রোববার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

১০ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে যুবদল নেতার বিরুদ্ধে ভাঙচুর-লুটপাটের অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি, পটুয়াখালী
প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৫ এএম

শেয়ার করুন:

loading/img

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. আলাল প্যাদা দশ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে দোকান ও বাড়ি-ঘর ভাঙচুর-লুটাপাট করেছেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে পটুয়াখালী দ্রুত বিচার আদালতে মামলা করে বাড়ি ছাড়া হয়েছেন মামলার বাদী পারভিন বেগম (৫০) ওর তার পরিবারের সদস্যরা। সবকিছু হারিয়ে বিচারের আসায় আদালতের বারান্দায় বারান্দায় ঘুরছেন পারভিন।

বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বারান্দায় দেখা যায় পারভিন বেগমকে ছুটাছুটি করছেন। তার আইনজীবীকে বলছেন স্যার আমি বাড়িতে যাইতে পারছি না। আমি বাড়িতে গেলে ওরা আমাকে মেরেই ফেলবে। আমাকে একটু বাড়িতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন, আর কতদিন মানুষের বাড়ি বাড়ি থাকব।


বিজ্ঞাপন


আইনজীবী আদালতের মধ্যে গেলে পারভিন বেগম বারান্দার বেঞ্চে চরম হতাশা নিয়ে বসে থাকেন। সাংবাদিক গিয়ে প্রশ্ন করলে কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমর কিছু নাই, দোকান ও ঘর-বাড়ি ভাঙচুর করেছে যুবদলের লোকজন। স্বর্ণালংকার টাকা পয়সা যা ছিল সবকিছু নিয়ে গেছে ওরা। রান্নাঘরের চুলা পর্যন্ত ভেঙে ফেলেছে। এখন কোথায় যাব, বাড়িতে গেলে ওরা আমাকে আবারও মারধর করবে।

পারভিন বেগমের বাড়ি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের চর ইমারশন গ্রামে।

IMG-20241113-WA0070

তিনি আরও বলেন, কিছু জমি নিয়ে ঝামেলা চলছে প্রতিবেশীদের সঙ্গে। ওই জমি চাষাবাদ করতে গেলে যুবদল নেতা মো. আলাল প্যাদা আমাদের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমি চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে শনিবার (৩১ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে আমার বাড়ি ও দোকানে হামলা করেন আলাল প্যাদা, মো. জুয়েল প্যাদা, মো. বেলাল, মো. বশির,  মো. হাসান হাওলাদার ও রাতুল মীরসহ ২০/২৫ জন লোক। এসময় বাড়ি থেকে প্রায় আড়াই ভারি স্বর্ণালংকার, ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা, ২টি মোটরসাইকেল ও বিভিন্ন আসবাপত্রসহ মূল্যবান প্রায় ১৩ লাখ টাকার মালামাল ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। আমার ভাই ও ভাইপোসাহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে তারা মারধর করে হাত-পা ভেঙে দিয়েছেন। আমি কোনমতে জীবনটা নিয়ে এক কাপড়ে আত্মীয়র বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। আমরা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালী দ্রুত বিচার আদালতে মামলা করেছি।


বিজ্ঞাপন


বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মহিউদ্দিন জানান, আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে পটুয়াখালী গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসিকে ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ দেন। দীর্ঘ দুইমাস তদন্ত শেষে আদালতে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশ।

মামলার তদন্ত কারী পটুয়াখালী গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মো. মহসিন হাওলাদার  বলেন, তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে তদন্ত রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

যে কারণে চাকরি ছাড়লেন আবু সাঈদের দুই ভাই

চাঁদাবাজি আর লুটপাটের বিষয়টি অস্বীকার করে ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. আলাল প্যাদা বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে গলাচিপার কিছু লোক দিয়ে আমার এক ভাইকে মারধর করিয়েছে তারা। পরে আমি এলাকার মানুষ নিয়ে তাদের চারজনকে আটক করে রাঙ্গাবালী থানায় দিয়েছি। এ ঘটনায় আমরা তাদের নামে মামলা দিয়েছি।

রাঙ্গাবালী উপজেলা যুবদলের সভাপতি আসাদুজ্জামান অরুণ মীর বলেন, শুনেছি জমি নিয়ে  তাদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। এবিষয়ে স্থানীয়ভাবে সালিশ মীমাংসা হয়েছে। সালিশিতে মো. আলাল প্যাদাদের ২ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। তবুও পারভিন বেগম মামলা উঠায়নি।

পারভিন বেগমের অভিযোগ বিভিন্ন রাজনৈতিক লোকের চাপে তিনি সালিশ মিমাংসায় বসেছেন। সেখানেও তাকে মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে।  

পটুয়াখালী জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. শিপলু খান বলেন, কেউ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ বা চাঁদাবাজি করে থাকলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এই ক্যাটাগরির আরও খবর