রোববার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

১৭ দিন পর পাড়ায় ফিরছেন খিয়াং সম্প্রদায়ের লোকজন

সুফল চাকমা
প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৫৭ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

গত ৬ এপ্রিল বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে খামতাং পাড়ায় দুই গ্রুপের গোলাগুলির ঘটনায় আটজন নিহত হওয়ার পর ভয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে আসা খামতাং পাড়ার খিয়াং সম্প্রদায় নিজ পাড়ায় ফিরে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাড়ার কারবারী (গ্রামপ্রধান) অংশৈহ্লা খিয়াং। আগামীকাল মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) তারা নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় প্রশাসন তাদের এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবে।

সোমবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে অংশৈহ্লা খিয়াং বলেন, ঘরবাড়ি ছেড়ে কতদিন থাকা যায়। ঘরে হাঁস-মুরগি, শূকর-কুকুর, রক্ষিত চাউল কিছুই নেই। সবকিছু চুরি করে নিয়ে গেছে। কলা-আম-লিচু-আনারসের বাগান ছিল। এখন কোনো কিছুই নেই।


বিজ্ঞাপন


কারবারী জানান, পাড়ায় অবস্থান করলে একদিকে ভয় আর আতঙ্ক অন্যদিকে নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রেও কতদিন অবস্থান করা যায়, এতে তারা এখন উভয় সংকটে পড়েছেন।

পাড়ার লোকজন রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়ার পাঁচ দিন পর ছয়জন মিলে পাড়ায় গিয়ে দেখে এসেছেন ঘরবাড়ির দরজা-জানালা ভেঙে, ঘরে রক্ষিত চাউল, আদা, হলুদ সব চুরি হয়ে গেছে। এমনকি আম-কাজু বাদাম, লিচু বাগান দুর্বৃত্তরা পুড়িয়ে দিয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ৭০ বছরের অংসা জায় খিয়াং বলেন, তার দুই একর কাজু বাদাম বাগান পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তিনি বলেন, পাড়াবাসীর মধ্যে হমপি খিয়াং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তার আনারস ৩০০, পাইনন্যা গুলা গাছ ১০০, চায়না তিন জাতের ৬০টি লিচু গাছ আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পাড়ার মোট সাতটি পরিবারের বাগান পুড়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এখন ঘরে ফিরে কী খাবেন সেটা নিয়ে খুব চিন্তিত আছেন বলে জানান পাড়া প্রধান অং শৈহ্লা খিয়াং।

রোয়াংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মান্নান জানান, খামতাং পাড়াবাসী পাড়ায় ফিরে যাচ্ছে বলে তিনিও শুনেছেন। এক্ষেত্রে পাড়াবাসী নিরাপত্তা চাইলে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলে জানান ওসি।


বিজ্ঞাপন


আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পাড়াবাসী অভিযোগ করলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

BB22

রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্বে রুমা উপজেলা নির্বাহী অফিসার) মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী জানান, খামতাংপাড়া থেকে রুমা উপজেলায় আশ্রয় নেওয়া ২৪টি খিয়াং পরিবার ঈদের আগেই পাড়ায় চলে গেছে। রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া ২৭ পরিবার আগামীকাল মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) পাড়ায় ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। ফিরে যাওয়ার সময় উপজেলা প্রশাসন থেকে গাড়ির ব্যবস্থা করা হবে।

রুমা উপজেলায় পাইন্দু ইউনিয়ন মুয়ালপি পাড়া থেকে রুমা মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ভবনে আশ্রয় নেওয়া ৫০ মারমা পরিবার কখন ফিরে যাবে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পাড়ার লোকজন যখন নিরাপদ মনে করবে তখন পাড়ায় ফিরবে।

গত ৬ এপ্রিল রোয়াংছড়ি উপজেলা সদর ইউনিয়নে খামতাং পাড়ায় দুই গ্রুপের গোলাগুলির ঘটনায় আটজন নিহত হলে ৭ এপ্রিল খামতাং পাড়ার লোকজন রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ৫৩ পরিবারের ২০৫ জন আশ্রয় নেয়। নেয়। পরে ২৬ পরিবার বিভিন্ন এলাকায় আত্মীয়-স্বজনের ঘরবাড়িতে আশ্রয় নিলে ২৭ পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে ছিল। রুমা উপজেলায় বম সোস্যাল কাউন্সিলে খামতাং পাড়া থেকে ৪৪ পরিবার আশ্রয় নেয়, সেখান থেকে ২০ পরিবার  বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের ঘর-বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল বলে জানিয়েছেন খামতাং পাড়ার কারবারী অংশৈহ্লা খিয়াং।

প্রতিনিধি/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন