তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মহ বলেছেন, ভারতের স্বার্থে রামপাল বিদ্যুৎ, রাশিয়ার স্বার্থে রুপপুর পারমানবিক প্রকল্প, জাপানের স্বার্থে মাতারবাড়ী কয়লা প্রকল্পসহ পরিবেশ বিধংসী প্রকল্প বাতিল করতে হবে। কারণ এসব প্রকল্প দিয়ে লুটেরা রাশিয়া, চীনসহ ভারতীয় কোম্পানিগুলো লাভবান হলেও বাংলাদেশের পরিবেশ বিপন্ন হবে, উদ্বাস্ত হবে বাংলাদেশের মানুষ।
শুক্রবার (২৬ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় ২৬ আগস্টের ১৬তম ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডি দিবসে আমিন, সালেকিন ও তরিকুলের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ অর্পণের পর সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, গণ আন্দোলনের মুখে ফুলবাড়ীর মানুষের সঙ্গে যে ৬ দফা চুক্তি তার পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়ন না হলেও দেশি-বিদেশি মুনাফাভোগী একটি গোষ্ঠী এখনও ফুলবাড়ীর কয়লা নিয়ে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের নামে বন, নদী ও পরিবেশ ধ্বংস করে জনবিরোধী, পরিবেশ বিনাশী কোনো প্রকল্প নয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্র সীমার মধ্যে গ্যাসের বিশাল মজুদ আছে, সরকার সেদিকে না গিয়ে শুধু কয়লা তোলা নিয়ে ব্যস্ত। সরকার এখন বিদ্যুৎ সংকটের কথা বলে কয়লা উত্তোলন নিয়ে ব্যস্ত, কয়লায় পরিবেশ ধ্বংস হলেও শুধুমাত্র বিদেশি লুটেরা কোম্পানিগুলোর স্বার্থ রক্ষার জন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের দিকে ঝুঁকছে। আর এসব পরিবেশ বিধ্বংসী প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াভহ বিপদের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ২০০৬ সালের ২৬ আগস্টের গণআন্দোলনে যেসব নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্বতিতে ফুলবাড়ী কয়লা খনি বাস্তবায়নের প্রস্তাবকারী এশিয়া এনার্জি নামক একটি বহুজাতিক কোম্পানির ফুলবাড়ী অফিস ঘেরাও কর্মসুচি পালন করতে গেলে, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গণমিছিলের ওপর টিয়ারশেল ও গুলিবর্ষণ করে।
বিজ্ঞাপন
গুলিতে ঘটনাস্থলে নিহত হন সুজাপুর চাঁদপাড়া গ্রামের মকলেছুর রহমানের ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র তরিকুল ইসলাম (২০), বারকোনা গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে আমিন (১৫) ও উত্তর সাহাবাজপুর গ্রামের সালেকিন (১৭)। একই ঘটনায় দক্ষিণ সাহাবাজপুর গ্রামের প্রদীপ চন্দ্র, রতনপুর গ্রামের শ্রীমান বাস্কে, সুজাপুর গ্রামের বাবলু রায়সহ চিরতরে পঙ্গু হন প্রায় ৩ শতাধিক মানুষ।
এরপর ফুলবাড়ীর মানুষ গণ আন্দোলন গড়ে তোলে। ফলে ফুলবাড়ীর ওপর দিয়ে বাস, ট্রেন চলাচলসহ সব প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সারা দেশের সঙ্গে কয়েকদিন বিছিন্ন হয়ে যায় ফুলবাড়ীর যোগাযোগ । ফুলবাড়ীর মানুষের গণ আন্দোলনের মুখে ৩০ আগস্ট তৎকালীন সরকারের প্রতিনিধি দল ফুলবাড়ীবাসীর সঙ্গে একটি বৈঠক করে ৬ দফা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তির ১৬ বছর পেরিয়ে ১৭ বছরে পদার্পন করলেও বাস্তবায়ন হয়নি সেই ৬ দফা চুক্তি।
তেলগ্যাস খনিজ-গ্যাস সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি এবং ফুলবাড়ীবাসী সম্মিলিতভাবে ২০০৬ সাল থেকে ২৬ আগস্টের এই দিনটি ফুলবাড়ী শোক দিবস হিসেবে উদ্যাপন করে আসছে।
প্রতিনিধি/এইচই