শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪, ঢাকা

‘দলীয় রাজনীতি মুক্ত বার চাই’

আমিনুল ইসলাম মল্লিক
প্রকাশিত: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:২৯ পিএম

শেয়ার করুন:

‘দলীয় রাজনীতি মুক্ত বার চাই’

‘দলীয় রাজনীতি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত হতে কাজ করছি। কারণ দলীয় লেজুড়বৃত্তি আইনজীবী পেশাকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। ভবিষতেও করবে। কোনো একটি দলের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হলে ওই দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে হয়। আর আইনজীবীদের জন্য কাজ না করে দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন কোনো মতেই আমার পছন্দ না। এজন্য দলের বাইরে থেকে নির্বাচিত হতেই কাজ করছি।’

ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকাল এসব কথা বললেন সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন ২০২৪-২৫ সেশনের সম্পাদক পদপ্রার্থী ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভুঁইয়া।


বিজ্ঞাপন


এই আইনজীবী নাগরিকের সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকারের কথা বিবেচনা করে জনস্বার্থে অনেকগুলো মামলাও করেছেন। আদালত থেকে প্রত্যাশিত আদেশও পেয়েছেন। বড় বড় ডিগ্রি অর্জন করলেই ওকালতিতে ভালো করা যাবে, তুলনামূলক কম ডিগ্রি দিয়ে এখানে সুবিধা করা যাবে না এমন বিশ্বাস উল্টে দিয়েছেন তিনি। কুমিল্লা আইন কলেজ থেকে তিনি আইনে স্নাতক ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করে ২০০৮ সালে আইনজীবী হিসেবে সনদ লাভ করেন তিনি।
 
ঢাকা মেইল: কেমন বার চান?
ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া: আইনজীবীদের জন্য দলীয়মুক্ত, দলীয় লেজুড়বৃত্তিমুক্ত, পেশাদারিত্ব, জবাবদিহিতামূলক আইনজীবী সমিতি চাই। একটি আইনজীবী সমিতির মনোনয়ন নিতে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে ধর্না দিতে হবে এমন নেতৃত্ব আমরা চাই না।
 
ঢাকা মেইল: টাউট বা দালালদের কারণে বিচার প্রার্থীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। আপনি নির্বাচিত হলে তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেবেন? 
ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া: আমি নির্বাচিত হলে সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে শুদ্ধি অভিযান চালাবো। যারা প্রকৃত আইনজীবী তাদের বাইরে কোনো টাউট বা দালাল বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ালে আমি তাদের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে ব্যবস্থা নেব। টাউটমুক্ত বার প্রতিষ্ঠায় নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। ইতোপূর্বে আমি টাউট আর দালাল নির্মূল কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করেছি। সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। কাউকে ছাড় দিইনি। আইনজীবীদের জন্য পরিচ্ছন্ন বার গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। বারের তিন তলায় অলিম্পিয়া রেস্টুরেন্ট থেকে আমি পঁচা-বাসি মুরগী বের করে আইনজীবীদের জন্য সুন্দর খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

ঢাকা মেইল: বর্তমান সময়ে দলীয় রাজনীতির বাইরে গিয়ে নির্বাচিত হতে পারবেন কী?
ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া: আমি মনে করি কঠিনভাবে লেগে থেকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে, দলীয় রাজনীতির বাইরে থেকেও নির্বাচিত হওয়া সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন ধৈর্য্য, আন্তরিকতা, পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ, বিপদে-আপদে আইনজীবীদের পাশে দাঁড়ানো। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করছি দলীয় রাজনীতির বাইরে গিয়ে নির্বাচিত হয়ে আইনজীবীদের কল্যাণে কাজ করতে।

