বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫, ঢাকা

কেয়ামতের যেসব আলামত সৌদি আরবে প্রকাশ পাবে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০২:৪৮ পিএম

শেয়ার করুন:

কেয়ামতের যেসব আলামত সৌদি আরবে প্রকাশ পাবে
ছবি: সংগৃহীত

মহাবিশ্বের আয়ু একদিন ফুরিয়ে যাবে। মহাপ্রলয় বা কেয়ামতের মাধ্যমে পৃথিবী, আকাশ সব ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে তা কবে সংঘটিত হবে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। পবিত্র কোরআনে এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, কেয়ামতের জ্ঞান কেবল তাঁরই জানা। তাঁর জ্ঞানের বাইরে কোনো ফল আবরণমুক্ত হয় না এবং কোনো নারী সন্তান প্রসব ও গর্ভধারণ করে না। (সুরা হা-মিম-সাজদা: ৪৭)

সেদিন ফেরেশতা ইসরাফিল (আ.)-এর প্রথম ফুঁৎকারে নশ্বর জগতের সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে এবং দ্বিতীয় ফুঁকের মাধ্যমে সব সৃষ্টি ফের জীবিত হয়ে উঠে দাঁড়াবে। ইসলামের পরিভাষায় এটিই কেয়ামত। কেয়ামতের আলামতের মধ্যে কিছু রয়েছে ছোট আলামত, আর কিছু বড় আলামত। বড় আলামতগুলো কেয়ামত খুব কাছে এলেই দৃশ্যমান হবে। ছোট আলামতগুলো ইতোমধ্যে প্রায়ই প্রকাশ পেয়েছে। আর কিছু প্রকাশ পায়নি বা পুরোপুরি প্রকাশ পায়নি। তবে বিভিন্ন আলামত প্রকাশ পাচ্ছে বলে উম্মতে মুহাম্মদিকে পবিত্র কোরআনে সতর্ক করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা শুধু এই অপেক্ষাই করছে যে, কেয়ামত অকস্মাৎ তাদের কাছে এসে পড়ুক। বস্তুত কেয়ামতের লক্ষণসমূহ তো এসেই পড়েছে। সুতরাং কেয়ামত এসে পড়লে তারা উপদেশ গ্রহণ করবে কেমন করে?’ (সুরা মুহাম্মদ: ১৮)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: কেয়ামতের যেসব আলামত পৃথিবীতে বিদ্যমান

ছোট আলামতের মধ্যে কিছু পুরোপুরি প্রকাশ পায়নি বা প্রকাশ পেতে শুরু করেছে- এর মধ্যে রয়েছে আরবের মরুভূমি সম্পর্কে কিছু বর্ণনা। এমন একটি বর্ণনা হলো আরব ভূখণ্ডে তৃণলতা ও নদী-নালা ফিরে আসা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে না যে পর্যন্ত সম্পদের প্রাচুর্য না আসবে। এমনকি কোনো ব্যক্তি সম্পদের জাকাত নিয়ে ঘুরবে কিন্তু নেওয়ার মতো লোক পাবে না। আরবের মাঠ-ঘাট তখন চারণভূমি ও নদী-নালায় পরিণত হবে।’ (সহিহ মুসলিম: ২২২৯)

হাদিস বিশারদদের মতে, এই হাদিস দ্বারা শুধু বর্তমান সৌদি রাষ্ট্র উদ্দেশ্য নয়। কোরআন-হাদিসের ভাষায় আরব বলতে গোটা আরব উপদ্বীপকে বোঝায়। এই উপদ্বীপে রয়েছে বর্তমান সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইয়েমেন ও ওমান।

flood in saudi arabi


বিজ্ঞাপন


কেয়ামতের উল্লেখযোগ্য ছোট আলামত হলো- একদিকে বিশ্বজুড়ে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, তীব্র ঠাণ্ডা ও দাবদাহসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যাপক হারে বেড়ে যাবে। এতে ফসল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অপরদিকে মরু অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির কারণে ঘটবে এর উল্টোটা। বন্যার কবলে পড়ে বিপর্যস্ত হবে আরব অঞ্চল। পানির ছোঁয়ায় শুষ্ক মরুভূমি পরিণত হবে সবুজ অরণ্যে।

আরও পড়ুন: যে ফেতনাকে সাহাবিরাও ভয় পেতেন

ইতোমধ্যে এরকম ঘটনার সাক্ষী হয়েছে সৌদি আরব। সম্প্রতি আরবে আকস্মিক বন্যায় আল উতাইবির অধিকাংশ রাস্তা পানির নিচে ডুবে গেছে, পানি দেখা গেছে মদিনার দক্ষিণ অঞ্চলগুলোতেও, রাজধানী রিয়াদের বিভিন্ন রাস্তাও বন্যায় কবলিত হয়েছে। একইভাবে আরবের বুকে দেখা যাচ্ছে সবুজ তৃণলতার দৃশ্য। সাম্প্রতিক সময়ে আরবের বিভিন্ন স্থানে গবেষণা করে অনেক ভূতাত্ত্বিকই এটি নিশ্চিত হয়েছেন। (ইসলামওয়েব ডটকম) যাকে নবীজির ভবিষ্যদ্বাণীরই প্রতিফলন বলছেন অনেকে। 

saudi arab

কেয়ামতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আলামত হচ্ছে সুউচ্চ টাওয়ার নির্মাণের প্রতিযোগিতা। আরব উপদ্বীপে প্রকাশিত এই আলামতটি ইতোমধ্যে বিশ্ববাসী দেখতে পাচ্ছে। পৃথিবীর সর্বোচ্চ টাওয়ার আরব উপদ্বীপের দুবাইতে অবস্থিত। নাম-বুর্জ আল খলিফা। ভবনটির উচ্চতা দুই হাজার ৭১৭ ফুট। এছাড়াও অনেক সুউচ্চ ভবনের নির্মাণকাজ চলছে আরবের বুকে, যেসব ভবন বুর্জ খলিফাকেও ছাড়িয়ে যাবে। যেমন দুবাইতেই তৈরি হচ্ছে ক্রিক হারবার টাওয়ার। এর উচ্চতা হবে তিন হাজার ৪৫ ফুট। ধারণা করা হয়েছিল, বুর্জ আল খলিফার পর এটিই হবে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন। কিন্তু সৌদি আরবের নির্মাণাধীন জেদ্দা টাওয়ার সব রেকর্ড ভেঙে দেবে। মরুভূমির বুকে গড়ে উঠছে আগামী বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা জেদ্দা টাওয়ার। আকাশচুম্বী এই স্থাপনাটি উচ্চতা হবে তিন হাজার ২৮০ ফুট বা এক হাজার মিটার, যা বরাবর ১ কিলোমিটার উঁচু। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদমাধ্যম মিড এক খবর সম্প্রতি জানিয়েছে, এক আকাশচুম্বী ভবনের পরিকল্পনা করছে সৌদি, যা হবে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন। এ নিয়ে বর্তমানে কাজ চলছে। যার উচ্চতা হবে ২ কিলোমিটার উঁচু।

burj khalifa

অবিশ্বাস্যভাবেই নবীজির হাদিসের সঙ্গে সবকিছুর মিল রয়েছে। হাদিসে জিবরিলে বর্ণিত হয়েছে, ‘দাসী তার মুনিবকে প্রসব করবে, নগ্ন পদ, বিবস্ত্র, গরিব, বকরির রাখালরা বড় বড় প্রাসাদ নির্মাণে প্রতিযোগিতা করবে।’ (নাসায়ি: ৪৯৯০)

আরও পড়ুন: অনর্থক হত্যা কেয়ামতের আলামত, নিহত ব্যক্তিও জাহান্নামি!

সৌদি আরবে প্রকাশিত হবে এমন আরও অনেক আলামতের কথা বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। এর একটি হলো রাজপরিবার নিয়ে। হজরত সাউবান (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের গুপ্তধন নিয়ে তিন ব্যক্তি যুদ্ধ করবে, যারা সবাই খলিফার সন্তান, কিন্তু ওই ধন তারা একজনও পাবে না। অতঃপর পূর্বদেশ থেকে কালো পতাকাবাহীরা বের হবে, যারা তোমাদের এমনভাবে হত্যা করবে, যা এর আগে কেউ করেনি। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ (স.) আরো কিছু কথা বলেন, যা আমার এখন স্মরণে নেই। অতঃপর বললেন, যখন তোমরা তাকে দেখবে, তার হাতে বাইআত গ্রহণ করবে, বরফের ওপর হামাগুড়ি দিয়ে এসে হলেও, কেননা তিনি হলেন আল্লাহর খলিফা মাহদি।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪০৮৪)

এ হাদিসে গুপ্তধনের ব্যাখ্যায় আল্লামা সিন্দি (রহ.) বলেন, এর দ্বারা আরবের রাজত্ব বোঝানো হয়েছে। ইমাম ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, এখানে বাহ্যত গুপ্তধন দ্বারা কাবা শরিফের গুপ্তধনই উদ্দেশ্য হওয়া বোঝায়। সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও বোঝা যায় যে কেয়ামতের আগে ওই কালো পতাকাবাহীরা ইমাম মাহদির সঙ্গে যুক্ত হবেন এবং মাহদির দলভুক্ত হবেন। (হাশিয়াতুস সিন্দি আলা ইবনে মাজাহ: ২/৫১৮)

কিন্তু আমরা দেখতে পাই যে যুগে যুগে সে-ই আব্বাসি খেলাফতের শুরুলগ্ন থেকে অনেকেই নিজেদের ওই দল বোঝানোর জন্য কালো পতাকা নিয়ে অভিযানে নেমেছে। কেউ বা নিজেকে মাহদিও দাবি করে বসেছে, এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। বরং ওই দলের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। ইমাম মাহদির ব্যাপারে অনেক হাদিসেই বিভিন্ন আলামত ও অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে, যেমন তিনি নিজেকে গোপন রাখবেন, তবে নেককাররা তাঁকে চিনে ফেলবেন। তিনি হজরত হাসান (রা.)-এর বংশের হবেন, তাঁর নাম মুহাম্মদ হবে, তাঁর পিতার নাম আবদুল্লাহ হবে ইত্যাদি। যুগে যুগে যারা নিজেকে মাহদি পরিচয় দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে বিভিন্ন অভিযানে লিপ্ত হয়েছে, তারা ভ্রষ্টতা ও ভ্রান্তির শিকার হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায়, অনেকে উল্লিখিত হাদিসকে সৌদি আরবের বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করতে চায়। অথচ এর সঙ্গে সৌদি আরবের বর্তমান পরিস্থিতির সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

উল্লেখ্য, কেয়ামতের আলামতগুলোর মধ্যে ভয়াবহ আলামত হলো দাজ্জালের আবির্ভাব। দাজ্জাল পৃথিবীতে ৪০দিন অবস্থান করবে। প্রথম দিন হবে এক বছরের সমান। দ্বিতীয় দিন এক মাস ও তৃতীয় দিন হবে এক সপ্তাহের সমান। বাকি দিনগুলো হবে দুনিয়ার সাধারণ দিনের মতো। তখন নামাজের সময় নির্ধারণ করতে হবে অনুমান করে (মুসলিম-কিতাবুল ফিতান)। মানুষকে বিপথগামী করতে সবধরনের চেষ্টা চালাবে সে। সে মিথ্যা জান্নাত-জাহান্নামের চিত্র দেখিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করবে। হাদিসের বর্ণনামতে, ‘দ্রুতগামী বাতাস বৃষ্টিকে যেভাবে চালিয়ে নেয়, দাজ্জালের চলার গতিও সেরকম হবে’ (মুসলিম- কিতাবুল ফিতান)। ‘মক্কা ও মদিনা ছাড়া এমন কোনো শহর নেই যেখানে দাজ্জাল পদচারণ করবে না। মক্কা এবং মদিনার প্রত্যেকটি প্রবেশ পথেই ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে পাহারায় নিয়োজিত থাকবে। এরপর মদিনা তার অধিবাসীদেরকে নিয়ে তিনবার কেঁপে উঠবে এবং আল্লাহ তা‘আলা কাফের এবং মুনাফিকদের বের করে দেবেন।’ (সহিহ বুখারি: ১৮৮১)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি নেক আমলের মাধ্যমে কেয়ামতের প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর