মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

রাউজানে নকল বিড়ি বিক্রি সিন্ডিকেটের হোতা মামুন মিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০২৫, ০১:৩৫ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

চট্টগ্রামের রাউজানে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রমরমাভাবে বিক্রি হচ্ছে নকল আকিজ বিড়ি। এই নকল বিড়ি সিন্ডিকেটের মূল হোতা রাউজানের ডাবুয়া ইউনিয়নের জগন্নাথ হাটে মামুন অ্যান্ড সন্স নামের দোকান মালিক মামুন মিয়া। কুষ্টিয়া ও রংপুর থেকে নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত আকিজ বিড়ি আমদানি করে স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি রাউজানের বিভিন্ন বাজারেও বিক্রি করেন তিনি। তার দোকানে বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, জরিমানা ও মামলা হলেও বর্তমানে সক্রিয়ভাবে নকল বিড়ি বিক্রি করে চলছে। এতে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডাবুয়া এলাকার শামসুল আলমের ছেলে মো. মামুন মিয়া ডাবুয়া জগন্নাথ হাটে মামুন অ্যান্ড সন্স নামের দোকানে দীর্ঘদিন ধরে নকল আকিজ বিড়ি বিক্রি করে আসছে। কুষ্টিয়া ও রংপুর অঞ্চলে উৎপাদিত বিড়িতে জাল ব্যান্ডরোল লাগিয়ে চট্টগ্রামের রাউজানসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে একটি অসাধু সিন্ডিকেট। এই অসাধু সিন্ডিকেট চক্রের মুলহোতা মামুন মিয়া। সে ওই সব অঞ্চল থেকে নকল আকিজ বিড়ি বিভিন্ন ট্রান্সপোর্টের গাড়ি এবং কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে রাউজানে আমদানি করে। পরে এসব নকল পণ্য রাউজানের বিভিন্ন এলাকার দোকানে সরবরাহ করা হয়।


বিজ্ঞাপন


স্থানীরা জানান, জাল ব্যান্ডরোলযুক্ত নকল আকিজ বিড়ি বিক্রির অভিযোগে পূর্বে মামুন অ্যান্ড সন্স নামের মামুন মিয়ার দোকানে বেশ কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবুও আইনের তোয়াক্কা না করে নকল বিড়ির ব্যবসা দীর্ঘদিন যাবৎ পুরোদমে চালিয়ে আসছে সে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়ম অনুসারে ২৫ শলাকার ১ প্যাকেট বিড়ির দাম ১৮ টাকা। কিন্তু নকল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে এক প্যাকেট বিড়ি ৮ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

মামুন মিয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগ নেতা ও ডাবুয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রহমান চৌধুরী ওরফে লালু চেয়ারম্যানের ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে এই নকল বিড়ির ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নকল বিড়ি ব্যবসার মুনাফার একটি অংশ আওয়ামী নেতাদের অ্যাকাউন্টে জমা হতো। এছাড়াও মামুনের বিরুদ্ধে জুলাই ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

জগন্নাথ হাট বাজার কমিটির এক সদস্য জানান, নকল বিড়ি ব্যবসায়ী মামুনকে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে। তবুও সে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সকল ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় আনা হোক।

akij1


বিজ্ঞাপন


জানা গেছে, চলতি বছরের ৯ মার্চ পুলিশের উপস্থিতিতে মামুন মিয়ার দোকান থেকে ৩৪০ প্যাকেট নকল আকিজ বিড়ি উদ্ধার করা হয়। সেময় আসামির বিরুদ্ধে নকল বিড়ি বিক্রির অপরাধে রাউজান থানায় মামলার আবেদন করা হলে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীতে গত ১৩ মার্চ নকল আকিজ বিড়ি বিক্রির অপরাধে মামুন মিয়ার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরির রাউজান এলাকা ডিলারশীপ ম্যানেজার আব্দুর রহমান মামলা দায়ের করে।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, আকিজ বিড়ির ট্রেডমার্ক জাল করে নকল বিড়ি বিক্রির দায়ে ৪৮৩/৫০২ (২) ধারা ও সরকারি শুল্ক কর পরিশোধিত প্রতীক জাল জালিয়াতি করে সরকারি রেভিনিউ ফাঁকি দেওয়ায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ এর ২৫ এ (সি) ধারায় অত্র মামলা বিজ্ঞ আদালতে দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু পূর্বক শাস্তির বিহীত ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।

পরবর্তীতে এই মামলা তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৯ সালের ১০ আগস্ট ভ্রাম্যমাণ আদালত মামুন মিয়ার দোকানে অভিযান পরিচালনা করে। এসময় বিপুল পরিমাণ নকল বিড়ি, সিগারেট ও জর্দা উদ্ধার করে। আসামির দোকান ও গোডাউন সিলগালা করে এবং ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করে।

এ বিষয়ে আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরি লিমিটেডের চট্টগ্রাম অঞ্চলের ব্যবস্থাপক (ইনচার্জ) মো. জসিম উদ্দিন জানান, আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরি লিমিটেডের সুনাম নষ্ট করতে কিছু অসাধু চক্র নকল আকিজ বিড়ি তৈরি করছে। এই অবৈধ ব্যবসার আড়ালে সরকারকে রাজস্ব বঞ্চিত করে একটি সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। নকল বিড়ি বন্ধ করতে আমরা পুলিশ, র‍্যাব, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের সহযোগিতা কামনা করছি।

এমএইচটি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর