জমজম আল্লাহর কুদরতের বিস্ময়কর নিদর্শন। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম পানির কূপ। এই পানি হাজার বছর ধরে কোটি তৃষ্ণার্ত হাজীর পিপাসা মিটিয়ে আসছে। নবী ইবরাহিম (আ.)-এর ছেলে নবী ইসমাইল (আ.)-এর স্মৃতিবিজড়িত কূপ জমজম। হজ ও ওমরা আদায়কারীর জন্য বিশেষভাবে এবং পৃথিবীর সব মুসলমানের জন্য সাধারণভাবে জমজমের পানি পান করা মোস্তাহাব। সহিহ হাদিসে বিধৃত হয়েছে যে নবীজি (স.) নিজে জমজম থেকে পানি পান করেছেন। (সহিহ বুখারি: ১৫৫৬)
পবিত্র কাবা থেকে মাত্র ২০ মিটার দূরে অবস্থিত ৩০ মিটার গভীরের এ কূপের পানির ফজিলত অনেক। এই পানির ফজিলতগুলো নিচে তুলে ধরা হলো—
বিজ্ঞাপন
জমজমের পানি সর্বোত্তম পানি: ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘জমিনের বুকে জমজমের পানি সর্বোত্তম পানি।’ (সহিহুত তারগিব ওয়াত তারহিব: ১১৬১; তাবরানি ফিল কাবির: ১১১৬৭)
আরও পড়ুন: জমজম কূপ: আল্লাহর এক বিস্ময়কর নিদর্শন
এই কূপের পানি পৃথিবীর পবিত্র ও উৎকৃষ্টতম হওয়ার আরেকটি প্রমাণ হলো, রাসুল (স.)-এর ‘সাক্কে ছাদার’ বা বক্ষ বিদীর্ণ করে জিবরাইল (আ.) জমজমের পানি দিয়ে তা ধৌত করেছিলেন। (বুখারি: ৩৩৪২)
জমজমের পানি বরকতময়: আবু জর গিফারি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তা (জমজমের পানি) বরকতময়।’ (মুসলিম: ২৪৭৩)
বিজ্ঞাপন
জমজমের পানিতে আছে খাদ্যের উপাদান: রাসুল (স.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই তা বরকতময়, আর খাবারের উপাদানসমৃদ্ধ।’
রোগের শিফা: ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই তা সুখাদ্য খাবার এবং রোগের শিফা।’ (মুসলিম: ২৪৭৩)
জমজমের পানি যে উদ্দেশ্যে পান করা হয়, তা পূর্ণ হয়: জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘জমজমের পানি যে উদ্দেশ্যেই পান করা হয় তা সাধিত হবে।’ (ইবনে মাজাহ: ৩০৬২)
আরও পড়ুন: জমজমের পানি যে নিয়তে পান করতেন মনীষীরা
জমজমের পানি উৎকৃষ্ট হাদিয়া: প্রাচীন যুগ থেকে হজযাত্রীরা জমজমের পানি বহন করে নিয়ে যেতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি জমজমের পানি বহন করে নিয়ে যেতেন এবং বলতেন, রাসুল (স.)-ও তা বহন করতেন।’ (তিরমিজি: ৯৬৩)
জমজমের পানি পানের আদব
ফকিহগণ জমজমের পানি পানের কিছু আদব উল্লেখ করেছেন, যেমন—কেবলামুখী হওয়া, বিসমিল্লাহ বলা, তিন শ্বাসে পান করা, পরিতৃপ্ত হওয়া, শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা ইত্যাদি। জমজমের পানি ইবাদত মনে করে পান করা উচিত। জমজমের পানি পান করার সময় একটি বড় কাজ হলো দোয়া করা। কেননা হাদিসে এসেছে, ‘জমজমের পানি যে উদ্দেশ্য নিয়ে পান করবে তা পূরণ হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩০৬২)
জমজমের পানি পানের দোয়া: اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَسْئَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَّرِزْقًا وَّاسِعًا وَّشِفَاءً مِّنْ كُلِّ دَاءٍ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিআ, ওয়া রিজকান ওয়াসিয়া, ওয়া শিফাআন মিন কুল্লি দা-ইন।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কল্যাণকর জ্ঞান, প্রশস্ত রিজিক এবং যাবতীয় রোগ থেকে আরোগ্য কামনা করছি।’ (দারা কুতনি: ৪৬৬)
জমজমের পানির বৈশিষ্ট্য
অপরিবর্তনীয় গুণমান: জমজমের পানির গুণগত মান কখনো পরিবর্তিত হয় না।
অণুজীবহীন: জমজমের পানিতে কোনো জলজ উদ্ভিদ বা অন্যান্য উদ্ভিদজাত অণুজীব নেই।
মিনারেলের মাত্রা অধিক: জমজমের পানিতে যেসব আকরিক পদার্থ রয়েছে, তার মধ্যে ক্যালসিয়াম, ফ্লোরাইড, সোডিয়াম, সালফেট, নাইট্রেট, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম উল্লেখযোগ্য। পরীক্ষায় দেখা গেছে, ফ্লোরাইড ছাড়া বাকি মিনারেলগুলোর মাত্রা অন্য সব স্বাভাবিক খাবার পানিতে পাওয়া মাত্রা থেকে বেশি।
পানির পিএইচ ও ঝুঁকিমুক্ত মাত্রা: জমজমের পানির পিএইচ হচ্ছে ৭ দশমিক ৮। এ পানি আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম সিসা এবং মেলেনিয়ামের মতো ক্ষতিকর পদার্থগুলো থেকে ঝুঁকিমুক্ত।
পানিতে স্ফটিক সৃষ্টি: জমজমের পানির এমন এক ব্যতিক্রমধর্মী মৌলিক আকার রয়েছে যেটি খুবই চমকপ্রদ। পানিতে একটি আরেকটির উপরে দু’টি স্ফটিক সৃষ্টি হয় ও সেগুলো একটি অনুপম আকার ধারণ করে।
জমজমের পানি খাওয়ার দোয়া, জমজমের পানি বিক্রি, জমজমের পানির দাম, জমজম কূপের বৈজ্ঞানিক রহস্য, জমজমের পানি কেন দাঁড়িয়ে খেতে হয়, জমজমের পানি খাওয়ার উপকারিতা, জমজমের পানির বৈশিষ্ট্য, জমজমের পানি সম্পর্কে হাদিস, জমজমের পানির সাথে পানি মিশিয়ে খাওয়া