বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। সে সময় দলটির ব্যক্তিত্ব, কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব ছিল। বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতারা কর্মচারী। তাদের নেতৃত্ব নেই, এমনকি চরিত্রও নেই বলে মনে করেন বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। ঢাকা মেইলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা মেইলের নিজস্ব প্রতিবেদক কাজী রফিক।
ঢাকা মেইল: ১৫ আগস্ট সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আপনার গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
বিজ্ঞাপন
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী: জাতীয় বিপর্যয় হলে এ রকম ঘটনা ঘটতেই পারে। যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করে সফল হয়েছেন, এ রকম ঘটনা ঘটতেই থাকলে তারা বিফল হবেন। প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়েছেন, ন্যাক্কারজনকভাবে দেশ ছেড়েছেন, ১০ দিনের বেশি। আজও যদি আন্দোলনকারীদের হাতে লাঠি থাকে, তাহলে তাদের পরিণতি খুব একটা ইতিবাচক হবে না। সেজন্য বলব, এই বৈষম্যবিরোধী বিজয়ীদের আন্দোলন, বিজয় কেউ ছিনিয়ে নিয়ে যায় কি না, এটা দেখার কথা।
ঠিক আছে, আমার বয়স হয়েছে, আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম, স্বাধীনতা এনেছিলাম। আমার গাড়ি ভাঙলে যদি শান্তি আসে, তাহলে তো আমি চাইব আরও দুটি গাড়ি ভাঙুক। আমার এতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু এটা ভালো কাজ নয়৷
ঢাকা মেইল: এই পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা কী হওয়া উচিত?
বিজ্ঞাপন
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী: এই সবকিছুকে সামাল দিতে হবে। যদি বর্তমান সরকার এটাকে সামাল দিতে পারে, তারা অনেক ধন্যবাদ পাবে, অনেক সাধুবাদ পাবে। আর যদি এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে সব কিছুরই একটা পরিণতি আছে।
শেখ হাসিনা কথা শোনে নাই, মানুষকে সম্মান করে নাই, মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারে নাই। হারুনের মতো লোক ডিবির প্রধান হয়ে সমন্বয়কারীদের পোলাও-কোরমা খাইয়ে ছবি তুলেছে, মানুষ এটা ভালোভাবে নেয় নাই। এখন যারা আছে, তারাও যদি সুন্দরভাবে যেতে না পারে, মানুষ আস্থা হারাবে।
হ্যাঁ, এটা সত্য, বাড়ি ঘর পোড়ানো যেতে পারে, মানুষ হত্যা করা যেতে পারে, কিন্তু এটা কোনো সমাধান না।
গণভবন পুড়েছে, এটার না হয় একটা কারণ থাকতে পারে। কিন্তু সংসদ ভবন ভেঙেছে কেন? বঙ্গবন্ধুর জাদুঘর ধ্বংস করতে গেল কেন? হাজার বছরে আমরা আর এই সম্পদ পাবো না।
ঢাকা মেইল: ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর থেকে আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হয়ে টানা বক্তব্য দিচ্ছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। তার একেক দিনের বক্তব্য একেক রকম। আবার তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনা আবার দেশে ফিরবেন, রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন। সেটির আসলে কতটা সুযোগ আছে?
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী: না, না, জয়ের কথার কোনো মানে হয় না।
ঢাকা মেইল: বর্তমান অবস্থা থেকে আওয়ামী লীগ কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বা আদৌ পারবে কি-না?
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী: সময় দেওয়া উচিত। আরেকটা জিনিস আপনি মনে রাখবেন। ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ ইঁদুরের গর্তে ঢুকেছিল। কিন্তু তখন আওয়ামী লীগে অনেক ব্যক্তিত্ব ছিল, কর্তৃত্ব ছিল, নেতৃত্ব ছিল, এখন আওয়ামী লীগে সাধারণ পর্যায়ে ভালো আওয়ামী লীগ এখনো আছে। কিন্তু যারা নেতা, তারা আসলে কর্মচারী। তাদের নেতৃত্বও নাই, ব্যক্তিত্বও নাই, কর্তৃত্বও নাই, চরিত্রও নাই। তারা অধিকাংশ দুর্নীতিবাজ।
ঢাকা মেইল: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অগণিত অভিযোগ। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সরকারের এখনই কঠোর হওয়া উচিত কি-না?
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী: এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে বর্তমান সরকার সঠিক ট্র্যাকেই আছে। দুর্নীতির যে ব্যাপারটা, দুর্নীতিবাজদের সামনে আসতে একটু সময় তো লাগবে।
কারই/জেবি