শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

এসএমই খাতে বেশি ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি ব্যাংক

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:১৩ পিএম

শেয়ার করুন:

এসএমই খাতে বেশি ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি ব্যাংক

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সম্পূর্ণ কৃষকের ব্যাংক। এই ব্যাংক কেবল শুধু মুনাফা অর্জন নয়। দেশের কল্যাণে নিবেদিত। এজন্য কৃষির পাশপাশি উদ্যোক্তা বাড়াতে এসএমই খাতে বেশি ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ব্যাংকটি। নতুন খামারিদের সহজ শর্তে ও স্বল্প মুনাফায় ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও নারীরা যাতে ঘরে বসে বিভিন্ন গৃহস্থালি পণ্যে তৈরি করতে পারে সেই জন্য তাদের সহায়তা করা হবে। ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপচারিতায় কথাগুলো বলছিলেন কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শওকত আলী খান।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান কৃষি ও কৃষকের কল্যাণে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। এ ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশের শতকরা ৯৫ ভাগ কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। যুগের সাথে পাল্টাচ্ছে কৃষি। সম্প্রসারিত হচ্ছে এ খাত। কৃষি এখন শুধু জমিতে মই নিড়ানো নয়। কৃষির আধুনিকায়ন হচ্ছে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়েই বাংলাদেশে এখন কৃষি খাত এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে দেশে খাদ্যের ঘাটতি নেই। তাই এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশ বাংলাদেশ।


বিজ্ঞাপন


কেমন চলছে কৃষি ব্যাংকের কার্যক্রম জানতে চাইলে শওকত আলী খান বলেন, কৃষি ব্যাংক সম্পূর্ণ কৃষকের ব্যাংক। এ ব্যাংক কেবল শুধু মুনাফা অর্জন নয়। দেশের কল্যাণে নিবেদিত। বাংলাদেশ আজ খাদ্য সয়ংসম্পূর্ণ। এটি একমাত্র কৃষকদের মাঝে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার  কারণে সম্ভব হয়েছে। কৃষি ব্যাংক ঘাটতি দিয়েও কৃষকের পাশে আছে এবং থাকবে। এই ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠাতা হয়েছে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক সচল রাখার জন্য। এখন আগের মতো কোনো মানুষ অভাবে নাই। যার কোনো কিছুই নেই, তারও এখন গ্রামে দুই-চারটা গরু পালন করছে। এর অবদান শুধু কৃষি ব্যাংকেরই। এভাবে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গরু পালন করেও অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি যোগদান করার পরে ১০০ দিনের একটি কর্মসূচি দেই। তাতে আমানত ও ঋণ খেলাপী এবং ঋণ আদায় থেকে শুরু বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে। এছাড়াও ১৪০টির মতো লস শাখা কমাতে সক্ষম হয়েছি। আর একটি বড় কাজ করতে পেরেছি। তা হলো ব্যাংকের ভেতরে সুশাসন ফিরিয়ে আনতেও সক্ষম হয়েছে। এরই মধ্যে যাদের ভেতরে অনিয়ম ধরা পড়ছে তাদেরকেই আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ফলে এখন আর কেউ অনিয়ম করতে সাহস পাবে না।

কৃষি ব্যাংকের কার্যক্রম গতিশীল করতে কি ভূমিকা নিচ্ছেন- জানতে চাওয়া হলে শওকত আলী খান বলেন, কৃষি ব্যাংকের কার্যক্রম গতিশীল করতে সকল কর্মচারীর চিন্তা-চেতনার পরিবর্তনের লক্ষ্যে নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। প্রতিটি শাখায় অনলাইন কার্যক্রম রয়েছে। ইতোমধ্যেই ব্যাংকের সব শাখাতে অনলাইনের আওতায় আনা হয়েছে। যা আগে ছিল না। আমাদের জনবল সংকট থাকার পরও আমরা ভালো কিছু করার চেষ্টা করছি। বর্তমানে পনের হাজার চার’শ বিয়াল্লিশ জনের মধ্যে নয় হাজাররের মতো লোক দিয়ে আমাদের কার্যক্রম চলছে। তবে শিগগিরই দুই হাজারের মতো জনবল যোগ হচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯৭৯ জন অফিসার ও সি. অফিসার পদে নিয়োগ প্রদান করেছে। আশা করি এতে অনেকটা জনবল সংকট কেটে যাবে।

