রোববার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ভরসা ‘গোশত সমিতি’

জেলা প্রতিনিধি, নাটোর
প্রকাশিত: ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০৭ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

গরুর গোশত ভালোবাসেন না এমন মানুষ খুব কমই রয়েছে। কিন্তু অস্বাভাবিক ভাবে গোশতের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ গোশত খাওয়া যেন ভুলতে বসেছে। গরুর গোশত এখন যেন ধনীদের খাবারে পরিণিত হয়েছে। আর নিম্ন আয়ের মানুষের গরুর গোশত খাওয়া এখন স্বপ্নের মতো। কেউ চাইলেও আর সহজে কিনতে পারেন না। বছরের বিশেষ দিনগুলোতে এর দাম থেমে থাকে না। সে কারণে আর ইচ্ছা করলেও এসব নিম্ন আয়ের মানুষরা গরুর গোশত কিনতে পারেন না। গরুর গোশত খাওয়া তাদের স্বপ্নই থেকে যায়।

তবে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের একমাত্র ভরসা ‘গোশত সমিতি’। নাটোরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে এ সমিতি। বছরে দুই ঈদ, শবে বরাত ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সবার চাহিদা 'গোশত সমিতি'।


বিজ্ঞাপন


ভূক্তভূগি পরিবার সপ্তাহিক বা মাসিক নির্ধারিত টাকা জমাদানের মাধ্যমে  'গোশত সমিতি' শুরু করেন। সপ্তাহ বা মাসে অল্প অল্প সঞ্চয়ের টাকা সমিতিতে জমা করেন। এতে করে বছরের শেষে ভাল অঙ্কের টাকা সমিতিতে জমা হয়। সমিতির সকল সদস্যদের জমানো টাকায় কেনা হয় গরু। এরপর জবাইয়ে পর তা সমিতির সমস্যদের মাঝে ভাগ বা বন্টন করা হয়। এতে করে বাজারে দোকানের চেয়ে অনেক কম দামে গোশত পাওয়া যায়। এ 'গোশত সমিতি'র ফলে নিম্ন ও মধ্য আয়ের পরিবারগুলো সহজে খেতে পান গোশত। ফলে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ব্যাপক ভাবে দিনে দিনে প্রচলন ঘটছে 'গোশত সমিতি'।

নাটোর সিদ্দিগ্রামের গোশত সমিতির টাকা জমাদানকারী মো. দুলাল সরকার জানান, অনেক গরীব মানুষ আছেন, যারা নগদ টাকায় গরুর গোশত কিনতে পারেন না। তাদের সমিতির মাধ্যমে সপ্তাহে ১০০ টাকা জমাদানের মাধ্যমে ঈদে বেশ কয়েক কেজি মাংস পেয়ে থাকেন। এতে করে তারা পরিবার আত্মীয়-স্বজন নিয়ে ঈদ উদযাপন করেন। গোশত কেনার বাড়তি চাপ থাকে না। এ সমিতির ফলে গরীব মানুষরা বেশ উপকৃত হচ্ছেন।

তিনি আরও জানান, গত বছর ৩০ জন সদস্যদের নিয়ে সমিতি শুরু করি। এ বছর সদস্য বেড়ে ৪৫ জন হয়েছে। দিনে দিনে গোশত সমিতির সংখ্যা বাড়ছে। এতে করে পাড়া-মহল্লায় জনপ্রিয় হচ্ছে 'গোশত সমিতি'। সবাই মিলে একসাথে গোশত কাটার পর বন্টন করি। এতে করে সমাজে পরস্পর সম্পর্ক সৃষ্টি হয়।

গোশত সমিতির সদস্য মো. তফিজ উদ্দিন বলেন, ঈদে আগে দোকান থেকে নগদ টাকায় গরুর গোশত কিনতাম। এখন সমিতির মাধ্যমে সপ্তাহে ৫০/১০০ টাকা জমা করে ঈদে একসঙ্গে কয়েক কেজি গোশত পাই। আর দোকানে কিনতে গেলে এক কেজির বেশি কেনার টাকা থাকে না। সমিতিতে সপ্তাহে ৫০ টাকা জমা দেই, তেমন চাপ লাগে না। একসঙ্গে ২ কেজি গোশত কেনার সামর্থ্যও থাকে না।


বিজ্ঞাপন


নুর হোসেন নামে আরেক সদস্য বলেন, ঈদে ছেলে-মেয়েদের কাপুড় কিনে দেবো না গোশত কিনবো। এখন যে গরুর গোসতের দাম। তাই সারা বছর গোসত সমিতিতে সপ্তাহে ১০০ টাকা জমা দেই। ঈদে আর গোসত নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। একসাথে ৫/৭ কেজি গোসত পাই। যা একসাথে কোন দিন কিনতে পারতাম না। বছরে দুদিন ছেলে-মেয়েদের নিয়ে মন ভরে গোসত খেতে পারি। 

আছিয়া বেগম বলেন, গোসত সমিতি করার পর অন্তত ঈদে দুদিন প্রাণ ভরে গোসত খেতে পারি। আমাদের মতো গরীর মানুষের একসাথে দোকান থেকে গোসত কেনার ক্ষমতা নেই। সমিতিতে প্রতি সপ্তাহে ৫০টাকা জমা করি। ঈদে গোসত পেলে জামাই-মেয়েদের আপ্যান সহজ হয়। এছাড়াও সারা বছর তেমন গরুর গোসত কেনা হয় না যে দাম। সমিতির মাধ্যমে ঈদে যা পাই তাই দিয়ে ঈদ পার হয়ে যায়।

এ বিষয়ে নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আখতার জাহান সাথী ঢাকা মেইলকে বলেন, অবশ্যই এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এ সমিতির মাধ্যমে সমাজের অনেক নিম্ন আয়ের মানুষরা টাকা সঞ্চয় করে একত্রে গোসত পেয়ে থাকেন। যা বাজারের দোকানে অনেকের পক্ষে সম্ভব কেনা হয়ে উঠে না। এ সমিতির মাধ্যমে অনেক গরীব পরিবার গরুর গোসত খেতে পারেন।

প্রতিনিধি/ এজে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন