ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে কেউ নৌকা বা কলা গাছের তৈরি বাহন, কারও হাতে জাল আবার কারও হাতে মশারি নিয়ে নেমে পড়েছে মাছ ধরতে। কেউ নামে সখের বসে, কেউ ঐতিহ্যের বাহক হিসেবে মাছ ধরতে নামে দিঘীতে। শত বছরের ঐতিহ্য এই মাছ ধরা উৎসবে মেতে ওঠেন। বছরের এক দিন ৩২টি জালের মাধ্যমে এই উৎসবের আয়োজন করে ফোরকার পাড় ঐতিহাসিক দিঘীর মালিকরা।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (২০ এপ্রিল) সকাল ৮টায় ৩২টি জাল এক সঙ্গে ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর ইউনিয়নের ফোরকারপাড় দিঘীতে মেরে শুরু হয় এই উৎসবের কার্যক্রম।
স্থানীয়রা বলেন, সকাল হতে দূর-দূরান্ত থেকে পরিবারের সদস্যরা মাছ ধরার জন্য আসেন। মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে পুকুরের পাড়ে বসে থাকেন। সময় হওয়ার সঙ্গে নেমে পড়েন পুকুর বা দীঘিতে। মাছ ধরার জাল, খইয়া জাল, পলো ও মাছ রাখার খালুই নিয়ে মাছ ধরতে নামেন। আবার যাদের মাছ ধরার সরঞ্জাম নেই তারাও হাত দিয়েই মাছ ধরেন। মাছ ধরা দেখতে এ সময় বিলের চারপাশে ভিড় জমায় শতশত মানুষ। মাছ না পেলেও আনন্দের কমতি ছিল না কারও।
আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর দীঘির মালিকরা মিলে মাছ ছাড়ে। তারপর বছরের একটি সময় মাছ ধরার জন্য পুকুরে জাল ফেলে ওই মালিকরা। তারা তাদের বাপ দাদারের রেওয়াজটি এখনও চালু রেখেছে। যেদিন মাছ ধরে সেই ওই এলাকা একটি উৎসবের নগরিতে পরিণত হয়।
বিজ্ঞাপন
মাছ ধরতে আসা আবির বলেন, আমি প্রতিবছর আসি মাছ ধরতে। এখানে আসলে আমাদের ঈদ ঈদ মনে হহয়। অনেক লোক একসঙ্গে মাছ ধরতে আসে। কেউ কলা গাছের ভেলা কেউ বা আবার নৌকা দিয়ে মাছ ধরছে। এটা আমাদের ভালো লাগে।
ডামুড্যা পৌর এলাকার কানাই লাল দাস বলেন, ছোটবেলা বাবার সঙ্গে ফোরকার পাড় দিঘিতে মাছ ধরতে আসতাম। বাবার পর এখন আমি মাছ ধরায় অংশ নিই। জালে যখন বড় বড় মাছ ওঠে তখন আমাদেরও খুশিতে মন ভরে যায়। আজ মোটামুটি ভালো মাছ পেয়েছি।
আরও পড়ুন
আয়োজন কমিটির সদস্য বিল্লাহ হোসেন বলেন, দুই শত বছর ধরে আমরা এই রেওয়াজটি করে আসছি। আমরা মালিক পক্ষ যারা সবাই মিলে উৎসব করি এই এই দিনটিতে। একসঙ্গে এক সময় জাল ফেলি দিঘীতে। আমরা মাছে ভাতে বাঙালি আর মাছ ধরা আমাদের ঐতিহ্য এটি উৎসব। আমরা নতুন প্রজন্মকে এই মছ ধারা একটি উৎসব হিসেবে উপহার দিতে চাই।
প্রতিনিধি/এসএস