*চরম টানাপোড়েনে ২৫-৩০ হাজার টাকা আয়ের সংসার
*যখন তখন বাজারে মূল্যের বিস্ফোরণ
*হাজার টাকাতেও ব্যাগ ভরে না বাজারের
*গরুর মাংস, জাতীয় মাছ যেন স্বপ্ন বিলাস
*মুখ লুকিয়ে টিসিবির লাইনে মধ্যবিত্তরা
নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। লাগামহীনভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও সে তুলনায় বাড়েনি সাধারণ মানুষের আয়। এতে কাটছাঁট করে অনেক কষ্ট করে টেনেটুনে চলছে নিম্ন মধ্যবিত্তের সংসার। মাসিক ২৫-৩০ হাজার টাকা আয় দিয়েও তিন সদস্যের পরিবারের সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে রাজধানীবাসীর। বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে অনেকেই স্ত্রী-সন্তান গ্রামে পাঠিয়ে নিজে কোনোরকম বসবাস করছেন ঢাকা শহরে।
বিজ্ঞাপন
বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির কারণে ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের উপর। বিশেষ করে কঠিন চাপের মধ্যে আছেন মধ্য আয়ের মানুষ। এই মুহূর্তে মূল্যস্ফীতি ও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আরও কঠিন হয়ে পড়বে সাধারণ মানুষের জীবন।
রাজধানীতে কয়েকজন সাধারণ মানুষের কথা হয়। তারা জানান, খুব টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাদের সংসার। সঞ্চয় ভেঙ্গে ধার দেনায় সংসার চলছেন তারা।
রাজধানীর বছিলা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন আরিফুল। ছোট ভাইসহ তিন জনের সংসার তার। মোহাম্মদপুরের একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি, বেতন পান প্রায় ২৫ হাজার টাকা, বাসা ভাড়া যেন কম লাগে সেজন্য থাকেন ভেতরের দিকে রাজধানীর এক প্রান্তে। তিনি বলেন, ২৫-২৬ হাজার টাকা বেতন দিয়ে সংসার চালানো খুব কঠিন হয়ে গেছে। বাসাভাড়া দিয়ে আর বাজার সদাই করে হাতে কিছুই থাকে না। বেতন পাওয়ার ৮-১০ দিনে মধ্যে তা শেষ হয়ে যায়। বাকি দিনগুলো অনেক কষ্ট করে চলতে হয়। গ্রামে বাবা-মা আছেন। বাড়িতে টাকা পাঠানো তো দূরের কথা উল্টা আরও নিয়ে আসার লাগে। হঠাৎ করে কোনো অতিথি আসলে টেনশনে পড়তে হয়।
বিজ্ঞাপন
একই আয়ের রাজধানীর আরেক বাসিন্দা মামুন বলেন, খুবই কাটছাঁট করে হিসাব নিকাশ করে চলতে হচ্ছে। প্রতি মাসেই ধার করতে হয়। জিনিসপত্রের যে দাম, বাজারে গেলে চোখে অন্ধকার দেখতে হয়। দুই জনের পরিবার নিয়েই চলা খুব কঠিন হয়ে গেছে।
>> আরও পড়ুন: ডেঙ্গুর প্রভাব নিম্নবিত্তের অর্থনীতিতে
একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মগবাজার এলাকার বাসিন্দা আমিনুর বলেন, ৩০ হাজার টাকার মতো ইনকাম করি। এই টাকা দিয়ে চার সদস্যের সংসার চালানো যায় না। তাই পরিবারকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন এখানে মেসে থাকি।
টানাপোড়েনের ২৫-৩০ হাজার টাকা আয়ের সংসার
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেউ যদি মাসিক ২৫-৩০ হাজার টাকা ইনকাম করেন তবে তার বাসা ভাড়ার পেছনেই চলে যায় কম করে হলেও ৮-১০ হাজার টাকা। তাও রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র বাদ দিয়ে ভেতরের এলাকার দিকে বাসা নিতে হয়। পাশাপাশি গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিলের জন্য আরও গুনতে হয় ২৫০০-৩০০০ টাকা। যদি সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করতে হয় তবে এখানে আরও এক হাজার টাকা বাড়তি খরচ হয়। অর্থাৎ শুধুমাত্র বাসা ভাড়ার পেছনেই ব্যয় হচ্ছে ১২-১৪ হাজার টাকা।
খুব কাটছাঁট করে তিনজনের একটি পরিবারের মাসিক ব্যয় হয় ২৬,০০০-৩০,০০০ টাকার বেশি। যারা মাসিক এই টাকা রোজগার করেন সঞ্চয় বলতে কিছু থাকে না তাদের। তার উপর যদি বাসায় কোনো মেহমান আসে কিংবা কোনো কারণে ওষুদপত্র কিনতে হয় তবে ধার করা ছাড়া তাদের কোনো উপায় থাকে না।
এরপর তিন জনের সংসারে প্রতিমাসে বাজারের সর্বনিম্ন দামের ২৫ কেজির এক বস্তা চাল কিনতে ব্যয় হয় ১৪০০ টাকা। নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারের মধ্যে এক মাসে মাছ-মাংস ৩০০০-৪০০০ টাকা, এক মাসে ডিম ৪০০-৫০০ টাকা, সয়াবিন তেল ৫ কেজি বোতল ৮০০ টাকা, প্রতিদিন হাফ কেজি করে দুধ কিনতে হলে মাসে ৫০ টাকা হিসেবে মাসে ১৫০০ টাকা, রসুন পেঁয়াজ মরিচ মশলা, চিনি সাবান ইত্যাদি পণ্য কম করে কিনতে গেলেও ১৫০০-২০০০ টাকা, আলু প্রতিদিন হাফ কেজি হিসেবে এক মাসে ৭০০ টাকা, সপ্তাহে ১ হাজার টাকার শাক-সবজির বাজার হিসেবে ৪০০০ হাজার টাকা। এছাড়াও পরিবারের একজন সদস্যের প্রতিদিন যাতায়াত করতে ৫০ টাকা ব্যয় হলে প্রতি মাসে খরচ হয় ১৫০০ টাকা।
এ হিসেবে খুব কাটছাঁট করে তিনজনের একটি পরিবারের মাসিক ব্যয় হয় ২৬,০০০-৩০,০০০ টাকার বেশি। যারা মাসিক এই টাকা রোজগার করেন সঞ্চয় বলতে কিছু থাকে না তাদের। তার উপর যদি বাসায় কোনো মেহমান আসে কিংবা কোনো কারণে ওষুদপত্র কিনতে হয় তবে ধার করা ছাড়া তাদের কোনো উপায় থাকে না।
এক হাজার টাকায় কি কি বাজার হয়
বর্তমানে দেশের সবথেকে বড় মূল্যমানের নোট হচ্ছে এক হাজার টাকা। যা ইনকাম করতে কোনো কোনো শ্রমজীবি মানুষকে ২-৩ দিন ঘাম ঝরাতে হয়। সেই এক হাজার টাকা নিয়ে বাজার করতে গেলে সেটা দিয়ে বাজারের যদি ছোট ব্রয়লার মুরগীও কেনা হয় তবে সেটার দাম পড়বে ২৫০ টাকার উপরে, তিন কেজি চাল ৬০ টাকা হিসেবে ১৮০ টাকা, এক কেজি ডাল ১১০ টাকা, এক কেজি সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা, ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা, ২৫০ গ্রাম রসুন ৬০ টাকা, ২৫০ গ্রাম আদা ৬০ টাকা, গরম মশলা ৫০ টাকা, হাফ কেজি চিনি ৭০ টাকা। কোনো ধরনের সবজি না কিনেও ২০ টাকা ঘাটতি থেকে যায়। অর্থাৎ দেশের সর্বোচ্চ মূল্যমানের নোটটি নিয়েও বাজারে গেলে দিয়ে তা দিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছু কেনা যায় না। চাল-ডাল-তেল আর কিছু মশলা কিনতেই তা শেষ হয় যায়। বর্তমান বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই বললেই চলে। আর এক কেজি গরুর মাংস কিনলে তো হাজার টাকার নোট একবারেই শেষ হয়ে যায়।
মাছ-মাংসের বাজারে আগুন জ্বলছেই
নিত্যপণ্যের বাজারে গিয়ে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন ক্রেতারা। যে পণ্যে হাত দিচ্ছেন সেটাই আগুন মনে হচ্ছে তাদের কাছে। গরিবের মাছ খ্যাত পাঙ্গাশ ছাড়া বাজারে তিনশ টাকার নিচে কোনো মাছ নেই। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় পাঙ্গাশ মাছ প্রতি কেজি ২৩০-২৫০ টাকা, রুই ৩০০-৩৫০ টাকা, কাতল ৩০০-৩৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২৩০-২৫০ টাকা, মৃগেল মাছের কেজি ৩০০ টাকা। বাতাসি মাছের কেজি ৩৫০ টাকা।
>> আরও পড়ুন: প্রস্তুতি ও নিরাপত্তায় চ্যালেঞ্জ দেখছেন অর্থনীতিবিদরা
এছাড়া বাজারে পোয়া মাছের কেজি ৪০০-৫০০ টাকা কেজি, চিংড়ি ৬০০-৮০০ টাকা কেজি, সুরমা মাছের কেজি ২৫০-৩৫০ টাকা কেজি, ট্যাংরা মাছ ৫০০-৬০০ টাকা কেজি। এক মাস আগেও যা ৫০-১০০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও মাংসের বাজারে ব্রয়লার ১৮০-১৯০ টাকা, সোনালী মুরগী ২৮০-৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গরুর মাংস-জাতীয় মাছ যেন স্বপ্ন বিলাস