উদ্যোক্তা বাড়াতে কৃষি ব্যাংকের ভূমিকার কথা জানতে চাওয়া হলে এমডি বলেন, কৃষির পাশাপাশি উদ্যোক্তা বাড়াতে এসএমই খাতে বেশি ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন খামারিদের সহজ শর্তে ও স্বল্প মুনাফায় ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া নারীরা যাতে ঘরে বসে বিভিন্ন গৃহস্থালি পণ্যে তৈরি করতে পারে সেই জন্য তাদের সহায়তা করা হবে। 

গ্রামীণ অর্থনীতিকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে কৃষি ব্যাংক বিশেষভাবে কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে শওকত আলী খান বলেন, কৃষি ব্যাংকে ৩৫ লাখেরও বেশি ঋণগ্রহীতা রয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে ১ কোটি ৪৫ লাখের বেশি গ্রাহক রয়েছে ব্যাংকটিতে। কৃষক ও কৃষির সাথে সম্পৃক্ত সব ধরনের ব্যাংকিং কর্মকাণ্ড এখানে রয়েছে। উন্নততর কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্পে অর্থায়ন, কাচাঁমাল আমদানি, পণ্য রফতানি, রেমিট্যান্স সংগ্রহ সবই করছে। রেমিট্যান্স সংগ্রহ দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে অবস্থান এখন ৬ষ্ঠ। এছাড়াও কৃষি নির্ভর এসএমই খাতকে যথেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করছি। কৃষির উন্নয়নের মাধ্যমে দেশ তথা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষি ব্যাংক অঙ্গীকারবদ্ধ।

তিনি জানান, কৃষি ব্যাংকের অনলাইন ব্যবস্থাও বর্তমানে অনেক শক্তিশালী। গ্রাহক চাইলে যে কোনো শাখা থেকে টাকা জমা দেওয়া কিংবা টাকা তুলতে পারছে। ১০৩৮টি শাখা রয়েছে। ব্যাংকের নিজস্ব এটিএম বুথ ছাড়াও যে কোনো ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলনের সুবিধা রয়েছে। শিগগিরিই একটি অ্যাপ চালু করতে যাচ্ছি যা গ্রাহকরা ঘরে বসে সব ধরণের লেনদেন করতে পারবে। এছাড়া বিদেশে বসেও গ্রাহকরা অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে সব ধরনের লেনদেন করতে পারবে। নানামুখী উদ্যোগের ফলে এগিয়ে যাচ্ছে কৃষি খাত। বিশ্ব পরিমণ্ডলে যা উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে জ্বলছে। সরকার আমাদেরকে যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে সেভাবেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে আমাদের ব্যাংকটি। জনগণের কল্যাণে সরকারের কৃষি ও সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক প্রায় সব কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে কৃষি ব্যাংক। নতুন নতুন কৃষককে খুঁজে বের করে চার শতাংশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ঋণসুবিধা দিচ্ছে।

আগামী দিনের পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কৃষি ব্যাংক এমডি বলেন, অনেক পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। তার মধ্যে প্রথম পরিকল্পনা রয়েছে খেলাপি ঋণ কমানো। বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১২ শতাংশ রয়েছে। যা আগামী জুনের মধ্যে ১০ শতাংশ নিয়ে আসবো। বর্তমান ব্যাংক লোকসানে রয়েছে। লোকসানি থেকে কিভাবে লাভে আনতে পারি এর একটা পরিকল্পনা রয়েছে। গ্রাহকদের স্মার্ট সেবা দেওয়ার জন্য যা যা করার দরকার তা করব। নতুন গ্রাহক কিভাবে বের করে আনতে পারি তারও একটা পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকটিতে মূলধন ঘাটতি রয়েছে। সেই ঘাটতি কাটাতে আমানত সংগ্রহ করার একটা পরিকল্পনা রয়েছে। যাতে প্রবাসী গ্রাহকরা বিদেশ থেকে আসার পথে কোনো প্রকার হয়রানি শিকার না হতে হয়। তাই প্রবাসীদের জন্য বিশেষ সেবা চালু করতে চাই। তাদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা ও এয়ারপোর্টে মালামাল নিরাপদে আনতে পারে সেই ব্যবস্থা করব। আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া শীর্ষ খেলাপীদের কাজ খেলাপী ঋণ আদায়, লস শাখাকে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আনাসহ বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে।

টিএই/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর