ঢাকার শেরে বাংলা নগরের বিশাল জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত ‘গণভবন’ নিয়ে বিতর্ক পুরনো। বাংলাদেশের ইতিহাসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই একমাত্র নেতা যিনি গণভবনে বসবাস করেছেন। অন্য কোনও সরকার বা রাষ্ট্রপতি সেখানে বসবাস করেননি, তবে গণভবন রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহৃত হয়েছে।
শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১১ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন এবং তিনি গণভবন বরাদ্দ নিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়ার পরেও তিনি সেখানে থাকতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তীব্র রাজনৈতিক বিতর্কের কারণে ২০০১ সালে তাকে গণভবন ছাড়তে বাধ্য হতে হয়।
বিজ্ঞাপন
বর্তমানে অধ্যাপক ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার গণভবনকে ‘জুলাই স্মৃতি জাদুঘরে’ রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কয়েকদিন আগে লন্ডন থেকে ভিডিও বার্তায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান জানান, গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হবে, যেখানে জুলাই-অগাস্ট মাসে শেখ হাসিনার বিরোধী আন্দোলনের সময় আহত ও নিহতদের স্মৃতি সংরক্ষণ করা হবে।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা গণভবনে বসবাস শুরু করেন। ২০০১ সালের ২০ জুন জাতীয় সংসদে ‘জাতির পিতার পরিবার সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন ২০০১’ পাস হয়, যার আওতায় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে আজীবন এসএসএফ দ্বারা নিরাপত্তা এবং গণভবন বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এই আইনের আওতায় শেখ হাসিনাকে গণভবন এবং শেখ রেহানাকে ধানমন্ডির ৬ নম্বর সড়কে একটি সরকারি বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়। মন্ত্রিসভার বৈঠকে গণভবনকে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত মালিকানার পরিবর্তে সরকারি মালিকানায় রাখা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে গণভবন বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
শেখ হাসিনার গণভবনে বসবাস নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এই নিয়ে আপত্তি জানান। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যদি নির্বাচনে অংশ নিতে চান, তাহলে তাকে গণভবন ছাড়তে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি গণভবন বরাদ্দ বাতিলের দাবি জানায়।
বিজ্ঞাপন
পাল্টা কৌশল হিসেবে আওয়ামী লীগ খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ির ইজারা বাতিল করার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে।
বিএনপি গণভবন বরাদ্দ নিয়ে রিট দায়েরের প্রস্তুতি নেয়। বিএনপির মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া এই রিট আবেদন করেন। বিএনপি যুক্তি দেয় যে ‘জাতির পিতার পরিবার সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন’ বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক এবং এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী।
২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে এবং এই আইন বাতিল করা হয়।
বিভিন্ন রাজনৈতিক বিতর্কের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা ২০০১ সালের ১৬ আগস্ট গণভবন ছাড়েন। শেখ হাসিনা গণভবন ছাড়ার সময় খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার আহবান জানান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বাড়ি নিয়ে এতো কথা শুনতে ভালো লাগে না। নেই নাই, নিলাম না।”
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর শেখ মুজিবুর রহমানের সময় গণভবন নির্মাণ করা হয়, কিন্তু তিনি সেখানে বসবাস করেননি। গণভবন মূলত অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হত।
১৯৮৫ সালে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালে গণভবন সংস্কার করে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘করতোয়া’ নামকরণ করা হয়।
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর গণভবনে বসবাস শুরু করেন এবং এর নাম আবার ‘গণভবন’ রাখা হয়। ২০০১ সালে শেখ হাসিনা গণভবন ছাড়ার পর সেটি আর ব্যবহৃত হয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা গণভবনে ফিরে আসেন।
এইউ