শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

শিশু পার্কে আগতরা ফিরছেন ‘গোমড়ামুখে’

মাহফুজ উল্লাহ হিমু
প্রকাশিত: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫৯ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img
ছবি: ঢাকা মেইল

ইট-পাথরের নগরী ঢাকা। এখানে শিশুদের জন্য বিনোদনের স্থান নেই বললেই চলে। হাতেগোনা যে কয়টা বিনোদন কেন্দ্র রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম শাহবাগের ‘শহীদ জিয়া শিশু পার্ক’। কিন্তু উন্নয়নের নামে সেই পার্কটিও বন্ধ রয়েছে প্রায় ৫ বছর ধরে। ফলে বিভিন্ন উৎসবের ছুটি কিংবা অবসরে ঘুরতে আসা দূর-দূরান্তের শিশু-কিশোরদের পার্কের গেট থেকেই ফিরতে হচ্ছে গোমড়ামুখে।  

পার্কের গেটে ‘সাবধান, পার্কের উন্নয়ন কাজ চলছে’— লেখা সংবলিত সাইবোর্ড ঝুলছে ২০১৯ সাল থেকে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে রাজধানীর প্রাণ কেন্দ্রে থাকা পার্কটি। দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় আশপাশে বসবাসকারী ও নিয়মিত এদিকে আসা অভিভাবকরা অবগত থাকলে বিপত্তিতে পড়েন দূর থেকে আশা মানুষজন। ফলে পার্কে ঘুরতে আসা শিশুদের হতাশ হয়ে ফিরতে হয়।


বিজ্ঞাপন


শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সরজমিনে পার্কের মেইনগেট ও আশপাশের এলাকায় ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

park

সরজমিনে দেখা যায়, বন্ধের সাইনবোর্ড টানানো গেটের নিরপত্তায় একজন প্রহরী ভেতরের অংশে বসে আছেন। পার্কের কাজে নিয়োজিত লোকজন গেট দিয়ে প্রবেশ করছেন ও বের হচ্ছেন। তবে নির্দিষ্ট লোকজন ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে নিলেই বাধা দিচ্ছেন কর্তব্যরত ব্যক্তি। দর্শনার্থীদের অবগত করছেন পার্ক বন্ধের বিষয়ে। 

জানতে চাইলে নিরপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি ঢাকা মেইলকে বলেন, ২০১৯ সাল থেকে পার্কটি বন্ধ আছে। ভেতরে যারা আছেন সবাই প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত লোকজন। ভেতরে দামি জিনিসপত্র আছে, এজন্য বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। ভেতরে প্রবেশ করতে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে। এ সময় পার্কে আসা দর্শনার্থীদেরও একই কথা বলতে দেখা যায়।


বিজ্ঞাপন


পার্কের প্রবেশ পথের চায়ের দোকানি জলিল মিয়া (ছদ্মনাম) ঢাকা মেইলকে বলেন, পাঁচ বছর ধরে পার্কটি বন্ধ। ভেতরে কাজ চলছে। এটা মোটামুটি সবাই জানে, ফলে প্রকল্পের কাজ করা লোকজন ছাড়া তেমন কেউ এদিকে আসে না। তবে সপ্তাহিক ছুটির দিন আর ঈদ, পূজা বা পহেলা বৈশাখের মতো উৎসবের সময় কিছু লোকজন আসেন। তাদের বেশিরভাগ ঢাকার বাইরের। ফলে পার্কটি বন্ধের ব্যাপারে তারা জানেন না। 

sisu

তেমনই একজন ফরিদপুরের জাওয়াদ হোসেন। স্ত্রী ও দুই শিশুকে সাথে নিয়ে পার্কে ঘুরতে এসে হতাশা নিয়ে ফিরে যেতে দেখা যায় তাকে। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ’বৃহস্পতিবার স্বজনকে নিয়ে পিজি হাসপাতালে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) এসেছি। আজ স্ত্রী-সন্তানরা এসেছে। সারাদিন হাসপাতালে ছিল, তাই ভাবলাম বিকেল বেলা শিশু পার্ক থেকে একটু ঘুরে যাই। কিন্তু এসে দেখি পার্কটা কয়েকবছর ধরে বন্ধ। আরও নাকি দুই বছর লাগবে কাজ শেষ হতে। 

