গুচ্ছ গুচ্ছ ভাঁটফুল। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায় চিত্রিত এই ফুলের বিমুগ্ধতারই জানান দেয় ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’ কবিতায়। তিনি লিখেছিলেন এভাবে- ‘বাংলার নদ-নদী-ভাঁটফুল, ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিল পায়।’
এখন চৈত্র মাস। দেখা মিলছে এ বসন্তে ফুটে থাকা সব ফুলের সঙ্গে। পথের পাশে হঠাৎ দেখা পাওয়া ভাঁটফুল, কারও কাছে বনজুঁই। যারা অযত্নে গাছে গাছে ফোটে, ছড়াচ্ছে সৌন্দর্য।
বিজ্ঞাপন
শহর থেকে একটু বাইরে গেলেই এখন ভাঁটফুলের দেখা মিলছে। গ্রামীণ যেকোনো সড়কের পাশে, ফসলি খেতের পাশে, বাড়ির আনাচে-কানাচে গাছের ডালে ডালে ফুলগুলো সমবেত হয়ে উচ্ছ্বাসে ভাসছে। পথের পাশে এখন ফুলের তোড়া নিয়ে পথিককে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে ভাঁটফুল। এই ফুল দিনে তার শোভা মেলে ধরে, আর রাতে বিলায় সুগন্ধ।
শনিবার (২২ মার্চ) সকালে মৌলভীবাজার শহরের মনু নদের উত্তর পাড়ের রায়েশ্রী এলাকার পাকা সড়ক ধরে কিছুটা দূর যাওয়ার পর অনেকগুলো ভাঁটফুলের সঙ্গে দেখা হয়।
চলতি পথে ঝোপঝাড়ে ফুটেছে ভাঁটফুল। সাদা সাদা পাপড়ি মেলে ভাসছে তারা। পাপড়ির গোড়ার দিকে বেগুনি রঙের ছোঁয়া ভিন্নমাত্রা এনেছে ফুলে।
রায়েশ্রী এলাকার বাসিন্দা সৌমিক পাল বলেন, ‘বুনো ফুলটি গ্রামের পথগুলোর দুই পাশে, ঝোপঝাড়েও চমৎকারভাবে ফুটে আছে। রাতের আঁধারেও ফুলটির গন্ধ ভেসে বেড়ায় চারপাশে।’
বিজ্ঞাপন
কলেজ ছাত্রী উম্মে বিনতি বলেন, ‘পথের পাশে যখন ফুলগুলো দেখি, তখন মনে হয় কেউ যেনো আস্ত একটি ফুলের তোড়া তৈরি করে রেখেছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, ফুলটি চাষ না করেই আমরা এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারি।’
স্থানীয় সাংস্কৃতিককর্মী নির্বেন্দু নির্ধূত বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই গ্রামীণ রাস্তার পাশে এই ফুল ফুটে থাকতে দেখে আসছি। যা সত্যিই অপরূপ সুন্দর। কোনো রকমের পরিচর্যা ছাড়াই এই ফুল তার সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করছে মানুষজনকে।’
এই বুনো ফুল যে কত সুন্দর হতে পারে, তা দেখলেই বোঝা যায়, জানান শিক্ষক জাহাঙ্গীর জয়েস। তিনি বলেন, ‘এই ফুলকে কেউ ভাঁটফুল বা বনজুঁই হিসেবে চেনেন। পথিকের বসন্তকে রঙিন করতে যে ফুলের জুড়ি মেলা ভার, সেটি হলো ভাঁটফুল। তবুও এই সৌন্দর্য পরিচিত জংলী ফুল হিসেবেই। তবে এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মিষ্টি সুবাস পথিককে কাছে টানতে বাধ্য।’
জানা যায়, ভাঁটফুল এই গ্রামপ্রকৃতির অতিপরিচিত একটি বুনো উদ্ভিদ। এটি গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। অনেক নাম আছে তার—ভাঁট, ভাইট, বনজুঁই, ঘেটু ফুল। ভাঁটফুলের গাছ খুব একটা বড় হয় না। উচ্চতায় ২ থেকে ৪ মিটার পর্যন্ত হয়। ছোট গাছে তোড়ার মতো ফুল ফোটে। ভাঁটফুলের রঙ ধবধবে সাদা। মার্চ-এপ্রিল জুড়ে ফুল ফুটে থাকে।
প্রতিনিধি/একেবি