শখ করে একটি কুকুর পালন করতে গিয়ে দিনাজপুরে প্রথম বাণিজ্যিক কুকুরের খামার গড়ে তুলেছেন। কুকুর প্রেমী এই খামারের মালিক জাহিদ ইসলাম সোহাগ। খামার থেকে প্রতি বছর তিনি আয় করছেন ২০ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকার অধিক।
কুকুর প্রেমী খামারের মালিক জাহিদ ইসলাম সোহাগ দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ি এলাকার বাসিন্দা।
বিজ্ঞাপন
দিনাজপুর শহর থেকে দুই কিলেমিটার উত্তরে চেহেলগাজী ইউনিয়নের উত্তর নয়নপুর এলাকায় ‘ডগ হাউজ’ নামে এই কুকুরের খামার। প্রায় সাড়ে ৯ বছর আগে শখের বশে সোহাগ প্রথমে একটি ও পরে দু’টি বিদেশি কুকুর নিয়ে শুরু করেন এই খামারের যাত্রা। কুকুরের প্রথমে তিনটি ও পরে সাতটি বাচ্চা প্রজননের মাধ্যমে তার ভাগ্য খুলে যায়। বর্তমানে ১৩ প্রজাতির ছোট বড় প্রায় ৪৮টি কুকুর রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
অনলাইন মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে তিনি শুরু করেন কুকুর বিক্রি। অধিক লাভে তিনি শুরু করেন বিভিন্ন জাতের বিদেশি কুকুর সংগ্রহ ও প্রজনন প্রক্রিয়া। দেশ-বিদেশের কুকুর প্রেমীরা ব্যতিক্রমী এই খামার থেকে কিনে নিয়ে যান পছন্দের কুকুর।
খামারে কুকুরগুলোর পরিচর্যায় থাকা সাকিব ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি এই ডগ হাউজ থাকি। এদের সকালে খাবার দেই। বড় ডগগুলোকে দু’টি করে ও ছোট ডগগুলোকে একটি করে ডিম দিয়ে থাকি। আর দুপুরে রাতে মাংস-ভাত দেওয়া হয়। এদের প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে গোসল করাই। ৪টার দিকে ডগদের চিরনি করে থাকি। কুকুরগুলো খুবই বন্ধু সুলভ। এদের সঙ্গে দিনে দুই থেকে তিন বার খাঁচা থেকে বের করে খেলাধুলা করি।
এই খামারের প্রতিবেশী এজাজ আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের বাড়ির পাশে কুকুরের খামার ওঠায় আমরা অনেকটা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারি, কারণ বিদেশি কুকুরগুলো অত্যন্ত সাহসী এবং তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন। আমাদের এলাকায় কোনো দুষ্কৃতিকারী প্রবেশ করতে পারে না। দুষ্ট প্রকৃতির লোক আমাদের গ্রামে আসলে এই কুকুরগুলো অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে প্রতিহত করে। কুকরের খামারের কারণে আমরা অনেকটা নিরাপদ বসবাস করছি।
ডগ হাউজ থেকে স্পিস জাতের কুকুরের ক্রেতা শুভ নামের একজন কুকুর প্রেমী ঢাকা মেইলকে বলেন, স্পিস জাতের কুকুরটি অ্যাডভান্সড লেবেলের ডগ। খুবই মিশুক ও গার্ড ডগ। আমার পরিবার এই কুকুর পেয়ে আনন্দিত। সঙ্গে বাড়ি ও গোডাউন সুরক্ষিত বলেও জানান তিনি।
ডগ হাউজের মালিক জাহিদ ইসলাম সোহাগ ঢাকা মেইলকে বলেন, এখন আমার খামারে আমেরিকান লাসা, জাপানি লাসা, চায়না লাসা, জার্মান শেপার্ড, ব্লাক শেপার্ড, উল্ফ, এলসেশিয়ান, গোল্ডেন রিটাইভারসহ ১৩ প্রজাতির ৪৮টি কুকুর রয়েছে। প্রকারভেদে এসব কুকুর ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। বাণিজ্যিকভাবে কুকুর বিক্রিতে আমার প্রতিবছর ৭ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় হয়।
দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সারোয়ার হাসান ঢাকা মেইলকে বলেন, গবাদি প্রাণীর খামারের পাশাপাশি দিনাজপুরে অনেকেই পোষা পাখি বা প্রাণী বিশেষ করে কুকুর বিড়াল ও খরগোশ পালনে আগ্রহী হচ্ছে। বাসায় ১টি, ২টি কুকুর বিড়াল পালনকারীর সংখা অনেক হলেও বাণিজ্যিকভাবে কুকুরের খামার বা কুকুর পালন করার চিন্তা করেন দিনাজপুর জেলার নয়নপুরের মো. জাহিদ হাসান সোহাগ। বর্তমান খামারে আমেরিকান লাসা, জাপানি লাসা, জার্মান শেপার্ড, ব্লাক শেপার্ড, ইত্যাদি জাতের মোট ৪৮টি কুকুর আছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগ নিয়মিতভাবে চিকিৎসাসেবা, টিকা প্রদান ও উন্নত ব্যবস্থাপনার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশে সঙ্গী, প্রাণী হিসেবে কুকুর অপরিহার্য হয়ে উঠছে দিনকে দিন। আমি সোহাগ সাহেবের এমন ও উদ্দ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
প্রতিনিধি/এসএস