সকালে মাথার ওপর মেঘ নিয়ে রওনা হয়েছিলাম যশোরের কেশবপুরের পথে। উদ্দেশ্য কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি দেখা যা মধুপল্লী হিসেবে পরিচিত। তিনি কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে ১৮২৪ সালে এই বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন।
আমাদের ৮৫ কি.মি পথ অতিক্রম করে মধুপল্লীতে আসতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। বরং, যাত্রা পথে যশোর থেকে সাগরদাঁড়ি পর্যন্ত রাস্তার চারিদিকের প্রাকৃতিক পরিবেশ মনোমুগ্ধকর ছিল যা মনে রোমাঞ্চকর অনুভূতি সঞ্চার করে। দুপুর ১ টার কিছু আগে মধুপল্লীতে এসে পৌঁছাই। টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করতেই একটি বড় পুকুর চোখে পড়ে। পাশে সারি সারি গাছের সবুজ ছায়া আর পুকুরের মনোরম দৃশ্য যে কারোর চোখে আরাম দিবে। দূর করবে দীর্ঘ পথযাত্রার ক্লান্তি।
বিজ্ঞাপন
দুপুরে খুব বেশি পর্যটক আমাদের চোখে পড়েনি। তবে কয়েক জনের সাথে কথা বলে জানতে পারি প্রতিদিন গড়ে কয়েকশ পর্যটক আসেন এখানে। বিশেষ করে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা এখানে পিকনিকে আসলে বেশ জমজমাট থাকে মধুপল্লী।
পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দুতে থাকে কবির নিজের বাড়িসহ পুকুরঘাট এবং ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র। এর মধ্যে রয়েছে কবির ব্যবহৃত গ্রামোফোন, কাঠের খাট ও আলমারি, লোহার সিন্দুক এবং কবির কিছু চিত্র।
বিজ্ঞাপন
পৈত্রিক এই ভিটাতে আরও রয়েছে মধুসূদনের একটি ভাস্কর্য, পাঠাগার, ৩১ টি কক্ষ ও তার বাবার আমলের আম গাছ। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর এখানে গড়ে তুলেছে একটি জাদুঘর। মধুপল্লী থেকে কয়েক মিনিটের দূরত্বে কপোতাক্ষ নদ। নদের ধারে নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াকওয়ে। পাশেই পিকনিক স্পট।
যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় দেশ বিদেশের যেকোনো যায়গা থেকে মানুষ অতিসহজেই এখানে আসতে পারেন। দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়ার সাথে সরকার এখানে বেশি বেশি শিক্ষা ও সংস্কৃতি মেলা, গবেষক কবি ও সাহিত্যিকদের সম্মেলন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারে। এতে কবি সম্পর্কে দেশ বিদেশের মানুষ অনেক কিছু জানতে পারবেন এবং বিশ্ব পরিমণ্ডলে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা বৃদ্ধি পাবে।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের নামে একটি সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। কবির নামে একটি ইনস্টিটিউট খুললে তার দর্শন ও সাহিত্য চর্চা নিয়ে উচ্চতর গবেষণা করার পথ সুগম হবে।
একই সাথে কলা, সমাজ বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভিন্ন বিষয়ের উপর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। কপোতাক্ষ নদ ঘিরে ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া গেলে এ অঞ্চলে শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও পর্যটন হাব তৈরিতে সহায়তা করবে।
এনএম