গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, ৭২ এর সংবিধানের প্রতি কোনো মায়া-মোহ রাখার জায়গা নেই। তিনি জানান, আমাদের আন্দোলন নতুন কিছু উত্থাপন করার সুযোগ দিয়েছে, তবে এর মধ্যেও অনেক বিভক্তি ও বিতর্ক রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে কোনো ফলপ্রসূ হবে না, বরং গভীর ধৈর্যের সাথে এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বরিশাল নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে অনুষ্ঠিত একটি আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দিতে গিয়ে অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে এবং এই পরিস্থিতি থেকে আমাদের রক্ষা পেতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পরও সরকারিভাবে কখনও তার স্মৃতি রক্ষার জন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, এবং ২০২৪ সালের আন্দোলন সেই সকল স্মৃতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা আমরা চাই না।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তাদের জান-রক্ত দিয়ে সফল হয়েছে। তবে, তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যদি শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার না করা হয়, তবে ফের স্বৈরাচারের উত্থান ঘটতে পারে।
অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান শিক্ষা ক্ষেত্রের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, মেধার প্রশ্ন তুলে না, বরং সকল শ্রেণির ছেলেমেয়েকে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বুনিয়াদি শিক্ষা নিশ্চিত করা উচিত। এজন্য স্কুল-কলেজ, ছাত্র-শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ানো এবং শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে তোলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, বিপ্লবের ইতিহাস দেখলে দেখা যায়, বিপ্লব নিজেই নিজের সন্তানদের খেয়ে ফেলে। যারা আন্দোলনের স্বার্থে একত্রিত হয়েছিল, তারা আজ নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে। তিনি প্রশ্ন করেন, কেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে কোনো সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি একই অভিযোগ স্বাস্থ্য খাতেও উত্থাপন করেন।
ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, চিকিৎসার জন্য অনেকেই বিদেশে যাচ্ছেন, কিন্তু দেশে বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তিনি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ভারত ও রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি হওয়া সত্ত্বেও দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি অব্যাহত নেই।
বিজ্ঞাপন
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, সরকারের উচিত দেশের পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা এবং শ্রমিকদের বেতন প্রদান করা। কিন্তু এ বিষয়ে সরকারের কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি।
গণ-অভ্যুত্থান ও গণআকাক্সক্ষার প্রেক্ষিতে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় আরও বক্তৃতা দেন, বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের সভাপতি জহিরুল ইসলাম কচি, ববির বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান উন্মেষ রায়, সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার সরকার, স্টুডেন্ট এক্টিভিস্ট সাইদুল হক নিশান, বরিশাল ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি অ্যাডভোকেট একে আজাদ, অ্যাডভোকেট তপংকর চক্রবর্তী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি বরিশাল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ দুলাল মজুমদার। সভাটি সঞ্চালনা করেন জেলা গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক হুজাইফা রহমান।
প্রতিনিধি/এইউ