নয় বছর পর আগামী ১৪ মে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ৫ম সমাবর্তন হতে যাচ্ছে।
শনিবার (১২ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত এক জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাবর্তনের লোগো উন্মোচন করা হয়েছে। কিন্তু লোগো উন্মোচনের পরপরই সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
বিজ্ঞাপন
শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই লোগো তাদের একদমই পছন্দ হয়নি। ডিজাইনটাও বেখাপ্পা, স্ট্যান্ডার্ড নয়। গুণগত মানসম্পন্নও নয়। তাদের মতে, লোগোটা পুণরায় বানানো জরুরি। এক্ষেত্রে ভালো ও পেশাগত লোগো ডিজাইনারদের দিয়ে লোগো তৈরি এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে লোগো তৈরির প্রতিযোগিতার মাধ্যমে লোগো তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ জুবায়ের হোসেন বলেন, লোগো বানানোর ক্ষেত্রে প্রোফেশনাল ডিজাইনার হায়ার করা অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ লোগোই হচ্ছে এতো বড় একটা প্রোগ্রামের ‘ট্রেইলার’। দয়া করে ভালো এবং পেশাগত ডিজাইনার দিয়ে লোগো তৈরি করুন। নয়তো শিক্ষার্থীদের দিয়ে ২ দিনের একটা ফ্রি লোগো তৈরির প্রতিযোগিতা দিয়ে দেখেন। শুধু গুগলে একটা লিংক তৈরি করে পেইজে ছেড়ে দিন। হাজারখানেক লোগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরাই বানাই দিবে।
তিনি আরও বলেন, এরপর সেই লোগোগুলোর মধ্য থেকে ১০টা লোগো পেজে দিয়ে ভোট নিন। যেই লোগো বেশি ভোট পাবে সেটা নির্বাচন করুন। আর ওই লোগো যে স্টুডেন্ট এর তাকে অনলাইনেই ফ্রিতে রিকগনাইজ করে পোস্ট করেন। আপনার টাকা, সময় আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি সবই রক্ষা হবে।
লোগোর সমালোচনা করে নাসিফ খান নামের আরেক চবি শিক্ষার্থী বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তনের লোগো স্পষ্টভাবে পোস্ট করা হয়নি, তার উপরে যা পোস্ট করা হয়েছে তাও অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের পছন্দ হয়নি। এটাই স্বাভাবিক, কারণ ন্যূনতম কালার গ্রেডিং ও কম্বিনেশন সম্বন্ধে ধারণা থাকলে কারোরই এই লোগো পছন্দ হওয়ার কথা নয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ডিজাইনার ভাই আছেন, অথবা বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে উন্মুক্ত লোগো ডিজাইনের প্রতিযোগিতা রাখতে পারে। এতে বেশি সময় লাগার কথা নয়। সর্বোচ্চ ২ দিন লাগবে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে, লোগোর পটভূমি সম্পর্কে লোগো ডিজাইনার চবির চারুকলা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, লোগোটা আসলে বিপ্লবকে মাথায় রেখে করা হয়েছে। চবির ৫ম সমাবর্তনের লোগোর দুইপাশে সবুজ ঘেরা দিয়ে বুঝানো হয়েছে চবিকে ঘিরে রাখা সবুজ প্রকৃতি, লোগোর নিচে শহীদ আবু সাইদের সেই আগুনঝরা প্রতিকৃতি দুইহাত সম্প্রসারিত করে দেওয়া হয়েছে, আর লাল রঙ দেওয়া হয়েছে বিপ্লবকে সমর্থন করার জন্য।
উন্মোচিত লোগোতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য, গৌরবময় ইতিহাস ও শিক্ষার আলোকে আগামীর পথচলার প্রতীকী চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সমাবর্তনের এ লোগো আগামী দিনের সব আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম, স্মারক ও প্রচারণায় ব্যবহৃত হবে বলেও জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে চবির ৫ম সমাবর্তন কমিটির সদস্যসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী বলেন, শিক্ষার্থীরা কোনোকিছু সম্পর্কে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে, এটা খুবই প্রশংসনীয়। তবে, লোগো পরিবর্তনের আর কোনো সুযোগ নেই। লোগোটি প্রফেশনাল ডিজাইনারদের মাধ্যমেই করা হয়েছে। বিগত সময়ে যারা সমাবর্তন নিয়ে কাজ করেছেন তারাও এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গতকালের মিটিংয়ে লোগোটি চূড়ান্ত হয়েছে।
৫ম সমাবর্তন স্যুভেনির উপ-কমিটি আহবায়ক ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-আমীন বলেন, লোগোটা তৈরি করেছেন আমাদের চারুকলার সহযোগী অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া। চবির ৪র্থ সমাবর্তনের লোগো তিনিই তৈরি করেছিলেন। লোগোটাতে আবু সাঈদ, লাল জুলাই, সবুজ ক্যাম্পাস ইত্যাদির মিশেলে তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন
তিনি আরও বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সমালোচনা সম্পর্কে সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করবো। তবে, সমস্যাটা হলো সময়ে। আমাদের সময়ের খুব সংকট। তাছাড়া, লোগো ছাড়া কোনো কাজই করতে পারছি না। সবকিছুতেই লোগোর প্রয়োজন পড়ে। এটা আমরা প্রায় দেড় মাসে চূড়ান্ত করেছি। নতুন করে লোগো তৈরি করতে গেলে আরও বহু সময়ের প্রয়োজন। দেখা যাবে আমাদের অন্যান্য সকল কাজই পিছিয়ে পড়ছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকার ব্যাপারে ইতোমধ্যেই সম্মতি জানিয়েছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
উল্লেখ্য, আগামী ১৪ মে অনুষ্ঠিতব্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট. ডিগ্রি প্রদান করা হবে।
প্রতিনিধি/টিবি