ঢাকা মেইল: আইনজীবীদের নেতা নির্বাচিত হলে তাদের কল্যাণে আপনি কি ধরনের কাজ করতে চান?
ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভুঁইয়া: আমি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ২০২০-২১ সেশনের টাউট উচ্ছেদ কমিটির সাব কমিটির একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এই কমিটিতে ১০ জন আইনজীবী কাজ করছেন। এছাড়া আইন অঙ্গনে দালাল ও দুর্নীতি নির্মূল কমিটি নামে আমার একটি সংগঠন রয়েছে। আমি সেই সংগঠনের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমি সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের নেতা নির্বাচিত হলে- আইনজীবীদের সম্মান বাড়ানো, সমাজে তাদের নেতৃত্বে দিক, তাদের দ্বারা মানুষ উপকৃত হোক এমন কিছু যেন করা যায় সেই চিন্তা করি।

ঢাকা মেইল: নির্বাচিত  হলে দলীয় রাজনীতিতে যোগ দেবেন কি না?
ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভুঁইয়া: না। কোনোমতেই আমি কোনো দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যোগ দেব না। কারণ আমি কোনো দলের লেজুড়বৃত্তি করলে তখন তো ওই দলের লোক হয়ে গেলাম। ওই দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে হবে আমাকে। আর আমি কখনোই চাই না কোনো দলের দালালি করে সাধারণ আইনজীবীদের অধিকার বিনষ্ট হোক।


বিজ্ঞাপন


ঢাকা মেইল: এই পেশাটা কেমন লাগে আপনার কাছে?
ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া: সমাজের অন্য দশটি পেশার চেয়ে আইন পেশা মর্যাদাপূর্ণ। ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন এ পেশায় কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। রাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিক ও মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হলে এ পেশার মানুষেরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারেন। কেউ মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হলে তার পাশে বিনা ফিতে আইনি সেবা দেওয়ার সুযোগ আছে, যেটি অন্য পেশার মানুষদের ক্ষেত্রে কম। সেবামূলক এ পেশা আমার কাছে খুবই আত্মমর্যাদা সম্পন্ন বলে মনে হয়। এমন চিন্তা থেকেই আইনে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে এই মর্যাদাপূর্ণ মহান পেশায় এসেছি। এখানে থেকে সারাজীবনই মানুষের সেবা দিতে চাই।

ঢাকা মেইল: ব্যক্তিগত মামলার পাশাপাশি আপনি জনস্বার্থে অনেক মামলা করে থাকেন। জনস্বার্থ বলতে যা দরকার সেগুলো আপনার মামলায় থাকে কিনা?
ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া: দেখুন, আইনজীবী হিসেবে যখন শপথ নিয়েছি তখনই জনস্বার্থে কিছু করার প্রতিজ্ঞা করেছি। আইনজীবীদের মাদার সংগঠন বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অ্যাক্টেও এমন বিষয়ে বলা আছে। আমি শুধু একজন আইনজীবীই নই একজন নাগরিকও বটে। সে জায়গা থেকে সমাজের প্রতি আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে তার অংশ হিসেবে জনস্বার্থে মামলা করে থাকি। কেননা জনস্বার্থের মামলায় অনেকেই লাভবান হন যা নিঃসন্দেহে অনেক বড় সফলতা।

ঢাকা মেইল: এ পর্যন্ত পাবলিক ইন্টারেস্ট বা জনস্বার্থে কতগুলো মামলা করেছেন?
ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া: সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয় অথবা সাধারণ নাগরিকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উচ্চ আদালতে এ পর্যন্ত অনেকগুলো পাবলিক ইন্টারেস্ট মামলা করেছি। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সারাদেশের আদালতগুলোতে ই-জুডিশিয়ারি চালুর নির্দেশনা চেয়ে রিট, আইনাঙ্গনে ভুয়া আইনজীবী- দালাল নির্মূল চেয়ে রিট, অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের ডিএজি, এএজি নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেছি। এছাড়া দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর (পরামর্শক) ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট (মনোবিদ) নিয়োগের নির্দেশনা চেয়েও রিট করেছি। রিটের শুনানি করে আদালত রুল জারি করেছেন।

এআইএম/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর