বুধবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

স্বাস্থ্য খাতে আশার আলো

মাহফুজ উল্লাহ হিমু
প্রকাশিত: ০১ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৩৬ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকারের একটি হলেও স্বাস্থ্য খাত স্বাধীনতার পর থেকেই ধুঁকে ধুঁকে চলছে। তবে মহামারি করোনাভাইরাস ও গত কয়েক বছরের ডেঙ্গুর ক্রমবর্ধমান অবস্থায় স্বাস্থ্য খাতের ভঙ্গুর পরিস্থিতি প্রকটভাবে দৃশ্যমান হয়েছে।

অবশ্য এর মধ্যেও আশার আলো দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা মোকাবিলায় বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। মহামারিকালীন কেউ বিদেশে যেতে না পারলেও দেশেই সব ধরনের চিকিৎসা সেবা পেয়েছে।


বিজ্ঞাপন


২০২২ সালেই দেশে প্রথমবারের মতো সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল উদ্বোধন, আট বিভাগীয় শহরে স্পেশালাইজড হাসপাতাল স্থাপনসহ স্বাস্থ্য খাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেগুলোকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তবে নতুন বছরও করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গু নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন তারা।

Special Reportনতুন বছরে স্বাস্থ্য খাতের প্রত্যাশা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এমিরেটস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ঢাকা মেইলকে বলেন, ২০২২ সালে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়েছে। এ বছর আট বিভাগীয় শহরে স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালুর লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এটি চালু করা গেলে সেবা খাতের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক কাজ হবে। এখানে ক্যান্সার, কিডনি, হার্টের মতো জটিল রোগের চিকিৎসা হবে। আমাদের মানুষের তুলনায় এগুলো অপ্রতুল হলেও ধাপে ধাপে ঘাটতিগুলো পূরণ করতে হবে। এগুলো তার একটি সূচনা। একইসঙ্গে সেবাগুলো জেলা-উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দিতে হবে। তাহলে রাজধানীতে চাপ কমবে। মানুষ ভালো সেবা পাবে।

কমিউনিটি ক্লিনিকের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতে একটি অনন্য সংযোজন কমিউনিটি ক্লিনিক। এগুলোর কার্যক্রম অনেক ভালো চলছে। তবে ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ করতে হবে। যেখানে প্রয়োজন সেখানেই স্থাপন করতে হবে। যেন আমরা মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে পারি।

ডেঙ্গু-করোনা নিয়ে শঙ্কা


বিজ্ঞাপন


দেশে ২০২২ সালে করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ডেঙ্গু নিয়ে ভোগান্তি ছিল। এ বছরও সংক্রামক রোগ দুইটি নিয়ে শঙ্কা দেখছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

Special Reportএ বিষয়ে অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, করোনা এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আছে। এটাকে ধরে রাখতে হবে। চীনে আবার নতুন একটি ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে এটি যেনে দেশে না ছড়ায়। এটি যদি ছড়ায় তাহলে আমাদের ঝুঁকি রয়েছে।

একইসঙ্গে ডেঙ্গু মোকাবিলায় আমরা এ বছর অনেক কাজ করেছি। কিন্তু তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। এবার রেকর্ড সংখ্যক ২৮১ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আক্রান্তের সংখ্যাও অনেক। অন্যবার রাজধানী ঢাকায় অনেকাংশে সীমাবদ্ধ থাকলেও এবার তা দেশের অন্যান্য প্রান্তেও ছড়িয়েছে। বর্ষাকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটলেও এবার শীতকালে সংক্রমণ ঘটেছে। আগামী বছর এমনটি যেন না হয় আমাদের সেই চেষ্টা করতে হবে।

Special Reportতিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু এডিস মশার সাথে সম্পর্কিত। মশা বাড়লে ডেঙ্গু সংক্রমণও বাড়বে। এটি শহরায়নের একটি নেতিবাচক প্রভাব। শহরাঞ্চল যত বেশি হবে, এডিস মশার প্রকোপও তত বাড়বে। এগুলো সাধারণত সুন্দর সুন্দর দালান-কোঠায় ডিম পাড়ে এবং বেড়ে উঠে। এছাড়া মশা ট্রেন-বাস সবকিছুর মাধ্যমে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এ জন্যই বেড়েছে। এই বছর যেন এমন না হয় এজন্য আমাদের বছরব্যাপী মশানিধন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। কোথাও যেন পানি না জমতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরের বাইরের দায়িত্ব প্রশাসন নেবে কিন্তু নিজের ঘরের দায়িত্ব আমাদেরকেই নিতে হবে। নিজেকে মশা থেকে বাঁচাতেও কাজ করতে হবে। এজন্য সবাইকে সতর্ক হতে হবে। কারণ এর তো কোনো টিকা নেই। একে পুরোপুরি ধ্বংস করা না গেলেও নিয়ন্ত্রণ তো করা যাবে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ২০২২ এ ডেঙ্গুতে দুইটি বড় পরিবর্তন ছিল। এর মধ্যে একটি হলো আমাদের একটা দীর্ঘ ডেঙ্গু মৌসুম গেলো। এর মানে এটা ভবিষ্যতেও হতে পারে। দ্বিতীয়টি হলো, গত বছর দেশজুড়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ছড়িয়েছে। তার মানে এটি এখন শুধুমাত্র ঢাকা কেন্দ্রিক না বরং সারাদেশে ছড়িয়েছে। সামনের দিনগুলোতে ডেঙ্গু আমাদের একটা বড় সমস্যা হতে যাচ্ছে। কারণ এটি আগে রাজধানীর দুই কোটি মানুষের সমস্যা ছিল, এখন তা ১৭ কোটি মানুষের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি দেশজুড়ে বড় পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে এটি আমাদের জন্য বিরাট বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এমএইচ/জেএম/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


News Hub