কামরাঙ্গীর চর থেকে আসা আলমগীর হোসেন বলেন, ছুটির দিনে শিশুরা ঘুরতে চায়। ঢাকায় শিশুদের জন্য ঘুরতে যাওয়ার জায়গা খুবই কম। বাসা থেকে চিড়িয়াখানার দূরত্ব অনেক তাই রমনা পার্কে ঘুরে নিয়ে আসছি। আগে বাবার সাথে শিশুপার্কে আসতাম। আমি যেই আনন্দটা পেয়েছি তা আমার শিশুরাও পাক সেটাই চাচ্ছিলাম। অনেকদিন আগে বন্ধ শুনেছি, তবুও ঘুরে দেখা যে এখন চালু হয়েছে কিনা। কিন্তু এসে দেখি এখনও বন্ধ। গেটের লোক বললো, আরও দুই বছর বন্ধ থাকবে। বাচ্চারা তো এটা বুঝে না, তাদের কথা ঢুকতে দিলো না কেন।

জানা যায়, শিশু পার্কটি ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে বন্ধ রয়েছে। তখন পার্কের সামনে একটি বিজ্ঞপ্তি টানিয়ে এটি বন্ধ ঘোষণা করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় শিশু পার্কের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজ চলছে। এ জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় শিশু পার্ক সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে। 

sisu-park

পরে শিশু পার্কের জায়গায় ২০১৯ সালের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করে। পার্কটি ডিএসসিসি পরিচালনা করলেও ভূগর্ভস্থ ৬০০ গাড়ি পার্কিংয়ের কাজ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের অংশ হিসেবে। নথিপত্রে এই কাজ ২০২৪ সালের শেষ দিকে সম্পন্ন হবে বলা হলেও তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। নতুন নকশা অনুযায়ী শিশু পার্ক আগের মতো থাকছে না। পূর্বের টিকিট কাউন্টারের স্থলে একটি রাস্তা হবে। রাস্তার দুটি পথ দিয়ে যানবাহন বেসমেন্টে ঢুকবে। আগের কাউন্টারের স্থান থেকে রাস্তাটি সোজা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাবে। রাস্তার দুই পাশে থাকবে পানির ফোয়ার। টিকিট কাউন্টার হবে উদ্যানের ভেতরে পূর্ব পাশে। দর্শনার্থীরা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের পাশ দিয়ে উদ্যানে ঢুকে কিছুটা পশ্চিম দিকে হেঁটে শিশু পার্কের কাউন্টারে যাবেন।

এছাড়া শিশু পার্কে আধুনিক রাইড বসানোর জন্য ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর ডিএসসিসির বোর্ড সভায় ‘হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু পার্ক’ নামে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ৬০৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার এই প্রকল্প সম্প্রতি একনেকে পাস হয়েছে। যেখানে প্রকল্পের শুরু ২০২৩ সালের জুলাই এবং ২০২৬ সালের জুনে সমাপ্ত হওয়ার কথা রয়েছে। 

তবে দরপত্র আহ্বান ও ঠিকাদার নিয়োগ করে প্রকল্পটি শেষ করতে কমপক্ষে পাঁচ বছর লাগতে পারে। সেই হিসাবে ২০২৮ সালে কাজ শেষ হতে পারে। শিশু পার্ক আধুনিকায়নে মোট ১৫টি অত্যাধুনিক রাইড যুক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে সুপার এয়ার রেস, টি কাপ ৯, ফ্লাইং ক্যাসেল, মিনি কোস্টার, বাম্পার কার, ম্যাজিক বাইক, সুপার হ্যাপি সুইং, মেরি-গো-রাউন্ড ও ওয়াটার মেনিয়া থাকছে।

এমএইচ/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এই ক্যাটাগরির আরও খবর

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর


News Hub