সাধারণ মানুষ তথা মধ্যবিত্ত নিম্ন মধ্যবিত্তদের পাত থেকে উঠে গেছে গরুর মাংস ৫-৭ সাত বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে গরুর মাংসের দাম। ২০১৮ সালে ৫০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া গরুর মাংস এখন বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৮০০ টাকা। যা সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি ও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আরও কঠিন হয়ে পড়বে সাধারণ মানুষের জীবন।
অনেকেই বলছেন, এখন কুরবানি ঈদ কিংবা কোনো উৎসব ছাড়া গরুর মাংস খাওয়া হয় না। এছাড়াও যারা কোনো কারণে গরুর মাংসর পরিবর্তে খাসির মাংস কিনতে হয় তবে তাকে গুনতে হবে ১২০০ টাকা। যা নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে অসম্ভব প্রায়।
এছাড়াও দেশের জাতীয় মাছ ইলিশ। ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বের এক নম্বর দেশ হিসেবে বলা হয় বাংলাদেশকে। বাংলাদেশে মোট উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে। কিন্তু সেই জাতীয় মাছটিই মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষের হাতের নাগালের বাইরে। বাজারে একটা এক কেজি ইলিশ মাছ বিক্রি হয় এক হাজার টাকার উপরে। জাটকা ইলিশও মিলে না ৫০০ টাকায়। দাম বেশি হওয়ায় জাতীয় মাছ ইলিশ খাওয়া যেন মধ্য আয়ের মানুষের স্বপ্ন বিলাসের মতো।
যখন তখন বাজারে মূল্যের বিস্ফোরণ
যখন তখন হুটহাট করে বাড়ে নিত্যপণ্যের বাজার। ৫০-৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচ কখনো ৫০০-১০০০ টাকায় বিক্রি হয়। ৩৫-৪০ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১০০ টাকার উপরে। দেশে উৎপাদন কম হওয়ায় সম্প্রতি ১০০০ টাকা অতিক্রম করে কাঁচা মরিচের বাজার। পরবর্তীতে আমদানির পরে তা ২০০ টাকা কেজিতে নেমে আসে। বর্তমানে ২০০-২২০ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ। আবার ১০০-১১০ টাকা বিক্রি হওয়া ডিমের ডজন দেড়শ টাকা ছাড়িয়েছে। কয়েক মাস আগেই এক ডজন ডিম ১১০-১২০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এখন বাজারে তা ১৫৫-১৬০ টাকা। এক বছর আগে ১০০ টাকার নিচে বিক্রি হওয়া চিনি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকা। শুধু মরিচ, পেঁয়াজ, ডিম কিংবা চিনি নয়, হুহু করে বাড়ছে প্রত্যেকটি নিত্যপণ্যের দাম।
মুখ লুকিয়ে টিসিবির ট্রাকের লাইনে মধ্যবিত্তরা
স্বল্প মূল্যে নিত্যপণ্য কিনতে টিসিবির লাইনে দীর্ঘ হচ্ছে মানুষের লাইন। আগে যেখানে এই ধরনের লাইনে শুধু নিম্ন আয়ের মানুষেরাই দাঁড়াত, মধ্যবিত্ত মানুষদেরকেও দেখা যায় এই লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর মুগদা এলাকায় টিসিবির গাড়ি আসার অনেক আগে থেকেই নির্ধারিত স্থানে অপেক্ষা করতে দেখা যায় অসংখ্য মানুষকে। টিসিবির গাড়ি এলে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েন ট্রাকের ওপর। পণ্য নিতে যেন ট্রাক থামানোর তর সইছে না কারও। ট্রাক সাইড করতে করতে লাইনে দাঁড়িয়ে যান সবাই। এটা এখানকার নিত্যদিনের চিত্র।
ট্রাকের লাইনে দাঁড়ানো প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন বলেন, লাইনে দাঁড়িয়েছি স্বল্পমূল্যে কিছু জিনিসে কেনার জন্য। কি করব। উপায় নাই। আমরা যা বেতন পাই তা দিয়ে আগে সুন্দর মাস চলে যেত। কিন্তু এখন জিনিপত্রের যে দাম তাতে সংসার চলে না। বাধ্য হয়ে টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়েছি।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) এক গবেষণা বলছে, দেশে মূল্যস্ফীতি লাগামহীন, শিগগিরই সমাধানের লক্ষণ নেই। পাশাপাশি অনেকেই খাদ্য ব্যয় কমিয়ে আনতে খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছেন মাছ-মাংসসহ বিভিন্ন আমিষ।
সংস্থাটি বলছে, বর্তমানে রাজধানীতে বসবাসরত চার সদস্যের একটি পরিবারের মাসে শুধু মাত্র খাদ্য ব্যয় ২২ হাজার ৪২১ টাকা। মাছ-মাংস বাদ দিলেও খাদ্যের পেছনে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৫৯ টাকা। এটা ‘কম্প্রোমাইজড ডায়েট’ বা আপসের খাদ্য তালিকা। সংস্থাটি আরও বলছে, বিশ্ব মহামন্দায় বাংলাদেশকে ৭টি সংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সেগুলো হলো- ডলার সংকট, জ্বালানি সংকট, মূল্যস্ফীতি সংকট, খাদ্য সংকট, ইউক্রেন সংকট, কোভিড এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি ও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আরও কঠিন হয়ে পড়বে সাধারণ মানুষের জীবন।
এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, বর্তমানে দেশের উৎপাদন ক্ষমতা যেমন বেড়েছে, তেমনি আয়ও বেড়েছে। কিন্তু যে হিসেবে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে সে হিসেবে মানুষের আয় বাড়েনি। এর জন্য মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে যারা মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত আছেন তাদের চলা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের আয় বাড়লেও তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। আর দেশের ধনী গরিবের ব্যবধানটা অনেক বেশি হয়েছে। যে ধনী সে আরও ধনী হচ্ছে, আর গরিব আর গরিব হচ্ছে। অল্প সংখ্যক মানুষের কাছেই দেশের অধিকাংশ অর্থ। যার প্রভাব পড়েছে সব কিছুর উপর।
সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দীন আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, এখন বাজারের যে অবস্থা, আপনি যদি সব থেকে নিম্নভাবে জীবন-যাপন করতে চান, বাড়িভাড়া যদি ১০ হাজার টাকাও হয়, তার কম করেও হলেও ৩০-৩৫ হাজার টাকা ইনকাম দরকার। তার অন্য কোনো আশা-আকাঙ্খা থাকা যাবে না। যেমন শখ করে একটা কিছু কিনবে, কোথাও ঘুরতে যাবে এই ধরনের। তাহলে এই আয় দিয়ে কোনোরকম জীবন ধারন করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, যদি একটু স্বাভাবিকভাবে জীবন-যাপন করতে চায় তবে তাকে ৫০ হাজার টাকার উপরে মাসিক ইনকাম করতে হবে। আর আমাদের দেশের যেই জিনিসটার দাম একবার বাড়ে সেটা কমার ইতিহাস নাই। আমাদের দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে সরকার। খাদ্য মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিজে থেকেই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। যৌক্তিক যে দাম তার থেকে আরও বেশি বাড়িয়ে পরে জনগণকে দেখানোর জন্য ২ টাকা কমাচ্ছে। আসলেই ভোক্তাদের ন্যায্য মূল্যের জন্য যেমন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ছিল সেটার শুনানিও বন্ধ করে দিয়েছে। ট্যারিফ কমিশনের শুনানি করে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা কথা, অথচ ট্যারিফ কমিশন আছে কিন্তু গণশুনানি নাই। প্রতিযোগিতা কমিশনেরও একই অবস্থা। ভোক্তা অধিকার যে বাজার তদারকি করে সেখানেও তারা ব্যর্থ। এভাবে চললে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
টিএই/এএস