্য নির্ধারিত হবে। বাংলাদেশ বাণিজ্যের পাশাপাশি বিনিয়োগের জন্যও একটি উপযুক্ত গন্তব্য হবে।

এমএইচ/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন